নেজামুদ্দিন শেখ। নিজস্ব চিত্র
তাঁর সবচেয়ে কাছের মানুষটি আচমকা যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছেন! পঞ্চাশ বছরের দাম্পত্য পেরিয়ে এমন একটি নিকশ কালো আসহায়তায় গহ্বরে পড়তে হবে স্বপ্নেও ভাবেননি বাষট্টি বছরের আনোয়ারা বিবি।
ইদের আগের দিনই তাঁর স্বামী নেজামুদ্দিন শেখ (৬৮) বলেছিলেন, ছুতোরের কাজের কিছু সরঞ্জাম কিনবেন। বহরমপুর যেতে হবে। ফেরার সময় ছানাবড়া কিনে আনবেন। কিন্তু তিনি এখনও ফেরেননি, কোনও খোঁজও নেই।
ডোমকলের হাড়ুরপাড়া গ্রামের ছুতোর মিস্ত্রি নেজামুদ্দিনের বৃদ্ধা স্ত্রী সেই থেকে পাগলের মতো খুঁজে চলেছেন তাঁকে। স্বামীর একটা রঙিন ছবি বড় করে প্রিণ্ট করিয়ে এলাকার পথে পথে ঘুরছেন। কখনও আত্মীয়দের বাড়ি, কখনও থানা বা স্বামীর বন্ধুদের বাড়ি যাচ্ছেন হেঁটে হেঁটে। কারণ, বাসে-টোটোয় চড়ার ক্ষমতা নেই। ছেলেমেয়েরা বেওয়ারিশ লাশের খবর পেলেই ছুটছেন বহরমপুর মর্গে। কিন্তু ১৬ জুন থেকে তাঁর কোনও সন্ধান মেলেনি। পুলিশ জানিয়েছে, নেজামুদ্দিনের পরিবারের পক্ষ থেকে নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়েছে, আশপাশের সব থানায় বার্তা পাঠানো হয়েছে। আনোয়ারা চোখ মুছে বলেন, ‘‘ছুতোরের কাজের জন্য কিছু সরঞ্জাম কিনবেন বলে ৩০০০ টাকা সঙ্গে নিয়ে সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সঙ্গে গিয়েছিলাম। বাসে উঠতে গিয়ে একপাটি চপ্পল পড়ে গিয়েছিল। বাস থেকে নেমে আবার চপ্পল নিয়ে ওই বাসেই উঠেছিলেন। মনটা তখনই ‘কু’ ডেকেছিল। হাত নেড়ে আমাকে বাড়ি চলে যেতে বলেছিল, কিন্তু নিজেই আর বাড়ি ফিরল না।’’ ইদের দিন অন্ধকারে ঢেকে ছিল বাড়ি। পরিবারের কর্তা এই প্রথম উৎসবে বাড়ি ছিলেন না। ছেলে টুটোন আলির কথায়, ‘‘ বৃদ্ধ বাবা একা শহরে গিয়ে আর ফিরলেন না। তাঁর কাছে ফোনও ছিল না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ মঙ্গলবার এক জন বলেছিল ফেসবুকে দেখেছে একটি বেওয়ারিশ লাশ মর্গে আছে। ছুটে গিয়েছিলাম সেখানে। সেখানেও পেলাম না!’’