প্রশ্নপত্র বড্ড কঠিন। তা বাতিল করে সহজ প্রশ্নপত্র তৈরি করে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী নিয়োগের পরীক্ষা নিতে হবে। খোদ মন্ত্রীর এই দাবি মেনে নেয়নি প্রশাসন। ফলে বাতিলই হয়ে যায় নিয়োগের পরীক্ষা। অবশেষে রাজ্যের চাপে প্রায় চার বছর পরে নতুন প্রশ্নপত্র তৈরি করে ফের পরীক্ষা নিতে চলেছে নদিয়া জেলা প্রশাসন।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালে যে ন’টি ব্লকে পরীক্ষা বাতিল হয়েছিল তার মধ্যে চাকদহ ও হরিণঘাটা ব্লকে লিখিত পরীক্ষা হবে ২৪ ডিসেম্বর। আর কৃষ্ণগঞ্জ বাদে কৃষ্ণনগর সদর মহকুমার বাকি সাতটিটি ব্লকে লিখিত পরীক্ষা হবে ১৪ জানুয়ারি। ২০১৪ সালে যাঁরা আবেদন করেছিলেন, তাঁদেরই পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে।
সদর মহকুমার ৯টি ব্লকের মধ্যে সেই সময় নাকাশিপাড়া ব্লকে কোনও পরীক্ষা ছিল না। এ বার নতুন আবেদনপত্র জমা নিয়ে পরীক্ষা হবে ওই ব্লকে। আর কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকে পরীক্ষা হলেও প্রশাসন ও মন্ত্রীর টানাপড়েনে ফল প্রকাশ তো দূরের কথা, খাতাই দেখা হয়নি। সে খাতা রয়েছে মহকুমাশাসকের জিম্মায়।
ওই ব্লকে আর পরীক্ষা না নিয়ে ২০১৪ সালের পরীক্ষার ভিত্তিতেই নিয়োগ করা হবে। বাকি ১০টি ব্লকে প্রশ্নপত্র তৈরি করে পরীক্ষা নেওয়া হবে। এতদিন কেন পরীক্ষা নেওয়া গেল না? জেলা প্রশাসনের একাংশের দাবি, কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকে লিখিত পরীক্ষা হওয়ার পরে প্রশ্নপত্র কঠিন হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। প্রশ্নপত্রের মান নিয়ে ডিস্ট্রিক্ট সিলেকশন কমিটির চেয়ারম্যান তথা মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস ও তৎকালীন মহকুমাশাসক মৈত্রেয়ী গঙ্গোপাধ্যায়ের মধ্যে টানাপড়েনে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। মহকুমাশাসক প্রশ্নপত্রের মানের সঙ্গে কোনও রকম সমঝোতায় যেতে চাননি।
প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘মৈত্রেয়ীদেবী থাকাকালীন আর পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। ইউনিস রিসিন ইসমাইল মহকুমা শাসক হয়ে আসার পরে নতুন প্রশ্নপত্র তৈরি করে নিয়োগের পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।’’ কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের দাবি, “সে বার প্রশ্নপত্র খুবই কঠিন হয়েছিল। মাধ্যমিক পাশ মেয়েদের পক্ষে ওই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া অসম্ভব ছিল।” কিন্তু এত দিন কেন পরীক্ষা নেওয়া হল না? মন্ত্রীর দাবি, “কোথাও কোথাও বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা চলার কারণেই এত দিন পরীক্ষা নেওয়া যায়নি।”
দশটি ব্লকে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের শূন্যপদের সংখ্যা প্রায় ২৫০টি। আর আবেদনপত্র জমা পড়েছিল প্রায় আট হাজারের মত। তবে চাকদহ ও হরিণঘাটা ব্লকে সহায়িকাদের ৩৭৫টি পদের জন্যও একই দিনে পরীক্ষা নেওয়া হবে। সেক্ষেত্রেও ২০১৪ সালে প্রায় সাড়ে চারহাজার আবেদনপত্র জমা পড়েছিল বলে প্রশাসন সূত্রে জানান হয়েছে।
নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, “পদ ফাঁকা খাতায় অনেক কেন্দ্রেই ঠিক মতো পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সেই কারণে তিন মাসের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে চাইছি।”