Beldanga

সামনে ছাই, আড়ালে কি অমূল্য রতন

Advertisement

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

বেলডাঙা শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৮ ০৩:২৭
Share:

সেই কারখানা। নিজস্ব চিত্র

চার বছর আগে, বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সূতোয় জড়িয়ে গিয়েছিল মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা। তার জের থিতিয়ে আসার আগেই বিস্ফোরক এক মাদক-কান্ডে ফের উঠে এল সেই বেলডাঙার নাম। যার মধ্যে সরাসরি চিনা-সংযোগও খুঁজে পাচ্ছে পুলিশ।

Advertisement

দিন কয়েক আগে, কলকাতা স্টেশনে প্রায় দু’শো কেজি মাদক নিয়ে নামতেই রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশের ফাঁদে ধরা পড়ে গিয়েছিল জনা কয়েক চিনা নাগরিক। ভাষা সমস্যায় জেরবার সিআইডির তদন্তকারীরা অবশ্য তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেও কুয়াশা তেমন কাটাতে পারেনি। আচমকা সেই জট খুলে দিয়েছিল, তাদের সঙ্গে থাকা বেলডাঙা স্টেশন থেকে কাটা ট্রেনের টিকিট।

সেই সূত্র ধরেই শুক্রবার সিআইডি’র একটি দল বেলডাঙা এবং নওদা ঘুরে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সিআইডি’র এক কর্তা জানান, বছর কয়েক আগে, নওদা-হরিহরপাড়ার রাস্তায় মধুপুর বলে প্রায় নির্জন এক মাঠে রাতারাতি এক কারখানা খুলেছিল বেশ কয়েক জন চিনা নাগরিক। স্থানীয় পঞ্চায়েতের কাছে তাদের সাফাই ছিল, পাটকাটি পুড়িয়ে ছাই বিক্রির কারবার করছে তারা।

Advertisement

বছর কয়েক আগে সেই কারখানা নিয়ে স্থানীয় পুলিশ এবং প্রশাসন প্রাথমিক ভাবে মাথা গলিয়েও ‘তেমন কিছু পাওয়া যায়নি’ বলে হাত গুটিয়ে নিয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, ‘‘রাতের দিকে ব্যস্ত হয়ে পড়ত কারখানার আশপাশ। প্রায়ই আসত ট্রাক, আর দামী গাড়ি।’’

ওই কারখানায় পাটকাটির ছাইয়ের আড়লেও কোনও ‘রতনের কারবার’ চলত কিনা তাও এখন খতিয়ে দেখছে সিআইডি। শুধু মধুপুরের ওই কারখানা নয়, সিআইডি’র নজরে এখন বেলডাঙায় বসবাসকারী ৩২ জন চিনা নাগরিকও। বছর কয়েক ধরেই তাঁরা বেলডাঙার বাসিন্দা। মুর্শিদাবাদের ওই প্রান্তিক গঞ্জে চিনা নাগরিকদের ঠাঁই নেওয়ার কারণ? খোঁজ নিতে গেলে তাঁদের দাবি ছিল, মোবাইল এবং চুলের ব্যবসা করতে বেলডাঙাকে বেছে নিয়েছেন তাঁরা।

এখন প্রশ্ন, বেলডাঙার মতো প্রায় নিঝুম এক জায়গায় এত জন চিনা নাগরিকের হঠাৎ চুলের কারবার ফেঁদে বসতে হল কেন? তা নিয়ে স্থানীয় পুলিশের কোনও মাথা ব্যথাই বা নেই কেন? এ সব প্রশ্নের কোনও স্পষ্ট জবাব অবশ্য মেলেনি। জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, ‘‘নওদায় শুধু চিনা নয়, মায়ানমার, নেপালের নাগরিকরাও থাকেন। তাঁদের কাছে বৈধ ভিসাও রয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখেছি মূলত চুলের ব্যবসা করেন তাঁরা। নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনও সমস্যা তাঁদের নিয়ে অন্তত নেই।’’

নওদা ব্লক তৃণমূলের সভাপতি মোশারফ হোসেন বলছেন, ‘‘আসলে কি জানেন তো, প্রাথমিক ভাবে আমরা ভেবেছিলাম, নওদা এবং মধুপুরের কারখানায় বিদেশি লগ্নি আসছে। তাই ও নিয়ে আর মাথা ঘামাইনি, পাছে তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।’’

তবে, স্থানীয় বাসিন্দা ইশফাক হোসেন বলছেন, ‘‘সন্দেহ প্রথম থেকেই ছিল, কিন্তু ঘাঁটাতে সাহস পাইনি। শাসক দলের নেতাদের নিষেধ ছিল। তাই আর কারখানার অন্দরে উঁকি দিইনি।’’ তবে সে সুযোগও ছিল কম, কারণ, কারখানার বাইরে বন্দুকধারী নিরাপত্তারক্ষী থাকত সব সময়। সিআইডি সূত্র অবশ্য জানাচ্ছে, ওই কারখানায় ঢুকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বেশ কিছু ল্যাপটপ এবং অন্য নথিও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন