দৌড় নিয়ে স্বপ্ন চুরমার, রাজেশ আজ চপ ভাজেন

সীমান্তের গ্রামে দরমার বেড়া, টিনের চালওয়ালা একচিলতে ঘর। সেখানেই গা ঘেঁষাঘেঁষি করে বড় হওয়া। স্থানীয় ক্রীড়া শিক্ষক শ্যামল মণ্ডলের তত্ত্বাবধানে দৌড়ের অনুশীলন শুরু করেন রাজেশ।

Advertisement

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

জলঙ্গি শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৯ ০১:৪১
Share:

দোকানে রাজেশ। (ইনসেটে) দৌড়ে জেতা পদক নিয়ে। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। হাতে ধরা ঝাঁঝরি দিয়ে ফুটন্ত কড়াইয়ের তেলেভাজাগুলো উল্টেপাল্টে দিলেন তিনি। দৃষ্টি নিবদ্ধ কড়াইয়ে। এক সময় ওই দু’টি চোখ অনেক স্বপ্ন দেখত। সাগরপাড়ার সীমান্তবর্তী গ্রামের তরুণ রাজেশ হালদার স্বপ্ন দেখতেন খেলাধুলোর আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্বের। অলিম্পিক্স পদকের। স্বপ্ন অবশ্য স্বপ্নই থেকে গিয়েছে। দারিদ্রের সঙ্গে প্রতিদিন লড়াইয়ের পর এখন স্বপ্নটা অনেকটা সঙ্কুচিতও হয়ে গিয়েছে তাঁর। রাজেশের কথায়, ‘‘এখন একটা সরকারি চাকরি পেলে সংসারটা বাঁচত।’’

Advertisement

গ্রামের লোকজন বলাবলি করতেন, ছেলে নাকি দারুণ জোরে দৌড়য়। সে কথা শুনে ছেলেকে খেলাধুলোয় উৎসাহ দিতেন রাজেশের বাবা সন্তোষ হালদার। তিনিও স্বপ্ন দেখতেন, ছেলে একদিন নামী অ্যাথলিট হবে। টানাটানির সংসার হলেও ছেলেকে অভাব বুঝতে দেননি তিনি। লড়াই চালাতেন রাজেশও। জাতীয় পর্যায়ে যোগ দিতে যাবেন। অথচ দৌড়নোর জুতো নেই। বহুকষ্টে শেষ পর্যন্ত তা জোগাড় করেন। আন্ত-স্কুল জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় রাজেশ কেরলের এর্নাকুলামে গিয়েছিলেন একবার। সেখানে ১০০ মিটার ২০০ মিটার এবং ৪০০ মিটার রিলেতে ভাল ফল করেন তিনি। এরপর বেশ কিছু জাতীয় পর্যায়ের মিটে অংশ নেন তিনি। চণ্ডীগড়ে আন্তঃস্কুল পর্যায়ের মিটে রিলে রেসে সোনার পদক জিতেছিলেন এই তরুণ।

সীমান্তের গ্রামে দরমার বেড়া, টিনের চালওয়ালা একচিলতে ঘর। সেখানেই গা ঘেঁষাঘেঁষি করে বড় হওয়া। স্থানীয় ক্রীড়া শিক্ষক শ্যামল মণ্ডলের তত্ত্বাবধানে দৌড়ের অনুশীলন শুরু করেন রাজেশ। সাগরপাড়া স্কুলের সেই ক্রীড়া শিক্ষক শ্যামলবাবুর কথায়, ‘‘স্বপ্ন শুধু রাজেশই দেখত না। ওকে নিয়ে আমাদেরও অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে হতাশ হচ্ছি। খেলাধুলোয় এত ভাল করল ছেলেটা। অথচ স্পোর্টস কোটায় একটা চাকরি পেল না। চাকরি পাওয়ার আশা না থাকলে গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েরা কোন ভরসায় খেলা নিয়ে পড়ে থাকবে বলতে পারেন!’’

Advertisement

রাজেশও পড়ে থাকেননি। সংসার বাঁচাতে এখন তাই বাবার তেলেভাজার দোকানের হাল ধরেছেন তিনি। সকাল-বিকেল তেলেভাজা ভাজেন। রাজেশের আক্ষেপ, ‘‘দৌড়ে পাওয়া পদক আর শংসাপত্রগুলো ক্রমেই মূল্যহীন হয়ে পড়ছে আমার কাছে। বিএ পাশ করার পর বিপিএড-ও করেছিলাম। জাতীয় পর্যায়ে পদক, শংসাপত্রও কম পাইনি। কিন্তু কই চাকরি তো হল না!’’ রাজেশের দাবি, বেশ কয়েক বছর আগে খেলাধুলো ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে তাতেই অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে পড়েছেন তিনি।’’ কিন্তু খেলাধুলোয় যখন যুক্ত ছিলেন, তখন কেন চাকরির আবেদন করেননি? রাজেশ বলছেন, ‘‘সবকিছু সেভাবে বুঝতাম না। প্রত্যন্ত এলাকায় সব খবরও পেতাম না’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন