পদ্মাপাড়কে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্রের দাবি

পদ্মাপাড়ের ভয়াবহ ভাঙন এখনও অনেকের স্মৃতিতে টাটকা। সেই ভাঙনে জৌলুস অনেকটাই হারিয়েছে জলঙ্গি। তবে সেই ভাঙনে সবটা শেষ হয়ে যায়নি। এখনও পদ্মাপাড়ের সৌন্দর্য মানুষকে টানে। সেই সৌন্দর্যের টানে এখনও দূরদুরান্ত থেকে শয়ে শয়ে মানুষ ভিড় জমান জলঙ্গিতে।

Advertisement

সুজাউদ্দিন

জলঙ্গি শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৫ ০১:২১
Share:

এই গেস্ট হাউসকে ঘিরেই পর্যটনের স্বপ্ন বুনছেন স্থানীয়েরা। ছবি: কল্লোল প্রামাণিক।

পদ্মাপাড়ের ভয়াবহ ভাঙন এখনও অনেকের স্মৃতিতে টাটকা। সেই ভাঙনে জৌলুস অনেকটাই হারিয়েছে জলঙ্গি। তবে সেই ভাঙনে সবটা শেষ হয়ে যায়নি। এখনও পদ্মাপাড়ের সৌন্দর্য মানুষকে টানে। সেই সৌন্দর্যের টানে এখনও দূরদুরান্ত থেকে শয়ে শয়ে মানুষ ভিড় জমান জলঙ্গিতে। বিশেষ দিনগুলিতে যেমন, পুজো, ঈদ, মহরম বা স্বাধীনতা দিবসে ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। সেইটুকুকে আঁকড়ে নিজের পুরনো দিনগুলোকে ফিরে পেতে চাইছেন জলঙ্গির মানুষ।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কাছেপিঠে এমন মনোরম জায়গা তেমন নেই। বর্ষার পরে জলঙ্গির শোভা দেখার মতো। বর্ষার জলে উচ্ছৃঙ্খল পদ্মা এই সময় অনেকটা শান্ত থাকে। পাড়ের সাদা কাশফুল, নদীর ওপারে বাংলাদেশিদের ছোট ছোট কুটির, উজান টেনে বয়ে চলা নৌকা, জোৎস্না ধোওয়া পদ্মা—সব মিলিয়ে ‘মিনি দিঘা’ জলঙ্গি যেন নতুন সাজে সেজে ওঠে। তাই স্থানীয় বাসিন্দাদের আশা, এই জলঙ্গিকে যদি সাজিয়ে তোলা যায়, পর্যটনের উপোযোগী করে তোলা যায় তা হলে জলঙ্গির ‘পঙ্গু অর্থনীতি’ খানিকটা হলেও ঘুরে দাঁড়াবে।

জলঙ্গির বাসিন্দা ব্যবসায়ী নির্মল সাহার কথায়, ‘‘পদ্মা আমাদের সব কেড়ে নিলেও ওই একটুকরো জায়গা দিয়েছে। যেটাকে ঘিরে আবার মাথা তুলতে পারে জলঙ্গি। এই এলাকায় পযর্টনের উন্নয়ন ঘটালে মানুষে ভিড় উপচে পড়বে। ফলে জলঙ্গিতে মানুষের আনাগোনাও বাড়বে। কিছুটা হলেও প্রাণ ফিরে পেতে পারে জলঙ্গি।’’

Advertisement

করিমপুরের বাসিন্দা অমরেশ কর্মকারের কথায়, ‘‘হাতের কাছে ঘুরতে যাওয়ার জায়গা বলতে জলঙ্গির পদ্মাপাড়। মন খারাপ হলে বা কাজের চাপে হাঁপিয়ে উঠলে অনেকেই ওই জায়গাটুকুকে বেছে নেই।’’ ‘‘তাই ওই এলাকায় যদি একটা পার্ক, ছোটদের জন্য আরও একটু বিনোদনমূলক ব্যবস্থা। করা যায়, একফালি ঝাউবন করা যায় তাহলে খুব ভাল হয়।’’

শুধু পড়শি জেলা থেকে নয়, কলকাতা থেকেও অনেকে ছুটে যান ওখানে। অনেকে পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে দু’এক দিন কাটিয়ে যান। কলকাতার বাসিন্দা সোমনাথ ওঝার কথায়, ‘‘কাশফুলে ঢাকা পদ্মার পাড়ে দাঁড়ালে মনে হবে গোটা চর জুড়ে যেন সাদা চাদর বিছানো রয়েছে। সেই সঙ্গে উপরি পাওনা অতিথিনিবাসের ছাদ থেকে খালি চোখে বাংলাদেশের গ্রাম দেখা।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘জোৎস্না রাতে ভরা পদ্মার রূপ সত্যিই অনন্য।’’

প্রশাসনের তরফেও পদ্মাপাড়কে সাজিয়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। পদ্মাপাড়ে তৈরি হয় অতিথিনিবাস। বসার জায়গা ছাড়াও একটি পার্ক গড়ার প্রস্তুতিও নেওয়া হয়। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি। এখন অবৈধ দখলদারিতে হারিয়ে যাচ্ছে পদ্মাপাড়ের সেই সৌন্দর্য। যেখানে সেখানে গড়ে উঠছে বহুতল। সব দেখেও চুপ প্রশাসন।

বাম আমলে পযর্টন কেন্দ্র হিসেবে ওই এলাকার কথা ভাবা হলেও সেই ভাবনা আর বাস্তবায়িত হয়নি। প্রাক্তন বিধায়ক সিপিএমের ইউনুস সরকার জানান, অনেক স্বপ্ন ছিল পদ্মাপাড়ের ওই এলাকাকে নিয়ে। তৎকালীন মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তীকে পুরো এলাকাটা ঘুরে দেখিয়ে ছিলাম। তাঁরও ইচ্ছে ছিল পদ্মার চরে একটা পিকনিক স্পট ও পার্ক তৈরি হোক। তিনি বলেন, ‘‘কিন্তু সরকার বদলের পর ভাবনাটাই মরে গিয়েছে। আমরাও আর তেমন ভাবে আবেদন করিনি। সরকারও এগিয়ে আসেনি।’’

স্থানীয় মানুষের দাবি, প্রকৃতি এখানে নিজেকে এতটাই উজাড় করেছে যে, একটু যত্ন নিলে অনেক সম্ভাবনা ছিল জলঙ্গির। তা ছাড়াও বিএসএফের সঙ্গে কথা বলে পদ্মায় বোটিংএর ব্যাবস্থাও করা যেত এখানে। কিন্তু এখন এই এলাকার দিকে ব্লক থেকে পঞ্চায়েত কেউ ফিরেও তাকায় না। ফলে সব হারানো এই এলাকার শেষ সম্ভাবনাটুকুও মরতে বসেছে অনাদরে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন