রক্তের সংকট কাটিয়ে পথ দেখাল জঙ্গিপুর

পেতে গেলে দিতে হবে। রোগীদের রক্ত জোগানোর এমনই নীতি চালু করল জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতাল। তাতে ফলও মিলেছে ভাল। আগে যেখানে রক্তসংকটই ছিল নিয়ম, এখন সেখানে প্রায় সব সময়ে ১০০ ব্যাগ রক্ত মজুত থাকছে হাসপাতালে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, রক্তের অভাব মেটায় রোগীকে ‘রেফার’ করে দেওয়ার হার কমেছে। কমানো গিয়েছে রক্তের দালালদের দাপটও।

Advertisement

বিমান হাজরা

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:৩১
Share:

পেতে গেলে দিতে হবে। রোগীদের রক্ত জোগানোর এমনই নীতি চালু করল জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতাল। তাতে ফলও মিলেছে ভাল। আগে যেখানে রক্তসংকটই ছিল নিয়ম, এখন সেখানে প্রায় সব সময়ে ১০০ ব্যাগ রক্ত মজুত থাকছে হাসপাতালে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, রক্তের অভাব মেটায় রোগীকে ‘রেফার’ করে দেওয়ার হার কমেছে। কমানো গিয়েছে রক্তের দালালদের দাপটও।

Advertisement

জঙ্গিপুর হাসপাতালের সুপার শাশ্বত মন্ডল জানান, মাসে গড়ে ৪০০ ব্যাগ করে রক্ত লাগে হাসপাতালে। তুলনায় জোগান কম। ‘‘গত জুন মাসে রোজার সময়ে রক্তের অভাব তীব্র হয়ে ওঠে। তখনই রোগীকল্যাণ সমিতির অনুমতি নিয়ে ‘গিভ অ্যান্ড টেক পলিসি’ চালু করি,’’ বলেন সুপার।

কী সেই পদ্ধতি?

Advertisement

সুপার জানান, যে রোগীর যে গ্রুপের রক্ত প্রয়োজন, যে পরিমাণে প্রয়োজন, তাকে তা দেওয়া হচ্ছে হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে। বিনিময়ে তাঁর পরিবারকে বলা হচ্ছে যে কোনও গ্রুপের রক্তদাতা আনতে, যিনি বা যাঁরা সেই পরিমাণ রক্তদান করবেন হাসপাতালে। আগে থাকতে রক্ত নেওয়ার কিট ও ব্যাগ এনে হাসপাতালে মজুত রাখা হয়। হাসপাতালে তিনজন টেকনিশিয়ান রয়েছেন। তাঁরাই রক্তসংগ্রহ করেন। ফলে যত রক্ত দেওয়া হচ্ছে রোগীদের, প্রায় ততই ফের সংগ্রহ করছে হাসপাতালে।

কিন্তু যদি কোনও রোগীর পরিবার রক্তদাতা (‘এক্সচেঞ্জ ডোনার’) জোটাতে না পারেন? সুপার জানালেন, সে ক্ষেত্রেও রোগীকে রক্ত দিয়ে যথাবিধি চিকিৎসা করায় ত্রুটি হবে না। তাঁর দাবি, রোগীর আত্মীয়দের বুঝিয়ে, অনুরোধ করে তাঁরা এই নীতি কার্যকর করেছেন, জোর করে নয়। লাসেমিয়া রোগীদের ক্ষেত্রে প্রথম কয়েক মাস ছাড় দেওয়া হলেও, তারপর পরিজনদের কাছ থেকে অনুরোধ করে রক্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। সুপারের দাবি, বিনিময় নীতির ফলে রক্তের আকাল কেটেছে।

হাসপাতাল সূত্রে খবর, রক্তের অভাবে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে যেখানে প্রতি মাসে অন্তত ৩০ জন রোগী রেফার করা হত, সেখানে গত তিন মাসে মাত্র ছ’জন রোগীকে রেফার করা হয়েছে। তা করতে হয়েছে রক্তের গ্রুপ না মেলার জন্য।

রক্তের জোগানে টানের জন্য যে জেলায় নাকাল হতে হচ্ছে রোগী এবং চিকিৎসক উভয় পক্ষকেই, তা স্বীকার করছেন স্বাস্থ্যকর্তারাও। জেলা ব্লাড ব্যাঙ্কের প্রধান প্রভাস মৃধা বলেন, ‘‘কেবল বহরমপুরে মাসে আড়াই হাজার ব্যাগ রক্ত দরকার। রক্তদান শিবির থেকে মেলে মাসে ১৭০০ ব্যাগ মতো।’’ তাহলে কি জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালের উদ্যোগকে সমর্থন করেন তিনি? প্রভাসবাবুর বক্তব্য,
‘‘স্থানীয় ভাবে জঙ্গিপুরের এই প্রক্রিয়া খারাপ নয়। কিন্তু রোগীর পরিজনদের রক্ত দিতে বাধ্য করতে গেলে নানা সমস্যা তৈরি হবে।’’

মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের সুপার তথা সহ-অধ্যক্ষ মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়ও একই সুরে জানান, জঙ্গিপুর যেটা করছে সেটা ভাল উদ্যোগ ঠিকই। কিন্তু এটা সরকারি নিয়ম নয়। তাঁর কথায়, ‘‘স্বেচ্ছায় কেউ রক্ত দিয়ে রক্ত দিলে আমরা তা মজুত রাখি। তবে রক্ত দেওয়ার বিনিময়ে রক্ত নেওয়াকে নিয়ম করার ক্ষেত্রে অসুবিধা রয়েছে।’’

প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা অবশ্য জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালের ‘বিনিময়’ পদ্ধতিকেই সমর্থন করছেন। জঙ্গিপুরের পুরপ্রধান, সিপিএমের মোজাহা্রুল ইসলাম বলছেন, ‘‘রক্ত তো আর বাজারে কিনতে পাওয়া যাবে না। মানুষের স্বার্থেই রক্ত দেওয়ার ব্যাপারে কিছুটা বাধ্যবাধকতা থাকা দরকার। তাতে সকলেই উপকৃত হবেন। সরকারি স্তরেও এ নিয়ে ভাবনা দরকার।’’

জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘‘জঙ্গিপুর যা পেরেছে, জেলার অন্যান্য হাসপাতালেও তা চালু করা যেতে পারে। এর ফলে মাসে যদি ৫০০ ব্যাগ রক্তও আসে, ক্ষতি কী?’’ এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে তৃণমূলও। তৃণমূলের স্বাস্থ্য পরিষেবা বিষয়ক জঙ্গিপুর মহকুমা কমিটির সভাপতি শেখ ফুরকান মনে করেন জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালের উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন