আশায় বাঁচে চাষা!
গাঁ-গঞ্জে কথাটা বেশ প্রচলিত। কিন্তু বছরের পর বছর ফসলের দাম না পেয়ে শুধু আশায় ভর করে চাষি কত দিন বাঁচবে?
নদিয়া জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ কমলেশ বিশ্বাস যেমন বলছেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীনতার কারণে আজ পাট চাষিদের এমন হাল। জেসিআই পাট কিনতে চাইছে না। ন্যায্য দাম না পাওয়ায় চাষিরা পাট চাষ থেকে ক্রমশ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। আর সেই সংখ্যাটা কিন্তু ক্রমশ বাড়ছে। সরকার সতর্ক না হলে এর ফল মারাত্মক হবে।’’
নদিয়ার কাছারিপাড়ার পাটচাষি শঙ্কর মণ্ডল জানাচ্ছেন, সরকার মুখে ফড়েরাজের বিরুদ্ধে অনেক কথা বলে। কিন্তু বাস্তবে সরকারের গাফিলতির কারণেই ফড়েদের রমরমা আরও বাড়ছে। জেসিআই পাট কিনছে না। কিনলেও তারা যে মানের পাট চাইছে বেশিরভাগ চাষির সেই মানের পাট নেই।
আবার জেসিআইকে পাট বিক্রি করতে হলে চাষিকেই পাট নিয়ে যেতে হয় জেসিআইয়ের পাট ক্রয়কেন্দ্রে। ফলে সমস্যায় পড়ছেন প্রত্যন্ত এলাকার চাষিরা। গৌড়নগরের প্রহ্লাদ ঘোষ এ বার ১৩ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। তিনি জানাচ্ছেন, জেসিআইয়ে পাট বিক্রি করতে হলে তাঁকে বেথুয়াডহরি বা শান্তিপুর যেতে হবে। বিস্তর টাকা গাড়ি ভাড়া লাগবে। তার পরেও সেই পাট জেসিআই কিনবে কি না তার নিশ্চয়তা নেই। গোবিন্দপুরের ভক্ত ঘোষও বলছেন, ‘‘স্থানীয় ভীমপুর পাট ক্রয়কেন্দ্র সেন্টার বন্ধ। ফলে পাট বিক্রি করতে গেলে ১৫ কিলোমিটার দূরে মাজদিয়ায় যেতে হবে। সেখানে গাড়ি ভাড়া করে পাট নিয়ে যেতে গেলে যা খরচ আর পরিশ্রম হবে তাতে ঢাকের দায়ে মনসা বিক্রি হয়ে যাবে।”
আর এই সুযোগটাকেই কাজে লাগাচ্ছে ফড়েরা। গাঁ-গঞ্জে তাদের মাধ্যমেই চলছে পাট কেনাবেচা। চাষি নিরুপায়। ফড়ে হাসছে, ‘‘এই দামটাই বা কে দিচ্ছে, বলুন তো?’’ কোনও চাষি সুদে টাকা ধার নিয়ে পাট চাষ করেছেন, কারও বিস্তর টাকা বকেয়া রয়েছে সারের দোকানে। পাওনাদারদের চাপে তাদের পাট মজুত রাখার সামর্থ্য নেই। সব জেনেও তাদের ভরসা সেই ফড়ে!
নওদায় পাট ও পেঁয়াজ অন্যতম অর্থকরী ফসল। কিন্তু পাটের দাম না পেয়ে অভাবি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। সর্বাঙ্গপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বিকাশ মণ্ডল জানাচ্ছেন, জলের অভাবে পাটের রং কালো হয়েছে। সেই পাট জেসিআই নিচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে চাষিরা ফড়েদের কাছে সেই পাট ১৯০০ টাকাতে বিক্রি করছেন।
ঝাউবোনা, টিঁয়াকাটা, পাটিকাবাড়ির চাষিরা জানাচ্ছেন, সামনে পেঁয়াজের মরসুম। বীজ কিনতে অনেক টাকা লাগবে। ফলে লোকসান জেনেও তাঁরা বাধ্য হয়েই ফড়েদের কাছে যে দাম পাচ্ছেন সেই দামেই পাট বিক্রি করে দিচ্ছেন। এ দিকে জেসিআই কর্তাদের দাবি, ভাল মানের (টিডিএন ৩) পাটের সরকার নির্ধারিত দর কুইন্টাল প্রতি ৩৯০০ টাকা। মাঝারি মানের (টিডিএন ৪-৫) দর ৩৫০০ টাকা থেকে ৩১০০ টাকা। কিন্তু চাষিরা নিয়ে আসছেন আরও নিম্ন মানের পাট। সেই কারণেই তাঁরা পাট কিনতে পারছেন না। তা হলে চাষি কী করবেন?
(চলবে)