বৈশাখী ঝড়ের অপেক্ষায় পাট চাষিরা

ভৈরব হরষে ছুটে আসা একটা কালবৈশাখী। সঙ্গে আকাশভাঙা বৃষ্টি। ঠিক এমনই একটা মুহূর্তের অপেক্ষায় দিন গুনছেন দক্ষিণবঙ্গের পাটচাষিরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৭ ০১:১১
Share:

ভৈরব হরষে ছুটে আসা একটা কালবৈশাখী। সঙ্গে আকাশভাঙা বৃষ্টি। ঠিক এমনই একটা মুহূর্তের অপেক্ষায় দিন গুনছেন দক্ষিণবঙ্গের পাটচাষিরা।

Advertisement

কেননা দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে পাট চাষে সাধারণ ভাবে ব্যবহার করা হয় ‘নবীন’ প্রজাতির বীজ। জমিতে সেই পাট বীজ ছড়ানোর জন্য চৈত্রের মাঝামাঝি থেকে মাঝ বৈশাখ হল আদর্শ সময়। দিনে ঝাঁজালো রোদ্দুর। বিকেলের দিকে মাঝে মাঝে বৃষ্টি। এমন আবহাওয়াই পাট বোনার জন্য উপযুক্ত।

কিন্তু এ বারে চৈত্রের মাঝামাঝি এসেও কালবৈশাখী ও বৃষ্টির দেখা মেলেনি। ফলে বেলা বয়ে যাচ্ছে। এ দিকে এখনও মাঠে পাটের বীজ ছড়ানো শুরুই করতে পারছেন না কৃষকেরা। ফলে পাটের মরসুম পিছিয়ে যাওয়ায় আশঙ্কা করছেন চাষিরা।

Advertisement

এ বিষয়ে নদিয়ার প্রবীণ কৃষক রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস জানাচ্ছেন, পাট বোনার জন্য আরও চড়া রোদ দরকার সেই সঙ্গে বৃষ্টি। সাধারণ ভাবে চৈত্রের মাঝামাঝি সময়ে কয়েক দফা কালবৈশাখী এবং বৃষ্টি হয়ে যায়। কিন্তু এ বার এখনও সকালের দিকে ঠাণ্ডা থাকছে। বৃষ্টির দেখা নেই। উল্টে মেঘলা আকাশের জন্য রোদের তাপও নেই। এই অবস্থা পাটের বীজ বোনার জন্য আদৌ ঠিক নয়।

রবীন্দ্রনাথ বলছেন, “ এমন অবস্থা চলতে থাকলে আগামী পাটের মরসুম নিয়ে চিন্তার আছে। যাঁরা ইতিমধ্যে জলদি জাতের পাট বুনেছেন তাঁদের গাছে ফুল এসে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। আর পাট গাছে ফুল ধরলে, সেই পাট নিম্নমানের হয়। ফলে এই সময় বৃষ্টি না হলে বিপদে পড়তে হবে।”

কৃষকদের মতোই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞ এবং কৃষি আধিকারিকেরাও। বর্ধমানের সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ জানান, দেরিতে পাট বোনার অনেকগুলো সমস্যা আছে। প্রথমত, যাঁরা পাট কেটে ওই জমিতে আমন চাষ করবেন তাঁদের বিলম্ব হবে। দ্বিতীয়ত, বহু জায়গায় পাট চাষ করা হয় নিচু জমিতে। দেরিতে পাট হলে ওই জমিতে বর্ষার জল জমে ফলন পচে যাবে। তৃতীয়ত, পাট চাষ পিছনো মানে চাষআবাদের গোটা প্রক্রিয়াটাই পিছিয়ে যাবে। সেখানে শেষ পর্যন্ত ক্ষতি করবে কৃষককেই।

এ বিষয়ে কৃষি বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, গত চার মাসে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টি হয়নি। পাশাপাশি শীতের লম্বা ইনিংস। সব মিলিয়ে মাটিতে সামান্যতম আদ্রতাও নেই। এই অবস্থায় সেচ নির্ভর জমিতে পাটের বীজ ছড়াতে গেলে মাটি ভিজে থাকা খুব জরুরি। কিন্তু কালবৈশাখীর মরসুমে পাট বোনার সময় চাষিরা বৃষ্টির জল ছাড়া অন্য কিছু ব্যবহার করেন না। সেই বৃষ্টি এ বার এখনও না হওয়াতেই সমস্যা।

কল্যাণী বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন মুখ্য বিজ্ঞানী আফতাব জামান জানিয়েছেন, মার্চ মাসে সাধারণত একাধিক কালবৈশাখী হওয়ার কথা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সে ভাবে কালবৈশাখীর দেখাই নেই। ফলে ভারী সমস্যা তো হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন