মুম্বইয়ের হোম থেকে ফিরেও ব্রাত্য কিশোরী

মুম্বইয়ে মাসির বাড়ি গিয়ে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছিল মেয়েটা। যদিও পাচার তাকে করতে পারেনি। তার আগেই পুলিশ এসে যায়। পাচারকারীদের পাকড়াও করে মেয়েটিকে উদ্ধার করে।

Advertisement

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

হরিহরপাড়া শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৭ ০২:০৮
Share:

মুম্বইয়ে মাসির বাড়ি গিয়ে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছিল মেয়েটা। যদিও পাচার তাকে করতে পারেনি। তার আগেই পুলিশ এসে যায়। পাচারকারীদের পাকড়াও করে মেয়েটিকে উদ্ধার করে।

Advertisement

সেই মেয়েকেই এখন ‘নষ্ট মেয়ে’ বলে দিনরাত গাল পাড়ছে গাঁয়ের কিছু লোকজন। যে কোনও কথায় টেনে আনছে মুম্বই-প্রসঙ্গ। কটূক্তি সহ্য না করতে পেরে আত্মঘাতী হতে গিয়েছিল মেয়েটি। বাড়ির লোকজন বুঝতে পেরে তাকে আটকায়।

ঘটনার সূত্রপাত গত বছর গরমের সময়ে। পরিবার সূত্রে জানা যায়, হরিহরপাড়ার স্বরূপপুর গ্রামের ডাঙাপাড়ার ওই কিশোরীকে মুম্বইয়ে নিজের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন তার মাসি। কলকাতার এক মহিলার বাড়ি আছে সেখানে। এক দিন মাসির সঙ্গে সেখানে যায় মেয়েটি এবং পাচারকারী দলের খপ্পরে পড়ে। কয়েক জন তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও চিৎকার-চেঁচামেচিতে টহলদার পুলিশ চলে আসে। প্রাপ্তবয়স্কদের ধরে লকআপে পাঠানো হয়। কিশোরীকে পাঠানো হয় হোমে।

Advertisement

খবর পেয়ে কিশোরীর মাকে নিয়ে মুম্বই গিয়ে সৎবাবা তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। পরে মেয়েটিকে একটি মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তিও করিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু গ্রামের, এমনকী পরিবারেরই কয়েক জন তার পিছনে লেগেছেন। তাকে গ্রামছাড়া করার চেষ্টায় আছেন তাঁরা। ছুতোনাতায় ঝগড়া বাধাচ্ছেন।

যেমন, মেয়েটির বাড়িতে মেলে রাখা পেঁয়াজের খোসা উড়ে পড়েছিল পাশের বাড়ির আমতেলের বয়ামে। অভিযোগ, পাশের বাড়ির এক বৌ তেড়ে আসে— ‘‘তোর মেয়ে মুম্বইয়ে হারিয়ে গিয়েছিল। তোদের পেঁয়াজের তাই জাত নেই। এই আমতেল আর মুখে তোলা যাবে না। মেয়েকে বিদেয় কর, না হলে তোদেরই গ্রাম থেকে তাড়ানো হবে!’’ বইখাতা হাতে শিক্ষাকেন্দ্রে যেতে গিয়েও কটূক্তির মুখে পড়ছে মেয়েটি। বলা হচ্ছে— দু’মাস মুম্বইয়ের জল তোর পেটে পড়েছে। আবার পড়ে কী করবি! গ্রামে কি আর তোর মন বসবে? নিজে নষ্ট হয়েছিস, গ্রামের মেয়েদেরও নষ্ট করবি। দূর হযে যা এই গ্রাম থেকে!

মেয়েটির সৎবাবা তিন ভাইয়ের মধ্যে মেজো। তিনি দিনমজুরি করে সংসার চালান। তাঁর অভিযোগ, শুধু বাইরে নয়, বাড়িতেও নানা কুকথা শোনানো হচ্ছে। তাঁর মা বলে দিয়েছেন, ‘‘নষ্ট মেয়েকে জায়গা দিলে বাড়ি ছাড়তে হবে, না হলে ওকে তাড়াতে হবে।’’

এই অবস্থাতেই আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল মেয়েটি। কিশোরীটি বলে, ‘‘আমি পড়াশুনো করতে চাই। কিন্তু যে ভাবে গালিগালাজ করা হচ্ছে, আমি ভেঙে পড়ছি। তাই মরতে চেয়েছিলাম।’’ তার মায়ের আক্ষেপ, ‘‘বাড়ি আসা ইস্তক ওকে এত গঞ্জনা দেওয়া হচ্ছে যে ও পড়াশুনো করতে পারছে না।’’ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হয়ে কাজ করা জাকিরুন বিবি বলেন, ‘‘আমি গিয়ে ওকে বুঝিয়ে এসেছি।’’

হরিহরপাড়ার বিডিও পুর্ণেন্দু সান্যাল বলেন, ‘‘আমরা আপাতত ঠিক করেছি, সরকারি হস্টেলে থাকার ব্যবস্থা করব ওর। তাতে পড়াশুনো হবে, বাবা-মায়েরও সমস্যা হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন