উদ্বিগ্ন বেলডাঙার একটি পরিবার। ছবি: সঞ্জীব প্রামাণিক।
গত সোমবার ফোন করেছিলেন স্বামী। কেরলে শ্রমিকের কাজ করতে যাওয়া সরিফ মল্লিকের গলায় তখন উৎকণ্ঠা, ‘‘বৃষ্টি থামার লক্ষণ নেই। বাড়ির একতলায় জল ঢুকতে শুরু করেছে।’’ তারপর চারদিন ফোন বন্ধ। স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে ঘুম উড়ে গিয়েছিল বেলডাঙার দেবকুণ্ড মোড়লপাড়ার মমতা বেগমের। শনিবার স্বামী ফের ফোন করায় স্বস্তি ফেরে। ইদের আগেই বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছেন সরিফ।
মমতার স্বস্তি ফিরলেও ঘুম উড়েছে বেলডাঙা এবং আশপাশের এলাকার বেশ কিছু পরিবারের। ওইসব এলাকার প্রায় একশো জন যুবক কেরলে কাজে গিয়েছেন। তাঁদের অনেকের সঙ্গেই পরিবার যোগাযোগ করতে পারেনি। দু’দিন পর ইদ। বেলডাঙার বিভিন্ন গ্রামে ঢোকার মুখে বাঁশের তোরণ তৈরি। কিন্তু সব কিছুর পরেও কোথায় যেন তাল কেটে গিয়েছে। ঘরের মানুষগুলো এখনও ঘরে ফেরেনি যে। পরিবার সূত্রে খবর, অনেকেরই ফেরার ট্রেনের টিকিট কাটা। কিন্তু বন্যায় ট্রেন লাইনই তো জলের তলায়।
রবিবার দুপুরে মোড়লপাড়ায় গিয়ে জানা গেল, ওই গ্রামে সরিফ ছাড়াও সাজাহান শেখ, হুসেন শেখ, বজরুদ্দিন শেখ, রুমিউদ্দিন, আজিজুল শেখরা কেরলে বন্যায় আটকে পড়েছেন। সরিফের মা মদিনা বিবি বললেন, ‘‘চার মাস আগে ছেলে কেরলে গিয়েছিল। শেষবার ফোন করে বলল, তিনদিন ধরে টিনের চালওয়ালা একটি বাড়ির মাথায় আশ্রয় নিয়েছে। খাবার, জল কিছুই মিলছে না।’’ মমতা বললেন, ‘‘আমাদের পাড়ার অনেকেই ইদের কেনাকাটা সেরে ফেলেছেন। কিন্তু আমাদের বাড়িতে আনন্দ নেই।’’ সাজাহান শেখের এক আত্মীয় বলেন, ‘‘ঘরের ছেলে আগে ঘরে ফিরুক। তারপর ইদের কেনাকাটা করার কথা ভাবব।’’
কান্দি থেকেও রুজির টানে অনেকে কেরলে গিয়েছেন। ইদের আগে তাঁরা ঘরে ফিরতে আসতে পারবেন কি না, তা নিয়ে আশঙ্কায় পরিবার। বড়ঞার লুতফা বিবি চোখের জল মুছে বললেন, “মেহেরুদ্দি ন’ মাস আগে কেরল গিয়েছে। সাত দিন আগে একবার ছেলে ফোন করল। বলল, বন্যায় কাজ বন্ধ। ওর কাছে বেশি টাকা নেই। কী ভাবে আছে, কে জানে!’’ পাশেই সিরাজ দফাদারের পরিবারের দু’জনও কেরলে দিনমজুরির কাজ করতে গিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে পরিবার যোগাযোগ করতে পারছে না।
ঘরের ছেলের জন্য উৎকণ্ঠায় একাকার বেলডাঙা-কান্দি।