অবাধ প্লাস্টিকে মুখ ঢেকেছে কান্দি

পুরসভা চত্বরে সম্প্রতি আনন্দবাজারের পাঠকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন কান্দির উপ-পুরপ্রধান সান্ত্বনা রায়। নাগরিকদের নানা দাবি-দাওয়া, প্রাপ্তি-প্রত্যাশার বিষয় ওঠে আলোচনায়। সঞ্চালনায় ছিলেন কৌশিক সাহা। রইল বাছাই প্রশ্নোত্তর।পুরসভা চত্বরে সম্প্রতি আনন্দবাজারের পাঠকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন কান্দির উপ-পুরপ্রধান সান্ত্বনা রায়। নাগরিকদের নানা দাবি-দাওয়া, প্রাপ্তি-প্রত্যাশার বিষয় ওঠে আলোচনায়। সঞ্চালনায় ছিলেন কৌশিক সাহা। রইল বাছাই প্রশ্নোত্তর।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৬ ০১:৪২
Share:

সরু রাস্তায় সারাক্ষণই যানজট। ডান দিকে, ফুটপাথ দখল করে বসেছে সব্জি দোকান। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

• শহর আলোয় সেজে উঠেছে। পথবাতি থাকার পরেও ত্রিফলা বাতি লাগানো হয়েছে। কিন্তু রামেন্দ্রসুন্দর সুতিকা ভবনের সামনে কোনও আলো নেই। রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী কান্দি শহরের গর্ব। সেখানে এমন অবস্থা কেন?

Advertisement

মলয় মিশ্র, ৯ নম্বর ওয়ার্ড

গত পুরবোর্ডে আমি কাউন্সিলর ছিলাম। সেই সময় থেকেই কান্দি আদালত থেকে রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর বাড়ি জেমো পর্যন্ত প্রধান রাস্তা রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর নামে নামকরণ করার প্রস্তাব হয়েছে। এবং ওই রামেন্দ্রসুন্দর সুতিকা ভবনকে অত্যাধুনিক আলো দিয়ে সাজিয়ে তোলার কথা হয়েছে। বিষয়টি নজরে আছে। কিন্তু পুরসভা এখন অনাস্থা প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকায় কাজে অসুবিধা হচ্ছে।

Advertisement

• পুরসভা বাড়ি বাড়ি যে জল সরবরাহ করে তা পানের অযোগ্য। মাঝেমধ্যে জলে নোংরা মেলে। এর কি কোনও সুরাহা হবে?

বিকাশ মণ্ডল, ১১ ওয়ার্ড

আপনার সঙ্গে আমিও একমত। যে জল সরবরাহ হয় সেই জলে কেঁচো মেলে বলেও অভিযোগ পেয়েছি। কান্দির জলে আয়রনের পরিমাণও বেশি। ফলে সে জল মুখে তোলা যায় না। গঙ্গার জল শোধন করে পুরসভায় সরবরাহ করার কাজ চলছে। শীঘ্রই তা চালু হয়ে যাবে বলে আশা করছি। তখন আর জলের সমস্যা থাকবে না।

• কান্দিতে ঢোকার মুখে রাস্তায় সারাক্ষণ যানজট। একই ভাবে মহকুমা হাসপাতালের সামনে, কান্দি মহকুমা আদালতের সামনে যানজটে নাকাল বাসিন্দারা। এই নিয়ে পুরসভা কিছু ভাবছে?

তারকনাথ প্রামাণিক, ৬ নম্বর ওয়ার্ড

শহরকে যানজট মুক্ত করতে পুরসভা আগেও অনেক বার চেষ্টা করেছে। কিন্তু রাস্তা দখল করে অনেকে ব্যবসা করছেন। সে কারণে ওই সমস্যা হচ্ছে। পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে নিয়ে পুরসভা অনেক বার রাস্তার দখল মুক্ত করতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু শহরবাসীদের থেকে সে ভাবে সাড়া মেলেনি। তা হলে সে কাজ করা যায়নি। আমিও চাই কান্দির মানুষ যানজট মুক্ত শহরে স্বচ্ছন্দে চলাফেরা করুক। ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা যদি এগিয়ে আসেন অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।

• মহকুমা হাসপাতালে পরিষেবা ঠিকমতো মেলে না। দিনে হোক বা রাতে কেউ অসুস্থ হলে দুর্ভোগে পড়তে হয়। এ বিষয়ে পুরসভার কি ভাবছে?

কাঞ্চন চট্টোপাধ্যায়,১১ নম্বর ওয়ার্ড

বিষয়টি পুরসভার এক্তিয়ারভুক্ত নয়। তবুও এ নিয়ে হাসপাতালের সুপারের সঙ্গে কথাও বলেছি। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় এই সমস্যা হচ্ছে। তবুও বাসিন্দাদের সঙ্গে নিয়ে আমি স্বাস্থ্য দফতরে স্মারকলিপি দিয়ে শহরের দাবিদাওয়া তুলে ধরব।

• অবাধ ব্যবহারে প্লাস্টিকে মুখ ঢেকেছে শহরের। ব্যাপক হারে দূষণ ছড়াচ্ছে। পাশাপাশি এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি কর্মীর অভাবে অপরিচ্ছন্ন থাকে। পুরসভা কী উদ্যোগ নিয়ে এই সমস্যার সমাধান করতে পারে না?

পলাশ মৈত্র, ৩ নম্বর ওয়ার্ড

প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে গত বোর্ড বা নতুন বোর্ড বহু চেষ্টা করেছে। জরিমানাও করেছে। কিন্তু তারপরেও অনেক ব্যবসায়ী লুকিয়ে প্লাস্টিক ব্যবহার করছেন। নাগরিকদের সচেতন করার পরেও অনেকে এর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন না। তবে শহরের সচেতন নাগরিকদের নিয়ে ফের অভিযান করার ইচ্ছে রয়েছে। আর শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে আমাদের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে। তাই ওই স্কুলগুলির পরিচ্ছন্নতা ফেরাতে পুরসভা উদ্যোগ নিতেই পারে। তবে সেক্ষেত্রে স্কুল কর্তৃপক্ষকে আমাদের কাছে জানাতে হবে।

• পুরসভা এলাকায় প্রায় শ’চারেক পুকুর আছে। কিন্তু সংস্কারের অভাবে আবর্জনা জমে সেগুলি মজে যেতে বসেছে। সেগুলির ধারণক্ষমতা কমে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তাতে জল উঠে আসে। এতে মাছ চাষেরও ক্ষতি হচ্ছে। এ ব্যাপারে পুরসভা কোনও পরিকল্পনা আছে?

প্রশান্ত বসু, ১৫ নম্বর ওয়ার্ড

সত্যিই শহরের পুকুরগুলি মজে যাচ্ছে। পুকুরগুলি যাতে সংস্কার করা হয় সেদিকে নজর দেব।

• শহরের বুক চিরে বয়ে গিয়েছে স্বরূপখালি খাল। সেটি এখন শহরের আবর্জনা ফেলার জায়গাতে পরিণত হয়েছে। খালটি দখল করে বাড়িও তৈরি হচ্ছে। খালটির দু’পাড় বাঁধিয়ে শহরের সৌন্দর্যায়ন বাড়ানো যায় না? শহরে স্থায়ী কোনও নাট্যমঞ্চ না থাকায় খুবই অসুবিধা হয়। এ বিষয়ে কোনও উদ্যোগ কি পুরসভা নিয়েছে?
কৌশিক সেনগুপ্ত, ১১ নম্বর ওয়ার্ড

কান্দির মহকুমাশাসক ও সেচ দফতরে সঙ্গে কথা বলে খালটি দখলমুক্ত করে সংস্কার করার জন্য দাবি জানিয়েছি। খালের দু’পাড় বাঁধানো যেতেই পারে। বাহারি গাছ লাগিয়ে সবুজায়নের সঙ্গে শহরের সৌন্দর্যায়ন করা যেতে পারে। ফের সেচ দফতরের কাছে আবেদন করব। আর নাট্যমঞ্চের দাবি দীর্ঘদিনের। জেলা পরিষদ থেকে একটি অডিটোরিয়াম করছে। সেটি যাতে দ্রুত চালু করা যায় সেই দাবি জানাব।

• রাস্তা খুঁড়ে জলের সংযোগ বা নর্দমা তৈরির পর ওই রাস্তা আর মেরামত করা হয় না। তার ফলে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে। রাস্তাগুলি সংস্কার করা হয় না কেন?

রেবতীরঞ্জন গোস্বামী, ১১ নম্বর ওয়ার্ড

বাসিন্দাদের বাড়িতে জলের সংযোগ বা বাসিন্দাদের বাড়ির নিকাশির জল রাস্তা কেটে নর্দমা তৈরি করতে হয় তার জন্য পুরসভা বাসিন্দাদের কাছে থেকে রাস্তা মেরামত করার খরচ নেয় কিন্তু রাস্তাগুলি হচ্ছে না কেন সেটা আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।

• নর্দমা বা আবর্জনা নিয়মিত পরিষ্কার না হওয়ায় শহরে দূষণ ছড়ায়। এমনকী শহরে কয়েকটি শৌচালয় যেমন, লিচুতলার শৌচালয়টি তৈরির পর থেকে পুরসভা কোনও দিন পরিষ্কার করেনি। দুর্গন্ধে টেকা যায় না। এ ব্যাপারে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যায় না?

দেবাশিস ঘোষ, ২ নম্বর ওয়ার্ড

সাফাই কর্মীর অভাবে নিয়মিত আবর্জনা পরিষ্কার হয় না। আবর্জনা পরিষ্কারের জন্য পুরসভা একটি আধুনিক গাড়ি পেয়েছে যার থেকে আবর্জনা থেকে সরাসরি জৈবসার তৈরি করা যাবে। গাড়িটি চালু হলে শহরে আবর্জনা অনেক কমে যাবে। আর শৌচালয়গুলি যে পরিষ্কার হয় না সেটা আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে কেউ কিছু বলেননি। তবে এ বার ব্যবস্থা নেব।

• শহরে পাইপের মাধ্যমে জল সরবরাহ হয়। কিন্তু ট্যাপ না থাকায় সারাক্ষণ জল পড়ে। আবার একই ভাবে পুরসভা এলাকায় ৭, ১২, ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে জল পাইপ লাইন বসানো হয়নি। ওই এলাকায় মানুষদের জল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তাদের কী কোনও ব্যবস্থা হবে না?

অময় চক্রবর্তী, ৩ নম্বর ওয়ার্ড

পুরসভা কলে ট্যাপ লাগিয়ে দেয়। কিন্তু ওই রাতের অন্ধকারে কে কা কারা তা খুলে নেয়। বহু নজরদারির পরেও চুরি ঠেকানো যায়নি। আর ওই তিন ওয়ার্ডে কেন জলের সংযোগ পৌঁছয়নি তা আমিও জানি না। ওই এলাকাগুলিতে বিদ্যুৎচালিত পাম্পের মাধ্যমে জলের ব্যবস্থা করা যায় কি না তা দেখা হচ্ছে।

• ঘিঞ্জি কান্দি বাজারে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে জলের কোনও ব্যবস্থা নেই। লিচুতলা বাজার, কাঁঠালতলা বাজার, বাসস্ট্যান্ড বাজার, জেমো বাজারে জলের ব্যবস্থা নেই। এ ব্যাপারে পুরসভা কী কোনও ব্যবস্থা নিয়েছে?
অসীমকুমার মণ্ডল, ১০ নম্বর ওয়ার্ড

কান্দি বহু পুরনো শহর হলেও কোনও পরিকল্পনা ছাড়াই বাজার-হাট গড়ে উঠেছে। বাজারের রাস্তাগুলি খুব সরু। বাজারের মধ্যেই বড় এক সিলিন্ডার থেকে অন্য সিলিন্ডারে গ্যাস ভরা হয়। তাতে যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কান্দি পার্কের মধ্যে একটি জলের রিজার্ভার আছে কিন্তু আরও কয়েকটি রিজার্ভার দরকার। দমকল বিভাগের সঙ্গে কথা বলে সেগুলি গড়ার ব্যবস্থা করব। শহরের মধ্যে যেখানে সেখানে ভবন নির্মাণ করে বাজার তৈরি হচ্ছে সেগুলির উপরও নজর রাখা হবে।

• শহরের মধ্যে মিনি স্টেডিয়াম, সুইমিং পুল, বা পুরসভা এলাকায় শরীরচর্চার কোনও ব্যবস্থা নেই। সেই বিষয়ে পুরসভা কী কোনও ব্যবস্থা নেবে? সুইমিং পুলের জন্য ক্রীড়া দফতর থেকে চিঠি করা হয়েছিল কিন্তু পুরসভা কোনও উত্তর না দেওয়ায় সেটা হয়নি। এ বিষয়ে পুরসভা কী ভাবছে?

হেমন্ত দাস, ১৫ নম্বর ওয়ার্ড

ক্রীড়া দফতর চিঠি দিয়েছিল বলে জানা নেই। তবুও খোঁজ নেব। কান্দিতে খেলাধুলোর ব্যবস্থা করার জন্য আমি রাজ্যের ক্রীড়া মন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাব। প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেও কান্দির সুইমুং পুল ও মিনি স্টেডিয়ামের ব্যবস্থা করার জন্য আর্জি জানাব।


স্বরূপনগর খাল দখল করে গড়ে উঠেছে বাড়ি।— নিজস্ব চিত্র

• বহু রাস্তায় দিনের বেলাও আলো জ্বলে। আবার রাতে রাস্তায় আলো থাকে না। এমনটা কেন?

কৌশিক চক্রবর্তী, ৯ নম্বর ওয়ার্ড

অনেক সময় ওই বাতিগুলির মেরামতির কাজের জন্য দিনের আলোতে লাইন চালু রেখে কাজ করতে হয়। আবার অনেক সময় কাজ না হলেও আলো জ্বলে এমন ঘটনা আমার নজরে পড়েছে। আমি জানতে পারলে তার ব্যবস্থা নিই। তবে দু’টি থেকে তিনটি করে ওয়ার্ডে একজন করে কর্মী আছে যারা ওই আলো জ্বালানো-নেভানো ও মেরামতির কাজ করেন। কোনও কারণে নজর এড়িয়ে যাওয়ার কারণে এমনটা হয়। এতে পুরসভার রাজস্ব নষ্ট হচ্ছে এমন বিষয় নজরে এসেছে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। আলো জ্বলছে এমন কোথাও খবর পেলেই তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

• শহরে মেন রাস্তার পাশে কোনও বাড়ি তৈরি করা হলে সেটা চার ফুট জায়গা ছেড়ে রাখার নিয়ম। কিন্তু পুরসভা থেকে সেই মতো কাগজপত্র করার পরেও অনেক ক্ষেত্রে সেটা কেউ দু’ফুট তো কেউ তিন ফুট জমি ছেড়ে রেখে বাড়ি করছে। পুরসভা কোনও ব্যবস্থা নেয় না কেন?

শুভাশিস ঘোষ, ২ নম্বর ওয়ার্ড

ওই বিষয়টি দেখার জন্য পুরসভায় মনিটরিং টিম আছে তারাই দেখাশোনা করে। কিন্তু তারপরেও কেন এমন হচ্ছে তা খতিয়ে দেখব। তবে রাস্তার ধারে চার ফুট জায়গা ফেলে রাখার পরেই বাড়ি তৈরি করার নিয়ম আছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন