নাবালিকাকে ধমকে বিয়ে ভাঙল কন্যারা

চোদ্দ বছরের পাত্র আর পনেরোর পাত্রীর বিয়ের খবরটা লতায় পাতায় ঠিক পৌঁছে গিয়েছিল কন্যাশ্রী যোদ্ধাদের কাছে।

Advertisement

বিমান হাজরা

শমসেরগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:২৫
Share:

কন্যাশ্রী যোদ্ধারা।

শেষ পর্যন্ত থমকেই গেল অলিউল ইসলামের বিয়ে।

Advertisement

সদ্য কিশোর ছেলেটির সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়েছিল শমসেরগঞ্জের দশম শ্রেণির পড়ুয়া সুকনার’র। ম্যাড়াপ বাঁধার বায়না, নতুন শাড়ি, জেনারেটর ভাড়া— কাজ প্রায় সারা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আয়োজনের কথা কি চাপা থাকে!

চোদ্দ বছরের পাত্র আর পনেরোর পাত্রীর বিয়ের খবরটা লতায় পাতায় ঠিক পৌঁছে গিয়েছিল কন্যাশ্রী যোদ্ধাদের কাছে। ব্লক অফিসে নালিশ জানিয়ে একেবারে পুলিশ নিয়ে তারা হাজির হয়েছিল বিয়ে বাড়িতে।

Advertisement

বুধবার দুপুরে ব্লকের সমাজ কল্যাণ আধিকারিক মণীশকান্তি দাস পুলিশ আর দু’টি স্বেচ্ছোসেবী সংগঠনের লোকজন নিয়ে গিয়ে হাঁক পাড়়েন, ‘‘কই হে মেয়ে কোথায়!’’

অলিউল অবশ্য একা নয়, পাশের গ্রাম লস্করপুরে সোমবার রাতে একেবারে বরযাত্রী সমেত এসে থমকে গিয়েছিল আরও এক নাবালক বর। ব্লক অফিসেরে কর্তা আর কন্যাশ্রী যোদ্ধারা হাত জোর করে জানিয়ে দিয়েছিলন, ‘‘দয়া করে নিয়মটা মানুন, বিয়ে এখন নয়।’’

দেড় দিনের মধ্যে এই জোড়া বিয়ে রুখে দেওয়াই নয়, পরিসংখ্যানটা বলছে, গত কয়েক মাসে শমসেরগঞ্জ জুড়ে এমনই ৫২টি অ-বয়সের বিয়ে রুখে দেওয়া হয়েছে, সৌজন্য কন্যাশ্রী যোদ্ধা এবং অবশ্যই স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা।

কিন্তু, এত প্রচার, এত সেমিনার-আলোচনা-সতর্কতা সত্ত্বেও অল্প বয়সের বিয়ের বিরাম নেই কেন। সরকারি সূত্রেই জানা গিয়েছে, ৫২ বিয়ে রোখার সাফল্য চমকে দেওয়ার মতো হলেও একটি স্বেচ্ছেসেবী সংস্থা ব্লকের আনাচ কানাচে ঘুরে খোঁজ পেয়েছে, গত ছ’মাসে এমন অন্তত শ’খানেক নাবালিকা বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে নিশ্চুপে।

আইনলের বাবার কথাতেই তা স্পষ্ট। দিনমজুর মানুষটা বলছেন, অত জানি না বাপু, আমাদেরই তো বিয়ে হয়েছিল কত অল্প বয়সে।’’ পাত্রী সুকনারার মা সাজেনুর বিবির কথায়, ‘‘আমার বিয়ে হয়েছিল ১৩ বছরে। মেয়ের তো তবু পনেরো হয়েছে।’’

যা শুনে, কন্যাশ্রী হাবিবা খাতুন বলছে, ‘‘মেয়েটা দশম শ্রেণিতে পড়ছে। অন্তত উচ্চ মাধ্যমিকটা শেষ করুক, কতবার বলি, এরা কেন যে বুঝতে চায় না!’’

চাইল্ড-লাইনের কর্মী বিপ্লব কর্মকারের চমকে ওঠা স্বগতোক্তি “এত ছুটছি, এত বিয়ে আটকাচ্ছি, মানুষ কেন যে বুঝতে চাইছেন না!’’

ব্লকের সমাজ কল্যাণ আধিকারিক মণীশকান্তি দাস ধরিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘আসলে কি জানেন, ই এলাকায়, ছেলের বয়র পনেরো-ষোলো হলেই বিভিন্ন কাজে বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, বিয়েটা তার আগে সেরে ফেলাই রেওয়াজ। আর তা করতে গিয়েই নাবালক-নাবালিকার বিয়ের এমন রমরমা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন