প্রতিবাদের মাধ্যম হয়ে উঠছে কীর্তন

হর্ষের সঙ্গে বল আনন্দের কথা। সারা তনু মন তাতে গেয়ে উঠুক, নেচে উঠুক। কথা বলতে গেলে যদি তা গানে পরিণত হয়, হোক। পূর্ণিমার রাতে বৃন্দাবনে কৃষ্ণ যেমন সবাইকে ডেকে নিতেন, কারও পিতা, স্বামী বা ভাই বারণ করলেও কেউ শুনতেন না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৪০
Share:

হর্ষের সঙ্গে বল আনন্দের কথা। সারা তনু মন তাতে গেয়ে উঠুক, নেচে উঠুক। কথা বলতে গেলে যদি তা গানে পরিণত হয়, হোক। পূর্ণিমার রাতে বৃন্দাবনে কৃষ্ণ যেমন সবাইকে ডেকে নিতেন, কারও পিতা, স্বামী বা ভাই বারণ করলেও কেউ শুনতেন না। যেতেন কৃষ্ণের কাছেই। সেই ভাবেই, সেই স্মৃতির বৃন্দাবনই স্থাপিত হয় অন্তরে। তার প্রকাশ হয় সংকীর্তনে। শচীনন্দন বিশ্বম্ভর যখন নবদ্বীপের মাটিতে ডাক দিয়ে যেতেন, গেয়ে উঠত সারা শহর। স্মৃতির শর্ত মানত না।

Advertisement

পণ্ডিতেরা বলেন, বিশ্বম্ভর চেয়েছিলেন একটি সর্বজনীন সামাজিক সূত্র তৈরি করতে। তাঁর কীর্তনে তাই ঠাঁই পেতেন সমাজের নানা শ্রেণির মানুষ। ভাগাভাগি করতেন না, কেননা শর্তাধীন থাকতে চাননি। নতুন শর্ত বরং তৈরি করতে চেয়েছিলেন। তাই কীর্তনের নতুন প্রাসঙ্গিকতাও তৈরি হয়েছিল। বোঝা গিয়েছিল, একই পদ বহু কণ্ঠে এক সঙ্গে গাইলে তার অর্থ বদলায়।

তারপর থেকে বারে বারে বিভিন্ন সামজিক আন্দোলনের হাতিয়ার হয়েছে কীর্তন। সেই কীর্তনকে সঙ্গে নিয়ে এ বার শিশুপাচার ও নারী নির্যাতনের মতো সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংঘটিত করতে চান সারা ভারত কীর্তন ভক্তিগীতি সংসদ। সম্প্রতি কৃষ্ণনগরে অনুষ্ঠিত কীর্তন সংসদের নদিয়া জেলা সম্মেলন থেকে তেমনটাই জানানো হল। সংসদের সর্বভারতীয় সভাপতি নিমাই ভারতী জানান এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গোটা দেশ জুড়ে কীর্তন ও ভক্তিগীতিকে সম্বল করে নানান সামাজিক অন্যায়ের প্রতিবাদে নেমেছে এই প্রতিষ্ঠান। মহাপ্রভুর পথ দেখিয়ে ছিলেন কী ভাবে সামাজিক অসাম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বহু মানুষের সম্মিলিত কীর্তন বা সংকীর্তন কার্যকরী হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে। তারপর থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আন্দোলনে কীর্তন বা ভক্তিগীতি অন্যতম প্রধান শক্তি হয়ে উঠেছে।

Advertisement

সংগঠনের সম্পাদক সিদ্ধার্থশেখর দাসের কথায়, সারা ভারতে ভজন কীর্তন বাউল দরবেশ সুফি খ্রিস্ট সঙ্গীত গায়ক মিলিয়ে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ আছেন। যারা সমাজ জীবনে শান্তির বাতাবরণ তৈরিতে যুগের পর যুগ ধরে নীরবে কাজ করে চলেছেন। সংসদের সভাপতি বলেন “সামাজিক অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে সমাজের তৃণমূল স্তরে কীর্তন বা অন্য ভক্তিসঙ্গীত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কীর্তন সংসদ সেই কাজটিকে সংগঠিত ভাবে করতে চায়।” মূলত কীর্তন বা ভক্তিগীতির শিল্পদের জন্য গঠিত এই সংগঠনের আরও একটি লক্ষ্য হল দেশের গরীব দুঃস্থ গায়কদের জন্য সামাজিক এবং আর্থিক সুরক্ষার ব্যবস্থা করা।

কৃষ্ণনগরে সংসদের নদিয়া জেলা সম্মেলনে ছিল উপচে পড়া ভিড়। উদ্বোধন করেন নবদ্বীপ গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজের কিশোরকৃষ্ণ গোস্বামী। নদিয়ার কুড়ি জন প্রবীণ কীর্তন শিল্পীকে সম্মান এবং সহায়তা প্রদান করা হয়। রাধেশ্যাম দাস, গোপাল দাস বাবাজি কিম্বা নদিয়াচাঁদ। সদ্য প্রয়াত নদিয়াবিনোদ মোহান্ত কে মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন