জীর্ণ এই হেরিটেজ ভবন সংস্কারকে কেন্দ্র করে দানা বেঁধেছে বিতর্ক। কৃষ্ণনগরে। ছবি: প্রণব দেবনাথ।
হেরিটেজ ঘোষণা হয়েছিল অনেক আগে। হেরিটেজ কমিশনের অনুমতি নিয়ে কৃষ্ণনগরে ব্রাহ্ম সমাজের সেই হেরিটেজ ভবন সংস্কারে হাত দিয়েছে পুরসভা। কৃষ্ণনগর ব্রাহ্মসমাজ কমিটির অভিযোগ, সংস্কারের নামে কার্যত ভবনটি ধ্বংস করছে পুরসভা। তারা ইতিমধ্যে এ বিষয়ে প্রশাসনের নানা স্তরে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে। পাশাপাশি শুরু করেছে লিফলেট বিলিও। যার পরিপেক্ষিতে কৃষ্ণনগর পুরপ্রধানের কাছে বিষয়টি বিস্তারিত বিবরণ চেয়ে পাঠিয়েছেন কৃষ্ণনগর সদর মহকুমাশাসক। পুরসভার সূত্রে জানা গিয়েছে, সংস্কারের কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে।
সূত্রের খবর, ১৮৪৮ সালে শ্রীশচন্দ্রের রায়ের দানের জমিতে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আর্থিক সহায়তায় ব্রাহ্মসমাজের ভবনটি নির্মিত হয়। কৃষ্ণনগর ব্রাহ্মসমাজ কমিটির সম্পাদক তপোব্রত ব্রহ্মচারী জানান, বাংলায় এটিই তৃতীয় প্রাচীন ব্রাহ্মসমাজ। রাজা নিজে ব্রাহ্ম ধর্ম গ্রহণ না করলেও তিনি নিয়মিত ওই ভবনে যেতেন। ওই ভবনে গিয়েছেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্যাসাগর, রামতনু লাহিড়ির মতো ব্যক্তিত্বরা। তপোব্রত বলছেন, ‘‘এক বার কেশবচন্দ্র সেনের বক্তৃতা শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন শহরের মানুষ। বহু ইতিহাসের সাক্ষী এই ভবন। সংস্কারের নামে তা ধ্বংস করছে পুরসভা।’’
কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ভবনটিকে হেরিটেজ ঘোষণা করতে উদ্যোগী হয়েছিল ব্রাহ্মসমাজ। বছর দশেক আগে সেটিকে হেরিটেজ ঘোষণাও করা হয়। সম্প্রতি ভবনটি সংস্কারের পরিকল্পনা করে কৃষ্ণনগর পুরসভা। তারা ভবনটি সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য হেরিটেজ কমিটির কাছে লিখিত আবেদন করে। পুরসভার দাবি, হেরিটেজ কমিটির কাছ থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর তারা সংস্কারের কাজে হাত দেয়। সেই কাজ শুরু হতে দানা বাঁধে বিতর্ক।
তপোব্রত ব্রহ্মচারীর অভিযোগ, ভবন চত্বরের ১০-১৫টি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। প্রায় ৩০-৪০ ইঞ্চি চওড়া এবং ৬-৭ ফুট উঁচু দেওয়াল ভেঙে ফেলা হচ্ছে। ভবনের সামনে সিঁড়ি ছিল। সেটির এখন কোনও অস্তিত্ব নেই। তিনি বলেন, ‘‘মূল কাঠামো অক্ষুণ্ণ রেখে হেরিটেজ ভবন সংস্কার করতে হয়। কিন্তু সংস্কারের নামে সেটিকে ধ্বংস করছে কৃষ্ণনগর পুরসভা।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘সংস্কারের কাজে হাত দেওয়ার আগে বা পরে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ বা পরামর্শ পর্যন্ত করা হয়নি।’’
যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুরসভা। পুরপ্রধান অসীম সাহা জানান, পুরসভা ভবনটি সংরক্ষণ করতে চায় বলে উদ্যোগী হয়ে হেরিটেজ কমিটির অনুমতি নিয়েছে। মূল কাঠামোর কোনও ক্ষতি না হয় সে জন্য হেরিটেজ কমিশনের তালিকাভূক্ত সংস্থাকেই দিয়ে কাজ করাতে উদ্যোগী হয়েছে। দু’টো সংস্থা পুরসভার কাছে গিয়েছিল। তাদের প্রকল্প জমা তৈরি করে জমা দিতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘পাঁচিল একেবারেই দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। আমরা সেখানে একটা শক্তপোক্ত পাঁচিল তৈরি করছি। আর আমরা কোনও সিঁড়ির দেখা পাইনি।” তাঁর দাবি, ভবনটির ক্ষতি করেছিল বলে গাছগুলো কাটা হয়েছে। সেই গাছগুলোর বয়সও বেশি নয়।
কৃষ্ণনগর সদর মহকুমাশাসক অম্লান তালুকদার বলছেন, ‘‘ব্রাহ্মসমাজ কমিটির চিঠি পেয়েছি। পুরপ্রধানের কাছে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়েছে। তা হাতে পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে।’’