Krishnanagar Municipality

পুরসভায় একাধিক ‘আরটিআই’, ওএমআর শিট গায়েব, উত্তর দরকার

আইনজীবীদের দাবি, আইন অনুযায়ী শনিবার উত্তর দেওয়ার শেষ দিন। উত্তর না পেলে তাঁরা হাই কোর্টে যাবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:৩৮
Share:

কৃষ্ণনগর পুরসভা। ফাইল চিত্র।

উত্তরপত্র (ওএমআর শিট) ‘নিখোঁজ’ হওয়ার ঘটনায় নতুন করে অস্বস্তিতে পড়তে চলেছে কৃষ্ণনগর পুরসভা। কারণ চাকরিপ্রার্থীদের পাশাপাশি কৃষ্ণনগর আদালতের দুই আইনজীবীও তথ্য জানার অধিকার আইনে (আরটিআই) নিয়োগ সংক্রান্ত একাধিক বিষয় জানতে চেয়ে আবেদন করেছেন। প্রায় এক মাস চললেও শুক্রবার রাত পর্যন্ত পুরসভার তরফে কোনও উত্তর দেওয়া হয়নি। যদিও পুরসবভা দাবি, আজ, শনিবারের মধ্যেই উত্তর দেওয়া হবে।

Advertisement

ওই আইনজীবীদের দাবি, আইন অনুযায়ী শনিবার উত্তর দেওয়ার শেষ দিন। উত্তর না পেলে তাঁরা হাই কোর্টে যাবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এ দিকে, শুক্রবার আবার আরও চার চাকরিপ্রার্থী একই আইন মোতাবেক আবেদন করে নিয়োগ সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য জানতে চেয়েছেন। তাঁরাও হাই কোর্টে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন। বেশ কয়েক মাস আগেই ওই সব উত্তরপত্র ‘নিখোঁজ’ হওয়ার কথা জানতে পেরেছেন পুর কর্তৃপক্ষ। কেন এখনও পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হয়নি, সেই প্রশ্নও উঠছে।

২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সাল— পর পর তিন বছর কৃষ্ণনগর পুরসভা কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে পরীক্ষা নিয়ে বিভিন্ন দফতরে বেশ কিছু কর্মী নিয়োগ করেছিল। প্রথম থেকেই এই নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে সেভাবে নাড়াচাড়া হয়নি। মাস কয়েক আগে হাঁসখালির জয়নারায়ণপুর এলাকার বাসিন্দা, ২০১৮ সালের চাকরিপ্রার্থী শান্তনু সরকার ‘আরটিআই’ মোতাবেক বেশ কিছু তথ্য জানতে চান। তার উত্তরে বর্তমান পুর কর্তৃপক্ষ জানান, ওই বছর অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়র থেকে শুরু করে মজদুর পর্যন্ত ১৭টি পদে ৭২ জনকে নিয়োগ করা হয়। পরীক্ষায় বসেছিলেন প্রায় ২৫ হাজার পরীক্ষার্থী। সেই ২৫ হাজার উত্তরপত্রই গায়েব। সেই পরীক্ষার সময়ে পুরসভা তৃণমূলের হাতে ছিল, যদিও এর মধ্যে পুরভোট হয়ে পুরপ্রধান-সহ বোর্ডের সদস্য বদল হয়েছে। উত্তরপত্র নিখোঁজ হওয়া নিয়ে পুরসভার তদানীন্তন ও বর্তমান কর্তৃপক্ষের মধ্যে একপ্রস্ত চাপানউতোরও হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে আবার ভৈরবচন্দ্রপুরের বাসিন্দা সুমন বিশ্বাস কলকাতা হাই কোর্টে মামলাও ঠুকে দিয়েছেন।

Advertisement

গত ৫ জানুয়ারি কৃষ্ণনগর আদালতের দুই আইনজীবী প্রণয় চৌধুরী ও অমৃতরাজ মিত্র নতুন করে ‘আরটিআই’ মোতাবেক আবেদন করে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিন বছরের নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য জানতে চান। ওই তিন বছরে কত জন করে ফর্ম পূরণ করেছিলেন, কত জন পরীক্ষায় বসেছিলেন এবং কত জনের নাম চুড়ান্ত নিয়োগ তালিকায় ছিল, তা জানতে চাওয়া হয়। পরীক্ষা মারফত যাঁরা নিয়োগ পেয়েছেন তাঁদের উত্তরপত্রও চাওয়া হয়। কিন্তু আইনে নির্ধারিত এক মাসের সময়সীমা শেষ হয়ে এলেও উত্তর মেলেনি।

পুরসভার বিরোধী সদস্যদের দাবি, অযোগ্যদের নিয়োগ করা হয়েছিল। তার প্রমাণ লোপাট করতে ‘ওএমআর শিট’ সরিয়ে ফেলা হয়েছে। আর সেটা ধামাচাপা দিতেই উত্তর দিতে এত দেরি করছেন পুর কর্তৃপক্ষ। প্রণয়েরাও দাবি করছেন, “একটা বড়সড় দুর্নীতির গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। আমরা এর শেষ দেখে ছাড়ব। যারা দুর্নীতিতে জড়িত তাদের জেলের ভাত খাওয়াব।”

কৃষ্ণনগরের পুরপ্রধান রিতা দাস বলেন, “আমরা শনিবারই আরটিআই-এর উত্তর দিয়ে দেব। তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে।”

উত্তরপত্র হারিয়ে গিয়ে থাকলে পুলিশের কাছে অভিযোগ তদায়ের করা হয়নি কেন? পুরপ্রধান বলেন, “আমি বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। দু’এক দিনের মধ্যেই পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন