রানাঘাটের ঘটনার প্রতিবাদে মোমবাতি মিছিল। কৃষ্ণনগরে সুদীপ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।
পুলিশ আট জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। জেলা পুলিশের কর্তারা আশ্বাস দিয়েছেন, খুব শীঘ্রই দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করা হবে। কিন্তু সেই আশ্বাসেই বিশেষ ভরসা পাচ্ছে না রানাঘাটের বৈদ্যপুর পঞ্চায়েতে ডন বস্কোপাড়া। শুক্রবার রাতে রানাঘাটের একটি কনভেন্টে ডাকাতি ও স্কুলের সত্তরোর্ধ্ব এক সন্ন্যাসিনীকে ধর্ষণের ঘটনায় যেমন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন স্কুল কতৃর্পক্ষ ও স্কুলের পড়ুয়ারা, তেমনই আতঙ্কে কাঁটা হয়ে রয়েছে ডন বস্কোপাড়ার বাসিন্দারাও। তাঁরা জানান, স্কুলে নিরাপত্তারক্ষীর পাশাপাশি রয়েছে সিসিটিভি। কিন্তু সেখানেও যা ঘটল তারপরে আর পুলিশ প্রশাসনের উপরে বিশেষ ভরসা রাখা যাচ্ছে না। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, “আটক আর গ্রেফতার কি এক হল!”
এমনিতেই ওই এলাকায় একটি সমস্যা রয়েছে। প্রশাসনিক ভাবেই যে সমস্যার বীজ পোঁতা হয়েছিল পাঁচ বছর আগে রানাঘাট থানার এলাকা ভাগ করার সময়। রানাঘাটকে ভেঙে যখন গাংনাপুর থানা তৈরি হল, ডন বস্কোপাড়ার বাসিন্দারা তখনই প্রতিবাদ করেছিলেন যে, এই এলাকা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে থানা হলে অপরাধের মাত্রা বাড়বে।
ওই এলাকার বহু পরিবারের পুরুষেরা কর্মসূত্রে ভিন্ রাজ্যে বা বিদেশে থাকেন। জাতীয় সড়ক আর রেল লাইনের ধারে দুই থানার সীমানা এলাকা হওয়ায় সেখানে দুষ্কৃতীদের আনাগোনাও রয়েছে। ওই এলাকার বাসিন্দা অলোক সরকার শনিবার নিজেও বুকে কালো ব্যাজ পরে অবরোধে সামিল হয়েছিলেন। তিনি বলেন, “পুলিশের মানচিত্র অনুযায়ী রানাঘাট থানা নাগালের মধ্যে থাকলেও ঘটনা ঘটলে পুলিশকর্মীরা দায় এড়িয়ে যান নির্দ্বিধায়।” শনিবার ভোরে দুষ্কৃতীরা পাঁচিলের গেটে বাইরে থেকে তালা দিয়ে চলে যায়। গাংনাপুর থানায় খবর দেওয়ার পরে পুলিশ ১২ কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে এসেছিল। খোদ জেলার পুলিশ সুপারও খবর পাওয়া মাত্রই নির্যাতিতা সন্ন্যাসিনীর সঙ্গে দেখা করতে হাসপাতালে ছুটেছিলেন। কিন্তু তখন তো ঢিল ছোড়া দূরত্বে জাতীয় সড়কের উপরেই রানাঘাট থানার পুলিশের টহলদারি গাড়ি ছিল! জেলা পুলিশেরই এক কর্তার কথায়, “এলাকা নিয়ে পুলিশের এই চুলচেরা ভাগাভাগি দীর্ঘদিনের। নিয়ম অনুযায়ী যে কোনও থানায় যে কোনও এলাকার মানুষ যখন ইচ্ছে অভিযোগ জানাতে পারেন। আবার কোনও ঘটনা ঘটলে আপদকালীন পরিস্থিতিতে পুলিশকেও সীমানা ভেঙেই কাজ করতে হয়। কিন্তু সে কথা মানছে কে!”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার জনা কয়েক যুবক কোনও রাখঢাক না রেখেই বলছেন, “রাতে পুলিশ পাহারা দেওয়ার নামে তো তোলা আদায়ে ব্যস্ত থাকে। জাতীয় সড়কের পাশেই ওই স্কুলে চার ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালাল দুষ্কৃতীরা। আর পুলিশ কিছুই জানতে পারল না!” এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই এলাকায় ডাকাতি, ছিনতাই প্রায় রোজনামচা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনও ঘটনা ঘটলে রানাঘাট থানা দায় চাপায় গাংনাপুরকে। আর গাংনাপুর দোষারোপ করে রানাঘাটকে। যে কোনও অভিযোগ জানাতে গেলেও সাধারণ মানুষকে চরম হেনস্থা করা হয়। এত স্পষ্ট ফুটেজ পেয়েও পুলিশ কিছুই করতে পারল না কেন সেটাই সবথেকে আশ্চর্যের।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনায় প্রথম থেকেই ‘ছোট ঘটনা’-র উল্টো পথে হেঁটেছেন। নির্দেশ দিয়েছেন, সিআইডি তদন্তের। সেই কারণেই তড়িঘড়ি বেশ কয়েকজনকে আটক করে ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ করতে চাইছে জেলা পুলিশ। অনেকেরই আশঙ্কা, পুলিশ ও সিআইডি নিজের মুখ বাঁচাতে গিয়ে হয়তো এমন কাউকে গ্রেফতার করল যারা এই ঘটনার সঙ্গে আদৌ জড়িত নয়। আর সেই সুযোগে পালিয়ে গেল প্রকৃত দুষ্কৃতীরা। জেলা পুলিশের এক কর্তার আশ্বাস, “এমনটা ঘটার কোনও কারণ নেই।” তাঁর যুক্তি, “সেই কারণেই তড়িঘড়ি কাউকে গ্রেফতার না করে জিজ্ঞাসাবাদেই বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে।”