ধরপাকড়েই কি শীতঘুমে মাফিয়ারা?

এই দাবি যদি সত্যি হয়ে থাকে তা হলে আপাত ভাবে মাটি মাফিয়ারা ঘাপটি মেরে থাকলেও ভিতরে-ভিতরে তারা যে যথেষ্ট সক্রিয় এবং পুলিশ-প্রশাসনের কড়াকড়ি একটু শিথিল হলেই ফের স্বমূর্তি ধারণ করবে, তা এক রকম নিশ্চিত।

Advertisement

সৌমিত্র সিকদার

চাকদহ শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৪২
Share:

—প্রতীকী ছবি।

দিন তিনেক আগে বোমা পড়েছিল কামালপুর গ্রামে চাকদহের তাতলা ২ পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান তথা বর্তমান সদস্য ইন্দ্রজিৎ রায়ের বাড়িতে। কারা, কী কারণে বোমা মেরেছে তা এখনও রহস্যাবৃত। কিন্তু ইন্দ্রজিৎবাবুর দাদা দেবতোষ রায় দাবি করেছিলেন, ‘‘ইন্দ্রজিৎ কয়েক দিন আগে মাটির লরি আটকেছিলেন। অবৈধ ভাবে মাটি কেটে যারা পাচার করে সেই মাটি কারবারিরাই এই হামলা চালিয়েছে।’’

Advertisement

এই দাবি যদি সত্যি হয়ে থাকে তা হলে আপাত ভাবে মাটি মাফিয়ারা ঘাপটি মেরে থাকলেও ভিতরে-ভিতরে তারা যে যথেষ্ট সক্রিয় এবং পুলিশ-প্রশাসনের কড়াকড়ি একটু শিথিল হলেই ফের স্বমূর্তি ধারণ করবে, তা এক রকম নিশ্চিত। নদিয়া জেলা-জুড়ে মাটি কাটা ও পাচারের অবৈধ কারবারের পিছনে রাজনৈতিক মদতের অভিযোগও উঠেছে বারবার। যে দল যখন বিরোধী শিবিরে থেকেছে তাদের আনা অভিযোগে কিছু দিন কাজ থেকে হাত গুটিয়েছে কারবারিরা, তার পর আবার যে কে সেই। সম্প্রতি একাধিক জায়গায় তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের সাহায্যে অবৈধ ভাবে মাটি কাটা এবং শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের টাকা দিয়ে মাটি কাটার ছাড়পত্র আদায়ের ঘটনা সামনে এসেছে। তা নিয়ে শোরগোল, শো কজও হয়েছে। তাতে প্রশাসন নড়েচড়ে বসে একাধিক জায়গায় অভিযান চালিয়েছে। বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতারও করেছে। স্বভাবত নিজেদের বাঁচাতে হয়ে গা ঢাকা দিয়েছে অধিকাংশ মাটির কারবারি।

প্রশাসন সূত্রে খবর, চাকদহ, বনমালীপাড়া, চান্দুরিয়া, মদনপুরের মতো একাধিক জায়গায় কিছু দিন হল ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’-এ চলে গিয়েছে মাটি মাফিয়াদের অনেকে। পরিস্থিতি বুঝে আবার বেরিয়ে কাজ শুরু করবে। স্থানীয় মানুষও তা হাড়়েহাড়ে জানেন। তাই দুশ্চিন্তামূক্ত হতে পারছেন না তাঁরা। চাকদহের বনমালীপাড়ার এক বৃদ্ধ যেমন বললেন, ‘‘এটা সাময়িক বিরতি। মাঝে মাঝে সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হলে মাটি কাটা বন্ধ থাকে। কয়েক দিন পরে আবার শুরু হয়ে যায়। এখন তো শান্তিতেই রয়েছি। জানি না, এই শান্তি ঠিক কত দিনের, জানি না আবার কবে থেকে দাপাদাপি শুরু হবে মাটির গাড়ির।’’

Advertisement

চাকদহের বিধায়ক রত্না ঘোষ, পঞ্চায়েত সমিতির সহকারি সভাপতি দিলীপ সরকার, ভুমি কর্মাধ্যক্ষ প্রীতি মণ্ডল প্রমুখেরা দু’দিন আগেই মাটি মাফিয়াদের দাপটে ত্রস্ত ছিল এমন বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। রত্না ঘোষ বলেন, “মানুষকে বলেছি, মাটি কাটতে দেবেন না। প্রতিবাদ করবেন। আমার আপানাদের সঙ্গে আছি।” যাঁর বাড়িতে মাটি মাফিয়ারা বোমা মেরেছে বলে দাবি উঠেছে সেই তাতলা ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান পার্থপ্রতিম দে বুধবার বলেন, ‘‘আবার মাটির গাড়ি দেখলে আবার আটকাবো।’’

প্রশাসন সূত্রে খবর, ঘেঁটুগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের বনমালীপাড়ায় চাষের জমি থেকে মাটি কেটে ট্রাক্টরে ভরে বিভিন্ন জায়গায় পাচার করছিল মাটি মাফিয়ারা। কামালপুরে বিভিন্ন স্কুলের সামনের রাস্তা-সহ চাকদহ-বনগাঁ রাজ্য সড়ক দিয়েও মাটি পাচার করা হচ্ছিল দীর্ঘদিন। চান্দুরিয়া ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন জায়গা থেকেও মাটি কাটা হচ্ছিল। গত কয়েক দিন কাজ বন্ধ রয়েছে। মাটি পাচারকারীরা গা ঢাকা দিয়েছে বলে খবর। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, “এটা সাময়িক শান্তি। ওদের দাপাদাপি শুরু হল বলে।”

একই ছবি দেখা গিয়েছে চান্দুরিয়া ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন জায়গায়। এই সব জায়গায় চাষের জমি এবং ভাগীরথী নদীর পার থেকে মাটি কাটছিল মাফিয়ারা। সেই মাটি রানীনগর হয়ে চাকদহ শহরের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পাচার হচ্ছিল। মাটি নিয়ে যাওয়ার সময়ে তা রাস্তায় ছড়িয়ে রাস্তা ময়লা হচ্ছিল। পড়ে থাকা মাটিতে অন্য গাড়ির চাকা পিছলে দুর্ঘটনাও ঘটছিল।

মাটি কাটা হচ্ছিল মদনপুর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন জায়গা থেকে। এই সব জায়গা থেকে মাটি কল্যাণী এবং চাকদহ ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় পাচার হচ্ছিল। এলাকার মানুষ এর প্রতিবাদ করেন। চাকদহ- কল্যাণী ভায়া মদনপুরের রাস্তা অবরোধ করেন তাঁরা। তাঁদের কথায়, “কারও উপরে ভরসা রাখতে পারছি না। কারণ, যাঁদের মাটি রক্ষা করার কথা, তাঁদেরই অনেকে তলে-তলে মাটি মাফিয়াদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।” চাকদহ ব্লকের ভুমি সংস্কার আধিকারিক উৎপল সাহা-র কথায়, “এখন সব জায়গায় মাটি কাটা বন্ধ রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় হানা দেওয়া হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে অনেকে। এলাকায় নজর রাখা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন