বসত জমিতে পাইকারি হারে বহুতলের চাষ হোক, তা চাইছেন না কল্যাণীর সিংহভাগ বাসিন্দা। শহরের বসত জমি আগে লটারির মাধ্যমে বিক্রি করা হত। গতবার ক্ষমতায় আসার পর তৃণমূল সরকার লটারি তুলে দিয়ে নিলাম ব্যবস্থা চালু করে। অভিযোগ, নিলাম ব্যবস্থায় প্রমোটাররাই সুবিধা পাবে।
সাধারণ মধ্যবিত্তরা সেই জমির নাগাল পাবেন না।
নগর উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও জানিয়েছেন, তিনিও ব্যক্তিগতভাবে বসবাসের জমিতে লটারি ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে। শহরের বাসিন্দারা স্বাভাবিকভাবেই চাইছেন, জমি বিক্রিতে ফের লটারি ব্যবস্থা চালু করুক সরকার।
কল্যাণী, সল্টলেকের জমির চরিত্র প্রায় এক। প্রথমে এই জমি ৯৯ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হত। তখন জমির মালিকানা হস্তান্তর করা যেত না। ছিল জমি সংক্রান্ত হাজারো নিয়ম।
কল্যাণীর জমি ভূমি সংস্কার দফতরের অধীনে নয়। এখানকার জমি সংক্রান্ত যাবতীয় কাজকর্ম দেখভাল করে কল্যাণী এস্টেট ম্যানেজার। এমনকী, জমির মিউটেসনও এস্টেট ম্যানেজারের অফিস থেকেই হয়। বাম আমলের শেষ দিকে কল্যাণীর জমির ক্ষেত্রে বেশকিছু নিয়ম কানুন বদল করা হয়। লিজ প্রাপককে জমির পাকাপাকি মালিকানা যেমন দিয়ে দেওয়া হয়, তেমনই মালিকানা হস্তান্তরেও সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হয়। তার পর থেকে কল্যাণীর জমি নিয়ে প্রমোটারদের আগ্রহ তৈরি হয়।
ক্ষমতায় এসে তৃণমূল সরকারি জমি বিলি, বিক্রি ও বণ্টনের নিয়ম বদল করে। রাজারহাটে সরকারি জমি বণ্টন নিয়ে বাম আমলে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তৃণমূল সরকার লটারি পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ঠিক হয়, জমি বিলি করা হবে নিলাম পদ্ধতিতে।
অন্যান্য এলাকায় সমস্যা না থাকলেও কল্যাণীর জমি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। জমির চরিত্র অনুযায়ী কল্যাণী শহরকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। একদিকে বসবাসের জমি, এবং অন্যদিকে শিল্পের জমি। সেটি শিল্পাঞ্চল নামেই পরিচিত।
নিলামে জমি বিক্রির সিদ্ধান্তে চরম ক্ষুব্ধ কল্যাণীর বাসিন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, কল্যাণীতে প্রায় সব বাড়িই দো-তলা। ফলে শহরের আলাদা একটা চরিত্র রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, জমি নিলাম হলে তার দাম শুরু হবে বাজারদর থেকে। এবার নিলামে দাম চড়তেই থাকবে।
বাজার দরে নিলাম শুরু হলে এমনিতেই জমির দাম হবে বেশ চড়া। ফলে, তা সাধারণের নাগালের বাইরে চলে যাবে। সেই সুযোগ নেবে প্রমোটাররা। চারদিকে দো-তলা বাড়ির মধ্যে মাথা তুলে দাঁড়াবে বহুতল। ইতিমধ্যেই যা ঘটতে শুরু করেছে। শহরের বেশ কিছু এলাকাতে মাথা তুলছে বহুতল।
তাতে যে শুধু শহরের স্বাভাবিক সৌন্দর্য নষ্ট হবে তাই নয়, এলাকার বাড়িগুলির গোপনীয়তাও নষ্ট হবে। আশঙ্কা, এর সঙ্গে মাথাচারা দেবে সিন্ডিকেট রাজ। শহরের বাসিন্দারা এস্টেট ম্যানেজারের কাছে একাধিকবার বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘শিল্পের জমি নিলামে বিক্রি করা হোক। বসবাসের জমির ক্ষেত্রে বহাল রাখা হোক লটারির নিয়ম।’’ কিন্তু, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক্তিয়ার এস্টেট ম্যানেজারের নেই। এস্টেট ম্যানেজার খালিদ কাইসার বলেন, ‘‘বিষয়টি দফতররের উপর মহলের বিচারাধীন। ফলে যাবতীয় সিদ্ধান্ত সেখান থেকেই নেওয়া হবে।’’
নগর উন্নয়ন দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘কল্যাণীর বাসিন্দাদের সঙ্গে আমরা একমত। তাঁদের অভিযোগের গভীরতা রয়েছে। সাধারণ মানুষের বসবাসের এলাকায় প্রমোটার রাজ শুরু হোক, এটা কোনওভাবেই আমাদের কাম্য নয়।’’ তিনি জানান, তাঁদের লক্ষ্যই হল, ওই জমি মধ্যবিত্তদের নাগালের মধ্যে থাক। সরকার কিন্তু সেটাই চায়।
ফিরহাদ হাকিম মনে করেন, সরকারি ফ্ল্যাট যখন লটারির মাধ্যমে বিক্রি করা হচ্ছে, তখন বসবাসের জমি লটারি করে বিক্রি না করার কোনও কারণ নেই। কল্যানীর চরিত্র যখন আলাদা, তখন তার জন্য নিয়ম আলাদা হতেই পারে। তিনি বলেন, ‘‘লটারি বন্ধের সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভায় নেওয়া হয়েছিল। ফলে, সেই নিয়ম পরিবর্তন মন্ত্রিসভাতেই করতে হবে।’’ তিনি জানিয়েছেন, তাঁর দফতরও সেই চেষ্টা করছে।
কল্যাণীর বাসিন্দারা এখন সেই দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন।