হাওয়াবদলে গিয়েই বদলে গেল সব

পুরন্দরপুরের বিদায়ী প্রধান তৃণমূলের সখিনা খাতুন জানান, গত পাঁচ বছরে তিন বার দিঘা বেডাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কর্মীদের। উদ্দেশ্য, কর্মী-সমর্থকদের উৎসাহিত করা। সারা বছর খাটা-খাটনি গিয়েছে, তার উপরে ভোট মিটে যাওয়ায় এখন ফাঁকা সময়। তাই ১২৮ জনকে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৮ ০৮:১৫
Share:

মারিশদায় দুর্ঘটনায় দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া সেই গাড়ি। নিজস্ব চিত্র

দিপুদা!

Advertisement

ঘর থেকে পা বাড়িয়েই বাঙালির অত্যন্ত চেনা ঠিকানা দিঘা-পুরী-দার্জিলিং। সংক্ষেপে দিপুদা। তার পরে ছুটিতে, অবসরে কিংবা হাওয়া বদল করতে সেখানে কিছু দিন কাটিয়ে আসা। এখন অবশ্য বেড়াতে যাওয়ার গন্তব্য অনেক বেড়েছে। তাই বলে দিপুদাকে বাঙালি এখনও ব্রাত্য করে দেয়নি। ছেলেমেয়ের পরীক্ষার পাট চুকে গেলে কিংবা নিজে ছুটিছাটা পেয়ে গেলে সটান সমুদ্দুর কিংবা পাহাড়।

পঞ্চায়েত ভোট শেষ। এখনও বোর্ড গঠন হয়নি। এই মাঝের সময়টুকু বেছে নিয়ে নদিয়া-মুর্শিদাবাদের রাজনীতির কারবারি, ঠিকাদার ও পঞ্চায়েতের কর্মীদের অনেকেই বেরিয়ে পড়েছেন হাওয়া বদলে। ঠিক সে ভাবেই দু’টি বাস ও একটি বোলেরো গাড়িতে প্রায় ১২৮ জন তৃণমূলের কর্মী, প্রার্থীরাও মঙ্গলবার রাতে কান্দির পুরন্দরপুর থেকে রওনা দিয়েছিলেন দিঘার উদ্দেশে। পথে দুর্ঘটনায় ছ’জন মারা যান। তাঁদের মধ্যে পাঁচ জন তৃণমূলের নেতা ছাড়াও রয়েছেন গাড়ির চালক।

Advertisement

যদিও কান্দি ব্লক তৃণমূলের সভাপতি পার্থপ্রতিম সরকার জানান, কর্মীদের চাঙ্গা করতে তাঁদের বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কোনও কর্মসূচি নয় এটা। ইদের পরে প্রতি বছর পুরন্দরপুর পঞ্চায়েত এলাকার মানুষ বেড়াতে যান। এ বছরেও তাঁরা দু’টি বাসে করে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। তবে এত লোকের হোটেলে জায়গা হবে না আশঙ্কা করে ওই পাঁচ জন নেতাকেও তাঁরা সঙ্গে করে যাওয়ার কথা জানান। সেই মতোই তাঁরা গিয়েছিলেন। তবে তাঁদের মৃত্যুতে সাংগঠনিক দিক থেকে বড় ক্ষতি হয়ে গেল।

পুরন্দরপুরের বিদায়ী প্রধান তৃণমূলের সখিনা খাতুন জানান, গত পাঁচ বছরে তিন বার দিঘা বেডাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কর্মীদের। উদ্দেশ্য, কর্মী-সমর্থকদের উৎসাহিত করা। সারা বছর খাটা-খাটনি গিয়েছে, তার উপরে ভোট মিটে যাওয়ায় এখন ফাঁকা সময়। তাই ১২৮ জনকে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

ছবিটা আলাদা নয় পড়শি জেলা নদিয়াতেও। করিমপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতির জয়ী প্রার্থী কার্তিক মণ্ডল জুনের প্রথম সপ্তাহে বেড়াতে গিয়েছিলেন উত্তরবঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘ভোট মিটে যাওয়ার পরে বোর্ড গঠনের এখন দেরি আছে। তাই মাঝের সময়টুকু বেছে নিয়েছিলাম ঘুরতে যাওয়ার জন্য। আমার সঙ্গে বেশ কয়েক জন কর্মীও ছিলেন।’’

সম্প্রতি চাকদহের চান্দুরিয়া ১ পঞ্চায়েতের বাসিন্দা তথা নদিয়া জেলা পরিষদের সদস্য তীব্রজ্যোতি দাস-সহ চাকদহ পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রামপঞ্চায়েতের কয়েক জন সদস্য ভুটান থেকে ঘুরে এসেছেন। কান্দির মৃতদের পরিজনেরাও বলছেন, ‘‘বলেছিল, হাওয়া বদলে যাচ্ছে। চনমনে হয়ে ফিরে আসবে। এল তো নিথর দেব।’’

বৃহস্পতিবার দুপুরে কান্দির মৃত ছয় জনের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখা করে সমবেদনা জানান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। অধীর বলেন, “আমার সাথে রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু ওরা সকলেই আমার পরিচিত ও কাছের মানুষ। ওদের এ ভাবে হারাতে হবে, ভাবতেই পারছি না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন