পাল্টা দাওয়াই লাইনেই বুক বেঁধেছে বামেরা

পালাবদলের পরে তাদের একের পর দলীয় কার্য়ালয়ে তালা ঝুলিয়ে শাসক দল লটকে দিয়েছিল হুমকি— আর যেন এখানে না দেখি। পাড়া ছাড়া হয়ে তাদের বহু দলীয় কর্মী খুঁজেছেন ‘নিরাপদ আশ্রয়’।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:০৪
Share:

পালাবদলের পরে তাদের একের পর দলীয় কার্য়ালয়ে তালা ঝুলিয়ে শাসক দল লটকে দিয়েছিল হুমকি— আর যেন এখানে না দেখি। পাড়া ছাড়া হয়ে তাদের বহু দলীয় কর্মী খুঁজেছেন ‘নিরাপদ আশ্রয়’। জেতা পঞ্চায়েত এমনকী পুরসভাও বিকিয়ে গিয়েছে তৃণমূলের হাতে। এবং তা হয়েছে কার্যত বিনা প্রতিরোধে।

Advertisement

জোটের আবহে সেই সিপিএম-ই বিনা যুদ্ধে যে আর জমি ছাড়তে যে রাজি নয়, ইতিমধ্যেই দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় তার নজির মিলেছে। এত দিন যাদের চোখ রাঙানিতে সিঁটিয়ে থেকেছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা, এখন তাদেরই পাল্টা রাঙা চোখের সামনে কিঞ্চিৎ জড়োসড়ো দেখাচ্ছে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকদের। ভোট এগিয়ে আসতেই তাঁদের শরীরী ভাষাটাই পাল্টে গিয়েছে যেন।

কোথাও দেওয়াল মুছে দেওয়া, কোথাও বা ফ্লেক্স-পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার পাশাপাশি এ বার উঠে গেল তৃণমূল কর্মীদের পাল্টা পেটানোরও অভিযোগ। নদিয়ার বিভিন্ন জায়গায় ইতিমধ্যেই উঠেছে দেওয়াল মোছার অভিযোগ। কমিশনের কাছে নালিশ জানানোয় সিপিএম কর্মীরা হরিনঘাটায় তাচ্ছিল্য়ের গলায় পাল্টা জানিয়ে এসেছিলেন— ‘না হয়, ফের লিখে দেব দেওয়াল!’ মনে রাখতে হবে ঘটনাটি সেই হরিণঘাটা, যেখানে বছর আড়াই আগে ১০টির মধ্যে ৮টি পঞ্চায়েতে সিপিএম জিতলেও পরে সদস্য ভাঙিয়ে সব পঞ্চায়েতই দখল নিয়েছিল শাসক দল। সেখানেই, শাসক দলের খাসতালুক বলে পরিচিত নগরউখড়া বাজারে তাদের প্রার্থীর নাম লেখা দেওয়াল রাতারাতি চুনকাম করে দেওয়া হয়েছে। নগরউখড়া হাইস্কুলের সামনে তাদের ফ্লেক্সও ফালা-ফালা করে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে— বিডিও-র কাছে নালিশ ঠুকেছে তৃণমূল। এ বার ‘জাগছে’ নদিয়ারই অন্য প্রান্তের কৃষ্ণগঞ্জ। সিপিএমের এমনই দাবি। তাদের সিপিএমের বিরুদ্ধে শাসক দলের ‘মিথ্যে’ অভিযোগের বহর দেখে কিন্তু এমনটাই মনে করছেন সাধারণ মানুষ এমনকী জেলা প্রশাসনের কর্তারাও।

Advertisement

মঙ্গলবার বিকেলে প্রচার সেরে ফেরার পথে আক্রান্ত হয়েছিলেন কৃষ্ণগঞ্জের সিপিএম প্রার্থী মৃণাল বিশ্বাস। তারা মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে তৃণমূলের লোকজন বেধড়ক মারধর করেছিল বলে অভিযোগ। এ বার তারই পাল্টা ঘটনার অভিযোগ তুলল তৃণমূল। হাঁসখালি থানায় সিপিএমের বিরুদ্ধে তাদের নেতাদের মারধরের পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেছে শাসক দল। দুটো অভিযোগেরই তদন্তে নেমেছে পুলিশ।

কৃষ্ণগঞ্জ কেন্দ্র এত দিন শাসক দল সিপিএমকে কোন রকম ধর্তব্যের মধ্যে আনছিল না। কার্যত তাদের উপেক্ষাই করে এসেছে। সেই সিপিএমের বিরুদ্ধেই কিনা আজ তাদের পুলিশর কাছে মারধরের অভিযোগ জানাতে হচ্ছে। আর এ থেকেই কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে সিপিএমের বাড়বাড়ন্ত দ্রুত পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন তৃণমূলের নীচুতলার কর্মীরাও।

তৃমূলের যুব সংগঠণের ব্লক সভাপতি অজয় বিশ্বাস ও দক্ষিণপাড়া-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রক্তন উপপ্রধান সমীর জোয়াদ্দারকে মোটরবাইক থেকে নামিয়ে সিপিএমের লোকজন মারধর করেছে বলে বুধবার অভিযোগ করা হয়েছে থানায়। বারো জন সিপিএম নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগই দায়ের হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে আছেন হাঁসখালি পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা মিলন সিকদার, জোনাল কমিটির দুই সদস্য বিজন দেওয়ান ও জয়গোপাল বিশ্বাসও। কৃষ্ণগঞ্জের স্থানীয় তৃণমূল প্রার্থী সত্যজিৎ বিশ্বাস অবশ্য মনে করছেন, ‘‘সিপিএম মাটি হারাচ্ছে বুঝতে পেরেই মারধরের রাজনীতি শুরু করেছে।’’

এখন প্রশ্ন হল, দোর্দন্ডপ্রতাপ সত্যজিতের একেবারে ‘ডান হাত’কে রাস্তায় ধরে মারার সাহস সিপিএম পেল কি করে? কদিনও আগেও এই হাঁসখালি ব্লকে হাতে গোনা কয়েক জন ছাড়া তেমন কাউকে প্রকাশ্যে সিপিএমের কর্মসূচিতে দেখা যেত না। এমন কি ভোট ঘোষণার পরও সে ভাবে সিপিএম কর্মীদের রাস্তায় নামতে দেখা যাচ্ছিল না। সেই সিপিএম কিনা তৃণমূলের ব্লকের প্রথম সারির নেতাদের গায়ে হাত তুলছে? সিপিএমের জেলা কমিটির সম্পাদক সুমিত দে, ‘‘আমাদের নেতাদের বিরুদ্ধে এই মিথ্যা মামলা আবারও প্রমাণ করে দিল যে মানুষকে ভয় পাচ্ছে তৃণমূল।’’

তাহলে কি পুরনো দিন মনে করাচ্ছে সিপিএম? তৃণমূলের এক নেতা বলছেন, ‘‘ফল কী হবে জানি না, তবে সিপিএম যে সাহস পেয়ে গিয়েছে এটা তো বাস্তব!’’

কৃষ্ণগঞ্জের মতো সেই বাস্তবের খোঁজ করছে জোটের নেতারাও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement