আগাছায় ঢাকা পড়েছে যে দাওয়াটা, বছর কয়েক আগেও শীতের মিঠে রোদে পিঠ পেতে খবরের কাগজ নিয়ে বসতেন ওঁরা। পলেস্তারা খসে পড়া যে ঘরের সদর দরজার তালায় জং পড়েছে, এক সময় দরজা খোলার আগে থেকেই দাঁড়িয়ে থাকত অনেকেই। কোথাও তালা খোলে না দীর্ঘ দিন, কোথাও মাসে এক বা দু’দিন খুললেও পাঠকদের দেখা মেলে না সরকারি গ্রন্থাগারগুলিতে।
নদিয়া-মুর্শিদাবাদের অধিকাংশ সরকারি গ্রন্থাগারে কর্মী নেই। ফলে কবে যে তার তালা খোলে, জানতেও পারেন না পাঠকরা। অথচ মার্চ-এপ্রিলে পড়ুয়াদের পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলে সরকারি গ্রন্থাগারগুলিতে ভিড় লেগে থাকত। অভিভাবকদের আক্ষেপ, ‘‘এমনিতেই ছেলে-মেয়েরা বই বিমুখ। তার পরেও কেউ বই পড়তে চাইলে তা কবে মিলবে তা কেউ জানে না।’’
ডোমকল কিংবা কৃষ্ণনগরে ছবিটা একই রকম। জলঙ্গির কিশোর সঙ্ঘ, ফরিদপুর, খয়রামারী, রানিনগরের শ্যামদাসদেয়াড় ঝর্ণা সমিতি বা ডোমকল জনকল্যান পাঠাগার— সর্বত্র তালা বন্দি পাঠাগারে বইয়ের উপর ধুলোর আস্তরণ আরও পুরু হচ্ছে। যদিও বা কখনও সখনও দরজা খোলে, লন্ডভন্ড পাঠাগারে পছন্দের বই খুঁজে বের করাটা আরও ঝক্কির।
নদিয়ার অবস্থাটা আরও খারাপ। সরকারি হিসেবই বলছে, গত এক বছরে অন্তত ১০টি সরকারি গ্রন্থাগারের ঝাঁপ বন্ধ করে দিতে হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরেই গ্রন্থাগার দফতরে কোনও কর্মী নিয়োগ হয়নি।
মুর্শিদাবাদ জেলা গ্রন্থাগারের আধিকারিকেরা অবশ্য জানাচ্ছেন, সব গ্রন্থগারই সপ্তাহে অন্তত দু’দিন খোলার কথা। যদিও বাস্তবের ছবিটা ভিন্ন বলেই জানাচ্ছেন এলাকার বাসিন্দারা। একটা সময় ফরিদপুর ও খয়রামারি গ্রামীণ গ্রন্থাগার দুপুর থেকে গম গম করত। ওই গ্রন্থাগারের সভাপতি রেজাউল হকের কথায়, ‘‘এলাকায় পাঠক নেহাত কম নেই। কিন্তু পাঠাগারের দরজা না খুললে পাঠক আর আসবে কেন?’’
নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের জয়ঘাটা দেশপ্রাণ পাঠাগারে একজন গ্রন্থাগারিক ছিলেন। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁর মৃত্যুর পরে আর দরজা খোলেনি সেই পাঠাগারের। করিমপুরের কেচোয়াডাঙ্গা গ্রন্থাগার, দাড়েরমাঠ গ্রন্থাগারের অবস্থাও একই রকম। কেচোয়াডাঙ্গার প্রাণেশ সাহা বলছেন, “আগে টিম টিম করে সপ্তাহে দু-একদিন গ্রন্থাগার চালু থাকতো। মাস ছয়েক হল আর তালা খোলে না।’’