Teacher's Day 2023

বিনা পারিশ্রমিকে শিক্ষকতা ২৫ বছর, কষ্টে দিন কাটছে সোমনাথের, শিক্ষক দিবসে খোঁজ নেননি কেউ!

বর্তমানে শরীরে বাসা বেঁধেছে সংক্রমণ। আর সে ভাবে পড়াতে পারেন না সোমনাথ। ধীরে ধীরে যোগাযোগ হারিয়েছে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শান্তিপুর শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৩:০৪
Share:

শান্তিপুরের গৃহশিক্ষক সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা মঙ্গলবার পালন করলেন শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সম্মান জানানোও হল। কিন্ত এক শিক্ষকের কয়েক’শো ছাত্রছাত্রী থাকার পরেও তিনি রইলেন একা। শিক্ষক দিবসের মহাসমারোহের মধ্যেও তাঁর খোঁজ রাখেননি কেউ। দীর্ঘ ২৫ বছর এ পেশায় থেকেও বর্তমানে দিন কাটছে কষ্টে। তাঁর নাম সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি শান্তিপুরের এক গৃহশিক্ষক।

Advertisement

বর্তমানে শরীরে বাসা বেঁধেছে সংক্রমণ। আর সে ভাবে পড়াতে পারেন না সোমনাথ। ধীরে ধীরে যোগাযোগ হারিয়েছে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে। উচ্চ মেধা সম্পন্ন সম্ভ্রান্ত পরিবারের একমাত্র সন্তান সোমনাথের সম্বল বলতে ধুতি জোড়া, অন্যের দয়া দাক্ষিণ্যের খই, চিঁড়ে, মুড়ি। কয়েক’শো শিক্ষক তৈরি করেও নিদারুণ অর্থকষ্ট আর অনাহারে দিন কাটছে শান্তিপুরের এই শিক্ষকের। ভাগ্যক্রমে মাসে এক দিন জোটে ভাত। তাঁর সকল ছাত্রছাত্রীদের তালিকায় রয়েছে কয়েক’শো শিক্ষক ও অধ্যাপক। শিক্ষকদিবসেও তাঁর খোঁজ নেননি কেউ। সোমনাথ বলেন, “হয়তো পড়াশোনা শিখিয়েছি মূল্যবোধের শিক্ষা দিতে পারিনি, তাই তাঁদের আচরণ নিয়ে আর আক্ষেপ করার কিছু নেই।”

সোমনাথের বাবা ছিলেন ফরেন্সিক সাইন্স ল্যাবরেটরির প্রাক্তন জয়েন্ট ডিরেক্টর। তিনি নিজেও সাম্মানিক পদার্থবিদ্যায় স্নাতক। ১৯৮৯ সালে প্রথম বর্ষের পরীক্ষায় ৭২ শতাংশ নম্বর পেয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তৎকালীন সময়ে রেকর্ড করেন। বেশ কয়েকবার সরকারি চাকরির সুযোগ আসলেও নির্দ্বিধায় তা প্রত্যাখ্যান করেন। বাড়িতেই শুরু করেন বিজ্ঞানবিভাগের গৃহশিক্ষকতা। পদার্থবিদ্যায় তার নিগুঢ় জ্ঞান ক্রমেই তাঁর খ্যাতি এনে দেয়। উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে ছাত্র সংখ্যা। তাঁর অসংখ্য ছাত্র দেশ জুড়ে একাধিক সরকারি পদে কর্মরত। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমনাথের আদি বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের ধাত্রীগ্রামে। বাবার চাকরির সূত্রে প্রথমে শান্তিপুর আসা। পরবর্তীতে বাবা কলকাতার বিজ্ঞান গবেষণাগারে সহকারী বিজ্ঞানী হিসেবে কাজে যোগদান করলে পাকাপাকি ভাগে শান্তিপুরে থেকে যান তাঁদের পরিবার।

Advertisement

এই পরিবারের একমাত্র সন্তান সোমনাথ। সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান হয়েও বাবার ইচ্ছায় গ্রামের নিম্ন বুনিয়াদী প্রাথমিক বিদ্যালয় পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। সোমনাথ বলেন, “শিক্ষাজীবনে কখনও দ্বিতীয় হননি। মাধ্যমিকের ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী আমাকে পুরস্কৃত করেছিলেন।” কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যায় স্নাতক স্তরে নজরকাড়া ফল করেন। ভাগ্যের পরিহাসে বাবা-মা দু’জনই অসুস্থ হওয়ার পর, পড়াশোনার পাঠ গুটিয়ে শান্তিপুরে ফিরে আসেন সোমনাথ। সেখানেই শুরু করেন গৃহশিক্ষকতা। তাঁর পড়ানোর ধরনে দূরদূরান্ত থেকে আসতে শুরু করে ছাত্রছাত্রীরা। এলাকার প্রবীন বাসিন্দারা জানান, এক সময় প্রচলিত ছিল কল্যাণী থেকে কৃষ্ণনগর যেখানেই বিজ্ঞানের ভাল ছাত্র দেখবেন, ধরে নেবেন সে সোমনাথের ছাত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন