ডালে বসে তিনটে পাখি। আরও দুটো পাখি উড়ে এসে বসল সেই ডালে।
শিক্ষিকা জানতে চাইলেন, ‘এ বার তাহলে ক’টা পাখি হল?’
সমস্বরে উত্তর এল, ‘পাঁচটা, পাঁচটা।’
এ বার তিনটে পাখি উড়ে গেল।
ফের গমগম করে উঠল ক্লাসরুম, ‘দু’টো, দুটো।’
এমন পাখি-পড়ার বহরে মুচকি হাসছেন শিক্ষিকা স্বপ্না সরকার মৃধা, ‘‘কেমন বুঝছেন? আগে এইটুকু শেখাতেই কালঘাম ছুটে যেত!”
পড়ুয়াদের কাছে পাঠ্য বিষয় আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলতে এ ভাবেই পড়ানো শুরু করেছেন চাকদহের চালিতাপালি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। নিজেদের টাকায় তাঁরা প্রজেক্টার কিনেছেন। সাদা কাপড় দিয়ে তৈরি ‘স্ক্রিন’ টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রথম শ্রেণির দেওয়ালে। তৈরি হয়েছে ‘স্মার্ট ক্লাস রুম’। স্কুলে আর বই নিয়ে আসার দরকার পড়ছে না প্রথম শ্রেণির পড়ুয়াদের। তাদের কথায়, ‘‘জানো তো, আমরা এখন স্কুলে কত্ত ছবি দেখি!’’
বইয়ের প্রতিটি পাতা স্ক্যান করে রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্টিল ও ভিডিও ছবি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে সিডি। অন্তর্জাল খুঁজে বের করা হয়েছে সেই সব ছবি। আর প্রতিদিন সেই প্রথম শ্রেণির ক্লাস হচ্ছে সেই সিডি ব্যবহার করে। মাস কয়েক ধরে ধরে প্রথম শ্রেণির পাশাপাশি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পরিবেশবিদ্যাও পড়ানো হচ্ছে ওই প্রজেক্টারের মাধ্যমে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুমন দাস বলছেন, “আমরা চাইছি পড়ুয়াদের যেন আর ভারী ব্যাগ বইতে না হয়। তা ছাড়া ছবি দেখিয়ে পড়ালে বাচ্চাদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ও বাড়ে। বেড়েছে পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার।” তিনি জানান, অন্যান্য ক্লাসেও এই ব্যবস্থা চালু করা হবে।
চাকদহের এই স্কুলে প্রজেক্টারের মাধ্যমে পড়ানোর বিষয়টি যথেষ্ট সাড়া ফেলেছে প্রশাসনিক মহলে। জেলার সর্বশিক্ষা মিশনের প্রকল্প আধিকারিক সচ্চিদানন্দ বন্দোপাধ্যায় বলেন, “ওই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা যা করেছেন সেটা একটা দৃষ্টান্ত। জেলার আরও কয়েকটা স্কুল এই পদ্ধতিতে পড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে।”
স্কুলে পড়ুয়া রয়েছে ১৫৪ জন। শিক্ষক ও শিক্ষিকার সংখ্যা ৬ জন। বছর খানেক আগে তাঁরা একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল, কী ভাবে আরও সহজ করে ছাত্রছাত্রীদের পড়ানো যায়। প্রধান শিক্ষক জানান, প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে তাঁরা দেখেন খুদেদের পড়ানোর জন্য নানা রকম ভিডিও ও স্টিল ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে। তখন তাঁদেরও মনে হয়, পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কোনও সিডি তৈরি করলে কেমন হয়!
তার পরেই ছবি ও ভিডিও জোগাড় করে তৈরি হয় সিডি। কিন্তু দেখানো হবে কী করে? প্রজেক্টার কোথায়? তখন এগিয়ে আসেন শিক্ষক-শিক্ষিকারাই। নিজেরাই টাকা তুলে কিনে ফেলেন প্রজেক্টার। তবে কেবলমাত্র প্রথম শ্রেণির ঘরেই ‘স্ক্রিন’ থাকায় অন্য ক্লাসের পড়ুয়াদের সেখানে নিয়ে
আসতে হয়। স্কুলের ছাত্র সংসদের প্রধান মন্ত্রী চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী মৌপ্রিয়া পাল বলছে, “এখন পরিবেশ বিদ্যা আমরা অনেক সহজেই বুঝতে পারছি। যদি সব বিষয়ই এ ভাবে পড়ানো হয় তা হলে খুব ভাল হয়।’’