সাত ঘণ্টা বিদ্যুৎ উধাও, হাঁসফাঁস হাসপাতালে বিকোল দেদার পাখা

টানা সাড়ে সাত ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকল জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতাল। সোমবার সকাল থেকে প্রায় অন্ধকারে ডুবে থাকল প্রসূতি ও শিশু- সহ একাধিক বিভাগ। প্রচণ্ড গরমে নাস্তানাবুদ হলেন চিকিৎসাধীন প্রায় সাড়ে তিনশো রোগী। আর এই ‘মওকা’ বুঝে হাত পাখা নিয়ে হাসপাতালে হাজির হন শ্যাম মার্ডি নামে এক যুবক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৬ ০১:১৮
Share:

ভরসা হাতপাখা। জঙ্গিপুর হাসপাতালে তোলা নিজস্ব চিত্র।

টানা সাড়ে সাত ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকল জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতাল। সোমবার সকাল থেকে প্রায় অন্ধকারে ডুবে থাকল প্রসূতি ও শিশু- সহ একাধিক বিভাগ। প্রচণ্ড গরমে নাস্তানাবুদ হলেন চিকিৎসাধীন প্রায় সাড়ে তিনশো রোগী। আর এই ‘মওকা’ বুঝে হাত পাখা নিয়ে হাসপাতালে হাজির হন শ্যাম মার্ডি নামে এক যুবক। মুহূর্তের মধ্যে উধাও হয়ে যায় সেই পাখা।

Advertisement

ফুলশহরি গ্রামের সামায়ুন শেখের স্ত্রী হাসপাতালে ভর্তি আছেন চার দিন ধরে। এ দিন ক্ষুব্ধ সামায়ুন বলেন, “আমি চিকিৎসকের কাছে ছুটি চেয়েছি। আলো নেই, পাখা বন্ধ। এত গরমে হাসপাতালে থাকলে তো আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে। কিন্তু চিকিৎসক ছুটি দিতে চাননি।”

সদ্যোজাত নাতি ও মেয়েকে নিয়ে রেহেনা বিবির তখন নাজেহাল অবস্থা। ফোন করে বাড়ির লোকজনকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে বলছেন। রেহেনার কথায়, ‘‘শহরের হাসপাতালে এই অব্যবস্থা দেখার কেউ নেই? ট্রান্সফর্মার খারাপ, জেনারেটর খারাপ। মহকুমা শহরে চেষ্টা করলে বিকল্প ব্যবস্থা নিশ্চয় করা যেত। কিন্তু কেউ এ ব্যাপারে উদ্যোগী হননি। সাত ঘণ্টা অন্ধকারে কাটানোর যে কী যন্ত্রণা তা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম।’’

Advertisement

এ দিন সমস্ত অস্ত্রোপচার বন্ধ করে দেওয়া হয়। ব্লাড ব্যাঙ্কের রক্ত বাঁচাতে বাইরে থেকে বরফ কিনে আনেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একাধিক রোগীকে রেফার করে দেওয়া হয় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে। হাসপাতালে জেনারেটরের ব্যবস্থা থাকলেও সেটাও বিকল হয়ে যাওয়ায় তা কাজে আসেনি বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।

অভিযোগ, পাশেই বন্ধ হয়ে থাকা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে আলো জ্বললেও সেখান থেকে বিকল্প লাইনের ব্যবস্থা করার কোনও চেষ্টাই করা হয়নি এ দিন। অসহ্য গরমে চিকিৎসক, নার্সদেরও নাজেহাল হতে হয়। বাইরে বেরিয়ে আসেন জরুরি বিভাগের কর্মীরাও।

পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৫০ কিলো ভোল্টের ট্রান্সফর্মার বসানো রয়েছে ওই হাসপাতালে। সেখান থেকে গোটা হাসপাতাল ছাড়াও হাসপাতালের সমস্ত আবাসনে বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। এই মুহূর্তে হাসপাতাল ও আবাসনে বাড়তি অন্তত ৪০টি এসি মেসিন চলছে। তাই এত ‘লোড’ সামলাতে পারছে না ওই ট্রান্সফর্মার। তাতেই ট্রান্সফর্মারের কেবল পুড়ে এই বিভ্রাট ঘটে রবিবার গভীর রাতে। তখন পরিস্থিতি সামলাতে চালানো হয় হাসপাতালের ভাড়া করা জেনারেটর। কিন্তু পরের দিন সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। তারপরেই এই বিপত্তি।

অভিযোগ, সোমবারই প্রথম নয়, জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে এমন ঘটনা হামেশাই ঘটছে। এ দিন বেলা আড়াইটে নাগাদ কোনও রকমে কেবলের তার সংযোগ করে চালানো হয় ট্রান্সফর্মারটি। কিন্তু যে কোনও মুহূর্তে সেটিও বিকল হতে পারে বলে হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আনারুল হককে জানিয়েও দিয়েছে বিদ্যুৎ দফতর।

আনারুল বলেন, “বিদ্যুৎ দফতর জানিয়েছে ৫০০ কিলো ভোল্ট ট্রান্সফর্মার ছাড়া হাসপাতাল চত্বরে থাকা এই বিপুল এসি মেসিনের লোড সামাল দেওয়া সম্ভব নয়।” হাসপাতালের মধ্যেই ১০০০ কিলো ভোল্টের একটি ট্রান্সফর্মার রয়েছে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের জন্য। ওই হাসপাতালে বর্তমানে কোনও কাজ হয় না। সেক্ষেত্রে ওই ট্রান্সফর্মারকে কাজে লাগালে অস্থায়ী ভাবে এই সমস্যা মেটানো সম্ভব বলে হাসাপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে।

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভাশিস সাহা বলছেন, ‘‘সময়ে জানতে পারলে একটা কিছু বিকল্প ব্যবস্থা নিশ্চয় করা যেত। কেন এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গেল না আমি তার ব্যাখ্যা চাইব ভারপ্রাপ্ত সুপারের কাছে।”

ভারপ্রাপ্ত সুপার সুব্রত মাঝিকে এ দিন একাধিক বার ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। জবাব মেলেনি এসএমএসেরও। হাসপাতালের সুপার শাশ্বত মণ্ডল ছুটিতে রাজ্যের বাইরে। তিনি বলেন, “হাসপাতালের একাধিক জেনারেটর রয়েছে। সরকার তার ভাড়া দেয়। সেগুলিও চো চালানে যেতে পারত। মঙ্গলবার ফিরে এ ব্যাপারে যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা নেব।”

তবে সারদিঘির বন্যেশ্বর গ্রামের পাখা বিক্রেতা এ দিন রঘুনাথগঞ্জ শহরেই এসেছিলেন পাখা বিক্রি করতে। তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালে এমন অব্যবস্থা মোটেই ভাল জিনিস নয়। তবে ভাগ্যিস সময় মতো এই খবরটা আমি পেয়েছিলাম। সত্যি কথা বলতে, দশ দিনের পাখা এক দিনেই বিক্রি করেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন