পাতে ভড়ুই। বহরমপুরে এক হোটেলে। —নিজস্ব চিত্র।
শীতের আমেজ পড়তে না পড়তেই ফের শুরু হয়ে গিয়েছে ভড়ুই মেরে খাওয়া। বিভিন্ন এলাকায় ভড়ুই পাখি ধরে খোলা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, ভড়ুইয়ের মাংস বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ধাবা আর হোটেলে। যদিও বন দফতরের দাবি, তাদের কাছে এমন খবর নেই।
বৃহস্পতিবার সকালে বেলডাঙার কাজি শাহ মোড়ে ভড়ুই পাখি বিক্রির খবর পেয়ে পুলিশ হানা দিয়েছিল। কিন্তু তার আগেই বিক্রেতা পালিয়ে যায়। বেলডাঙা থানার ওসি সমিত তালুকদার বলেন, ‘‘কিছু দিন ধরেই ভড়ুই পাখি বিক্রি হচ্ছে বলে শুনেছি। এ দিন পুলিশ গিয়েও বিক্রেতাকে ধরতে পারেনি। তবে এখন থেকে নিয়মিত নজরদারি চালানো হবে।’’
বন্যপ্রাণ আইন অনুযায়ী ভড়ুই পাখি ধরা ও বিক্রি করা নিষিদ্ধ। গত বছর শীতে বেলডাঙা থানার পুলিশ ছ’জনকে গ্রেফতার করেছিল। উদ্ধার হয়েছিল হাজার দুয়েক ভড়ুই। আবার বহরমপুর বন দফতর বিভিন্ন জায়গায় হানা দিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার ভড়ুই উদ্ধার করে ছেড়ে দেয়। তার মধ্যে খাগড়াঘাট স্টেশন লাগোয়া বাজারে একটি ম্যাজিক ভ্যানের মধ্যে থেকে প্রায় আড়াই হাজার ভড়ুই পাওযা যায়। তা বাজেয়াপ্ত করে এক জনকে গ্রেফতার করেছিলেন বনকর্মীরা।
এ বছর কিন্তু এখনও পর্যন্ত বন দফতর বা পুলিশের তেমন টনক নড়েনি। বহরমপুর বন দফতরের রেঞ্জার অমিতাভ পাল জানান, গত বছর টানা অভিযান চালিয়ে ধরপাকড় করা হয়েছিল। এ বছর এখনও তা শুরু হয়নি। তবে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে নিয়মিত অভিযান চালানো হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
বেলডাঙার এক ভড়ুই বিক্রেতা জানান, মাঠে এখনও ধান রয়েছে। ফলে রাতের অন্ধকারে মাঠের মধ্যে জাল ফেলে রাখা যাচ্ছে না। তা সত্ত্বেও ধানখেতে ভড়ুইয়ের ঝাঁক মাঠে নামছে এবং জালে অল্পবিস্তর ধরাও পড়ছে। পরে বিভিন্ন হোটেল ও ধাবায় ডজন দরে সে সব বিক্রি করা হচ্ছে। এখন এক ডজন ভড়ুইয়ের দর চলছে আড়াইশো টাকা।
তবে এখন বিক্রেতারা কৌশল বদলে ফেলেছে। খোলা বাজারে বিক্রি করলে ধরা পড়ার ভয় রয়েছে, তাই ফোনে আগাম অর্ডার নিয়ে বাড়িতে কেটে-ছাল ছাড়িয়ে ধাবা ও হোটেলে পৌঁছে দিচ্ছে বিক্রেতারা। ভড়ুইয়ের পাশাপাশি দেদার বিক্রি হচ্ছে চাহা পাখিও। তার দর ডজনে ৩০০ টাকা।
বহরমপুরে রাস্তার ধারের বিভিন্ন হোটেল ও ধাবায় রান্না করা একটা ভড়ুই ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া এক ধাবা মালিকও জানান, ভড়ুই পাখির মাংস ৪০ টাকা। চাহা পাখিও পাওয়া যায়, একটা ৫০ টাকা। শীতে যে সমস্ত পরিযায়ী পাখি আসে, চাইলে তা-ও পাওয়া যেতে পারে। তবে আগাম জানাতে হবে। দাম পড়বে এক-একটা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।
পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের চোখ কবে খুলবে?