এ কেমন প্রহসন! নিখোঁজ বাহিনী

কমিশনের এক কর্তা বলছেন, ‘‘সব দিক বিবেচনা করে স্থির করা হয়েছিল, যে সব ভোট-কেন্দ্রে চারটির বেশি বুথ রয়েছে, সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়া হবে না। তা সামলাবে রাজ্য পুলিশই।’’

Advertisement

বিমান হাজরা ও সামসুদ্দিন বিশ্বাস

বহরমপুর শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৩৮
Share:

তাদের দেখা নেই: দেখা মিলল না কেন্দ্রীয় বাহিনীর। বুথে ছিল শুধুই রাজ্য পুলিশ। বহরমপুর বিটি কলেজের বুথে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

জংলা পোশাকে উর্দিধারীরা গ্রাম-শহরের রাস্তায় রুট মার্চ শুরু করতেই বিরোধী প্রার্থীদের কেউ বা অস্ফূটে বলেই ফেলেছিলেন, ‘‘ওঁরা এসে গিয়েছেন (কেন্দ্রীয় বাহিনী), এ বার ভোট হবে অন্যরকম।’’

Advertisement

সে আশায় যে ছাই পড়েছিল ভোটের সন্ধেতেই কবুল করেছিলেন বিরোধীরা। বাহিনীর এমন ‘ব্যবহারের’ মাঝেই সোমবার চতুর্থ দফার নির্বাচনে মুর্শিদাবাদের সব কেন্দ্রেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হবে বলে জানিয়েছিলেন জেলা নির্বাচনী আধিকারিক পি উলাগানাথন। কিন্তু ছবিটা যে এক্কেবারে উল্টো বেলা গড়ালেই মালুম হল। কেন?

কমিশনের এক কর্তা বলছেন, ‘‘সব দিক বিবেচনা করে স্থির করা হয়েছিল, যে সব ভোট-কেন্দ্রে চারটির বেশি বুথ রয়েছে, সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়া হবে না। তা সামলাবে রাজ্য পুলিশই।’’ ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে, কটাক্ষ বিরোধীদের।

Advertisement

বহরমপুরের বিটি কলেজে বুথ রয়েছে ৬টি। পাহারা বলতে ৮ জন সশস্ত্র রাজ্য পুলিশের কনস্টেবল ও একজন এসআই। ভোট শুরু হতেই কংগ্রেসের ৬ জন এজেন্টকে তৃণমূলের লোকজন পুলিশের সামনেই বুথ থেকে বের করে দেয় বলে কংগ্রেসের অভিযোগ। সেই সুযোগে তৃণমূলের কর্মীরা বুথে ঢুকে ছাপ্পা দিতেশুরু করে দেয়। ঘড়িতে তখন সোয়া সাতটা। খবর পেয়ে ছুটে আসেন কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরী। তাঁদের চাপে পড়ে আটক করা হয় বহিরাগত এক জনকে। কংগ্রেস সমর্থকারে ফিরে যেতেই পুলিশ ওই যুবককে ছেড়ে দেয়। কৃষ্ণনাথ কলেজ স্কুলেও প্রহরায় সেই রাজ্য পুলিশ। সেখানেও কংগ্রেসের ৬ জন এজেন্টকে বের করে দেওয়া হয়। ফের দলবল নিয়ে অধীরের প্রত্যাবর্তন। অধীর নিজেই তাড়া করে এক জন ধরে ফেলে। পুলিশের হাতে তুলে দিলেও অধীর ফিরতেই এ বারও পুলিশের হাত থেকে ওই যুবককে ছাড়িয়ে নিয়ে যায় তৃণমূল সমর্থকেরা।

লিপিকা মেমোরিয়াল গার্লস হাইস্কুলেও ৭টি বুথের সব কটিতেই রাজ্য সশস্ত্র পুলিশ ছিল নামমাত্র এক জন করে। চুঁয়াপুর বালিকা বিদ্যানিকেতনে ৩টি বুথে পাহারায় ছিল এক জন সশস্ত্র হোমগার্ড। কাশীশ্বরী গার্লস হাইস্কুল। মহিলা পরিচালিত ৪টি বুথ। এখানে বরাদ্দ ছিল জনা ছয় মহিলা পুলিশ মাত্র। বহরমপুর, বেলডাঙা, গোকর্ণ, কান্দি— ছবিটা প্রায় সর্বত্র এক।

কেন তা হলে গাল ভরা প্রতিশ্রুতি? জেলা নির্বাচনী আধিকারিক পি উলাগানাথন বলছেন, ‘‘আমি যা বলার কমিশনের নির্দেশ মেনেই বলেছি। এ দিনও যা করা হয়েছে কমিশনের নির্দেশ মেনেই। এর বেশি কিছু বলব না।’’ আর তাই কোথাও বুথ জ্যাম, কোথাও ছাপ্পা কোথাও বা প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘোরাঘুরি— চলল অবাধে। আর থেকেও অদৃশ্যই থাকল কেন্দ্রীয় বাহিনী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন