সত্যজিতের ছায়া, রূপালী তুরুপের তাস

যে রানাঘাট কেন্দ্র নিয়ে টানটান লড়াইয়ের সম্ভাবনা, সেখানে বিদায়ী সাংসদের পরিবর্তে নিহত বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসের স্ত্রীকে প্রার্থী করে বড় চমক দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রানাঘাট শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৯ ০৩:০৫
Share:

রানাঘাট কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী হওয়ার পরে বাড়িতে রূপালী বিশ্বাস। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

যে রানাঘাট কেন্দ্র নিয়ে টানটান লড়াইয়ের সম্ভাবনা, সেখানে বিদায়ী সাংসদের পরিবর্তে নিহত বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসের স্ত্রীকে প্রার্থী করে বড় চমক দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

সবে মাসখানেক আগে খুন হয়েছেন যুব তৃণমূল সভাপতি তথা মতুয়া নেতা সত্যজিৎ। সেই স্মৃতি এখনও মানুষের মনে টাটকা। সেই ভাবাবেগ কাজে লাগাতেই সত্যর স্ত্রী রুপালী বিশ্বাসকে প্রার্থী করা হল, এমনটাই মনে করছেন বিরোধীরা। বিশেষ করে বিজেপি বিপাকে পড়তে বাধ্য। কারণ তারা যে মতুয়া ভোটের উপরে অনেকখানি নির্ভর করছে, তা টেনে নিতে পারেন মতুয়া রূপালী। দ্বিতীয়ত, রানাঘাটে তাদের যুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জগন্নাথ সরকারকে এই খুনের মামলাতেই সদ্য জেরা করেছে সিআইডি।

রানাঘাট কেন্দ্রে মতুয়া ভোট এ বার নির্ণায়ক হয়ে যেতে পারে। নাগরিকত্ব বিল থেকে শুরু করে পুলওয়ামা-পরবর্তী সময়ে উসকে ওঠা ভাবাবাগ ব্যবহার করে ভোটারদের মনে জায়গা পাকা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি, বিশেষ করে ও পার বাংলা থেকে আসা হিন্দুদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করতে তারা মরিয়া। এত দিন তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক বলে পরিচিত মতুয়াদের ভোটেও তারা থাবা বসাতে চেষ্টা করছে। এই অবস্থায় কোনও দিন রাজনীতি না করা, সদ্য স্বামীহারা, দেড় বছরের সন্তানের মা রূপালীকে এগিয়ে দেওয়া ‘মাস্টার স্ট্রোক’ বলেই মনে করছেন তৃণমূলের জেলা নেতাদের একটা বড় অংশ।

Advertisement

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ওই নেতাদের মতে, এতে দলের ভিতরকার গোষ্ঠী কোন্দলও অনেকটা সামাল দেওয়া গিয়েছে। কারণ, এ ছাড়া যাঁকেই প্রার্থী করা হতো তাঁর বিরুদ্ধেই অন্য গোষ্ঠীর কলকাঠি নাড়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছিল। তাপস মণ্ডলকে নিয়েও তৈরি হয়েছিল বিস্তর সমস্যা। এই কেন্দ্রের কয়েক জন বিধায়কের সঙ্গে তাঁর ‘মধুর’ সম্পর্কের কথা স্বয়ং নেত্রীর কানে গিয়েছিল। এই কঠিন বাজারে তাই তাঁকে প্রার্থী করাটা ঝুঁকির হয়ে যেত বলে মনে করছিলেন জেলা নেতাদের একটা অংশ। তাঁরাও ভিতরে-ভিতরে তাপস মণ্ডলকে চাইছিলেন না। রূপালীকে প্রার্থী করে দলনেত্রী সেই সব গোলমালের সম্ভাবনায় জল ঢেলে দিলেন।

এর আগে রূপালীর নাম জেলা নেতাদের মধ্যে থেকে দু’এক বার উঠে এলেও তেমন জোরালো ভাবে সামনে আসেনি। বরং তাঁকে কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে উপ-নির্বাচনে তাঁকে প্রার্থী করা হতে পারে বলে জল্পনা চলছিল। এ দিন দলনেত্রী রূপালীর নাম ঘোষণা করতে অনেকেই চমকে যান। যদিও আগের রাতেই জেলার কোনও-কোন নেতার কাছে খবর ছিল, যে এমনটা হতে পারে।

রূপালী প্রার্থী হওয়ায় কিন্তু খুশি সাধারণ কর্মীরা। তাঁর নাম ঘোষণা হওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে দেওয়াল লেখা হয়ে যায়। নিচুতলার কর্মীরা অনেকেই মনে করছেন, রুপালীকে দিয়েই জোর ধাক্কা দেবেন বিজেপিকে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের দাবি, “নেত্রীর পছন্দের প্রার্থীকে আমরা বিপুল ভোটে জিতিয়ে আনব।”

মঙ্গলবার রাতে টেলিফোনের ও পারে হতাশা ঝরে পড়ে বিদায়ী সাংসদ তাপস মণ্ডলের গলায়। যদিও তিনি বলছেন, “নতুন প্রার্থীকে স্বাগত। আমরা সকলে মিলে তাঁকে আরও বেশি ভোটে জিতিয়ে নিয়ে আসব।”

তৃণমূলের এই ‘মাস্টার স্টোকে’ কতটা বিব্রত বিজেপি? বিশেষ করে দক্ষিণ জেলা সাংগঠনিক সভাপতি তথা প্রার্থিপদের অন্যতম দাবিদার জগন্নাথ নিজেই যখন সিআইডির জেরায় অস্বস্তিতে। জগন্নাথ দাবি করেন, “এ বারের ভোট তৃণমূলের অত্যাচারের বিরুদ্ধে আর মোদীর উন্নয়নের পক্ষে। অন্য কোনও হিসেব খাটবে না।” তাঁর দাবি, “রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্ক না থাকা এক জন প্রার্থী হওয়ায় আমরাই এগিয়ে থাকলাম।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন