গড়ের সিরাজ কে?
general-election-2019-west-bengal

জিতলে এক লক্ষ, হারলে গাছপাঁঠা

যুযুধান দুই বন্ধু স্পষ্ট বলছেন, ‘‘কোনও মজা-টজা নয় রে বাবা। বাজি বাজি-ই!’’

Advertisement

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস ও সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

ডোমকল ও বেলডাঙা  শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৯ ০১:৩১
Share:

বাজির চুক্তিপত্র: নিজস্ব চিত্র

তাপমাত্রার পারদ ৪২ ডিগ্রি ছুঁইছুঁই। মাথার উপরে ঢিমেতালে একটা পাখা ঘুরছে। কিন্তু সে হাওয়া অনেকটা ভোটের হাওয়ার মতোই। কোন দিকে বইছে, মালুম হচ্ছে না। আচমকা সেই জটলা থেকে উড়ে এল

Advertisement

—রাখো তোমার বুথ-ফেরত সমীক্ষা। বিজেপি এখানে চারে। মুর্শিদাবাদে জিতছে তৃণমূলের আবু তাহের খান।

—সে গুড়ে বালি! মানুষ এ বার ভোট দিতে পেরেছে। জিতবে আবু হেনা। নামের আগে এমপি বসানো স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।

Advertisement

আড্ডা গড়ায় তর্কে। তর্ক গড়ায় বাজিতে। তা-ও আবার নওদার মতো গাছপাঁঠা কিংবা নধর পাঁঠা নয়, এক্কেবারে এক লাখ টাকা!

ডোমকলের সেই আড্ডায় তখনও অনেকে মুখ টিপে হাসছেন, ‘‘কত? এক লাখ! ধুস, মজা করছে!’’

যুযুধান দুই বন্ধু স্পষ্ট বলছেন, ‘‘কোনও মজা-টজা নয় রে বাবা। বাজি বাজি-ই!’’

শুরু হল দৌড়ঝাঁপ। রেজিস্ট্রি অফিস থেকে আনা হল দশ টাকার স্ট্যাম্প পেপার। ডাকঘর থেকে এল রেভিনিউ স্ট্যাম্প। স্টুডিয়োতে গিয়ে দুই বন্ধু টোটন বিশ্বাস ও মিন্টু মণ্ডল নিজেদের পাসপোর্ট সাইজ ছবি তুলে আনলেন। ছবি সাঁটানো হল স্ট্যাম্প পেপারে। দলিল লেখক ডেকে লেখানো হল যাবতীয় শর্তাবলী। সেখানে সই করলেন দুই বন্ধু। সই করলেন সাক্ষীরাও। একেবারে পাকা কাজ। সেই দু’টো পাতার প্রতিলিপি দেওয়া হয়েছে সাক্ষী-সহ দুই বন্ধুকেও।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

তৃণমূলকর্মী টোটনের বাড়ি ডোমকলের ঘোড়ামারায়। আর কংগ্রেসকর্মী মিন্টু মণ্ডলের বাড়ি ডোমকলের রমনা এতবারনগরে। এক সময় দু’জনেই একসঙ্গে রাজনীতি করতেন। কিন্তু বছরখানেক আগে টোটোন তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। মিন্টু পুরনো দলেই থেকে গিয়েছেন। তাঁরা প্রায়ই একসঙ্গেই আড্ডা দেন ডোমকলে। সেই আড্ডাতেই এই বাজি।

টোটোনের কথায়, ‘‘মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে কে জিতবে তা নিয়ে অনেক দিন ধরেই জল্পনা চলছে। সেই জল্পনায় ঘি ঢেলেছে বুথ-ফেরত সমীক্ষা। তবে আমার মনে হয়েছে আমাদের প্রার্থী আবু তাহের খানই জিতবেন। আর সেই কারণেই বাজিও ধরেছি লাখ টাকা।’’

আর মিন্টুর দাবি, ‘‘এর আগের ভোটে ডোমকলের মানুষকে ভোট দিতে দেয়নি ওরা। ওদের কেন ভোট দেবেন মানুষ? বলতে পারেন, আমাদের প্রার্থী জিতে বসে আছে!’’ তবে দু’জনেরই দাবি, ‘‘বাজির টাকা এলাকার উন্নয়নে খরচ করা হবে। আর হেরে গেলে যত কষ্টই হোক টাকা দিয়ে দেব। জবান জবান। নড়চড় হবে না।’’ বাজির মূল দলিলটা রাখা হয়েছে স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর সিন্দুকে।

ডোমকলের মতো লাখ টাকা না হলেও নওদার উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী সাহিনা মমতাজ বেগমকে নিয়েও চলছে বাজি ধরা। তবে সে বাজি একলাখি নয়। জিতলে নধর পাঁঠা, আর হেরে গেলে গাছপাঁঠা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন