তাহেরপুরে নরেন্দ্র মোদী। বুধবার। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
নেতাজি পার্কে যতদূর চোখ যায় শুধু মানুষের মাথা। একটু পর-পরই চার দিক কাঁপিয়ে সেই বিপুল জনতা ‘জয় শ্রী রাম’ আর ‘মোদী-মোদী’ স্লোগান তুলছে। বুধবারের এই ভিড় আগামী ২৯ তারিখ ইভিএমে আছড়ে পড়বে, এই আশায় রাজ্য ও নদিয়া বিজেপির তাবড় নেতাদের মুখে হাসি চওড়াতর।
সাম্প্রতিককালে সেই অর্থে বড় কোনও রাজনৈতিক নেতা বা মন্ত্রীর সভা দেখেনি তাহেরপুরের মতো ছোট শহর। এর আগে কৃষ্ণনগরে দু’বার সভা করে গেলেও রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে এটিই নরেন্দ্র মোদীর প্রথম সভা।
বেলা বারোটার পর থেকেই বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রেকার, লরি, ম্যাটাডোরে চেপে লোক এসেছে সভায়। বৈশাখের জমি-ফাটানো রোদের মধ্যে ঠায় অপেক্ষা করেছেন মানুষ। কিছু ক্ষণের মধ্যেই ভিড় মাঠ ছাপিয়ে রাস্তায় চলে যায়। চারটের কিছু পরেই আকাশে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীর চপার। উল্লাসে ফেটে পড়া মাঠে তখন শুধু ‘মোদী-মোদী’ ধ্বনি। যেন ঢেউ উঠছে মাঠে।
মঞ্চে এয়ারকুলার। কিন্তু ঠা-ঠা রোদে দাঁড়ানো জনতা ঘামে জবজবে ভিজেও হাসিমুখে মোবাইলে মোদীর ছবি তুলতে হুড়োহুড়ি করেছেন। বক্তৃতা শেষ করে জলের গ্লাসে চুমুক দিয়ে গলা ভিজিয়েছেন বিজেপির ‘স্টার ক্যাম্পেনার।’ কিন্তু তেষ্টা ভুলে গলা ফাটিয়ে মোদীর নামে স্লোগান তুলেছে জনতা। তাঁদের চিৎকারে মাইকের আওয়াজও যেন চাপা পড়ে গিয়েছে অনেক সময়।
জনতার ভিড়। নিজস্ব চিত্র
বক্তৃতার সময় কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নাম বদল নিয়ে অভিযোগ করে মোদী কটাক্ষ করছেন, "দিদি আগে ছিলেন স্পিড ব্রেকার দিদি। এখন হয়েছেন স্টিকার দিদি।" জনতা ফেটে পড়েছে হাততালিতে। আয়ুষ্মান ভারত নিয়ে তাঁর কটাক্ষেও একইরকম উচ্ছ্বাস দেখা গিয়েছে মাঠে। যত বার রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তিনি মুখ খুলেছেন তত বার ভিড় জুড়ে যেন বিস্ফোরণ হয়েছে। একসময় ব্যারিকেড ভেঙে ভিআইপি, সংবাদমাধ্যম ও মহিলাদের সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকে গিয়েছে জনতা। ভিড়ের চাপে ভেঙেছে চেয়ার। তার মধ্যেও মোদীর সঙ্গে স্লোগানে গলা মিলিয়েছে জনতা। সভা শেষে যতক্ষণ না নরেন্দ্র মোদীর গাড়ি মাঠ ছেড়েছে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন সকলে। ।
এই সভায় দলীয় ঐক্যের ছবি তুলে ধরতে মরিয়া ছিল বিজেপি নেতৃত্ব। তাই জগন্নাথ যেমন ছিলেন, ছিলেন মুকুটমনি, মানবেন্দ্র নাথ রায়। তবে ছিলেন না সুজিত বিশ্বাস। দলে জগন্নাথের ঘোর বিরোধী বলে পরিচিত দিব্যেন্দু ভৌমিকও এ দিন হাজির ছিলেন মঞ্চে। ছিলেন বনগাঁর বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর, কৃষ্ণনগরের প্রার্থী কল্যান চৌবে, নদিয়া উত্তরের সভাপতি মহাদেব সরকার। ভিড় দেখে তৃপ্তির ছাপ ফুটে উঠেছিল এঁদের সকলের চোখেমুখে।