ভোটের কথায় গলগল ঘামে বাজিতপুর

রাগ হবে না কাকা! গতবার ভোটের সময় কত কথা বলেছিল। কল দেবে, জল দেবে শাঁখা শিল্পীদের যাবতীয় সুবিধা দেবে। আর শেষে কিনা কোদালের ডাক নিয়ে ওরা দাঁড়িয়ে গেল। ভোটটাও দিতে দিল না মানুষকে।’’

Advertisement

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

ডোমকল শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৯ ০২:৫১
Share:

শাঁখায় ব্যস্ত: বাজিতপুরে। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

এক হাতে গ্লাভস, অন্য হাতে সিরিঞ্জ। তাতে অ্যাসিড পুরে আকাশের দিকে ধরে দক্ষ চিকিৎসকের মতো হাওয়া বের করেই ঢুকিয়ে দিচ্ছে শাখার ভেতরে। পঁচা গুগলি ধুয়ে মুছে সাফ করতে বছর পনেরো থেকে সতেরোর তিন তরুণ কসরত করছে নাগাড়ে। আর দাঁত খিটমিট করে বলছে, ‘‘নেতারা ভোট চাইতে এলে এই সিরিঞ্জ দিয়ে ইনজেকশন দিয়ে দেব এ বার!’’

Advertisement

যা শুনে চৈত্রের খাঁ খাঁ দুপুরে ডোমকল পুর এলাকার বাজিতপুরে শাখা কারখানায় মস্ত বড় একটা হাই তুলে পালবাবু বলছেন, ‘‘দুধের দাঁত পড়েনি, ভোটার না হয়ে নেতাদের উপরে এত রাগ কিসের বাপু ?’’

রাগ হবে না কাকা! গতবার ভোটের সময় কত কথা বলেছিল। কল দেবে, জল দেবে শাঁখা শিল্পীদের যাবতীয় সুবিধা দেবে। আর শেষে কিনা কোদালের ডাক নিয়ে ওরা দাঁড়িয়ে গেল। ভোটটাও দিতে দিল না মানুষকে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

সাত বছর থেকে সত্তর বছর সকলেই জানে বিশেষ করে ডোমকল মহকুমা এলাকায় কিভাবে ভোট হয়েছে গত পঞ্চায়েৎ নির্বাচনে। ফলে ভোট দিতে না পারা মানুষের ক্ষোভ এ বার লোকসভা নির্বাচনে আছড়ে পড়ছে বাজিতপুর এলাকায়।

আদতে কাজ নিয়েই দিন কাটে বাজিতপুর এলাকার। সকাল থেকে বিকেল শাখার মেশিনের ঘর ঘর শব্দ আর সাদা সাকার গুড়োতে ছেয়ে থাকে গ্রাম। রাজনীতি নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামানোর সময় থাকে না তাদের। শাঁখা ব্যবসায়ী শিশুতোষ পাল বলেন, "আমাদের এলাকা আগাগোড়া ডোমকলের আর পাঁচটা গ্রামের থেকে আলাদা। এ খানে ভোটের সময় বোমার শব্দ নয়, শঙ্খ কাটার শব্ধ শুনতে পাওয়া যায়। কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকেন মানুষ। খুব বেশি হলে সন্ধ্যা নামলে একটু মিছিল মিটিংয়ে যোগ দেওয়া ছাড়া আর কিছুই না।’’

একটা সময় ভোট মানে উৎসব ছিল বাজিতপুরে। ভোটের দিনেও এক দলের ছাউনি থেকে ঘুগনি এনে খেয়েছে অন্য দল। আবার বিরোধীদের শিবিরের মুড়ি নিয়ে ঘুগনি মেখে খেয়েছে শাসক শিবির। গ্রামের শিক্ষক অমল সাহা বলছেন, ‘‘বছর কয়েক আগেও ভোট মানে আমাদের কাছে ছিল উৎসব। গত পুরসভার নির্বাচনের পরেই ছবিটা বদলে গিয়েছে। ভোট উৎসবে উৎসাহ হারিয়েছে মানুষ। ভোট এলেই যেন মুখভার বাজিতপুরের।’’

গ্রাম থেকে এখন পুর এলাকা বাজিতপুর। কিছুটা হলেও শহরের ছোঁয়া আছে এই গ্রামে। অর্থনৈতিক ভাবেও অন্যদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে এই এলাকা। গলি পথ এসে মিশেছে পাড়ার মোড়ে মোড়ে। সেখানেই একটি চায়ের দোকানে বসে জনা কয়েক বৃদ্ধ। ভোট প্রসঙ্গ তুলতেই কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে গেল মুখটা। চায়ের দোকানের মালিক কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘‘দাদা ভোট বাদ দিয়ে অন্য প্রসঙ্গে কথা বলুন।’’ লাঠি হাতে একে একে উঠতে থাকলেন তাঁরা। এক সময়ের ভোট উৎসব এখন বাজিতপুরের কাছে আতঙ্ক। অচেনা সেই ভোটের কথা উঠলেই গলগল করে ঘামছে যেন বাজিতপুর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন