উমরাপুরের নেজামুদ্দিন শেখ। প্রায় সাত মাস আগে তাঁর তিন ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে গিয়েছেন নাগাল্যান্ডে। দু’দিন আগেই ছেলেদের সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁর। নেজামুদ্দিন বলছেন, ‘‘গ্রামের পার্টির লোকেরা এসে বলে গিয়েছে ২৩ এপ্রিল ভোট। ছেলেদের খবর পাঠাতে। পুলিশ এসে ফোন নম্বরও নিয়ে গিয়েছে। এ দিকে, ছেলেরা বলেছে নাগাল্যান্ড থেকে আসতে যেতে চার দিন সময় লাগবে। যাতায়াতে হাজার তিনেক টাকা খরচ। তাই অত খরচ ও ও কষ্ট করে তারা আসতে পারবে না। তবে কেউ জিজ্ঞেস করলে বলছি, ওরা আসার চেষ্টা করবে।’’
অরঙ্গাবাদের জ্যোৎস্না বিবির স্বামী কংগ্রেসের সমর্থক। কলকাতার শ্যামবাজারে কাজে গিয়েছেন। জ্যোৎস্না বলছেন, “যত কষ্টই হোক ভোটটা দিতে আসে। কিন্তু এ বার কাজের চাপ খুব। তাছাড়া দেড় মাস পরে ইদের সময় আসতে হবে। তাই এ বার আর ভোটের দিন আসতে পারবে না।”
হরিপুরের বাসিন্দা কায়িফ আলি বলছেন, “পঞ্চায়েতে ভোট দিতে পারিনি। ভোট যে কী জিনিস আমি তা নিজের চোখে দাঁড়িয়ে দেখেছি। তাই গত সপ্তাহেই ওড়িশা চলে এসেছি। বাড়ি ফিরব ইদের দিন চারেক আগে। ভোট নিয়ে কোনও উৎসাহ নেই।”
মুর্শিদাবাদ জেলায় জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের ভোট ২৩ এপ্রিল। বহরমপুরে ভোট ২৯ এপ্রিল। জেলা প্রশাসনের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, জেলায় এ বারে মোট ভোটারের সংখ্যা ৫১.৫৩ লক্ষ। তাঁদের মধ্যে ১.১২ লক্ষ ভোটার জেলার বাইরে। তাঁরা যাতে ভোট দিতে আসেন সেই জন্য চিঠি ও এসএমএস পাঠানো হয়েছে।
অরঙ্গাবাদের এক অধ্যাপক বলছেন, “ক’দিন আগেই যারা ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পথ আটকেছিল, আজ তারাই জামাই আদরে ভোটারদের ভিন্রাজ্য থেকে ডেকে পাঠাচ্ছে। গণতন্ত্রের মহিমা বোঝা ভার।”
প্রশাসনের হিসেব যাই বলুক, রঘুনাথগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক আখরুজ্জামান অবশ্য বলছেন, “এই মুহূর্তে শুধুমাত্র জঙ্গিপুরেরই প্রায় চার লক্ষ ভোটার জেলার বাইরে। মুর্শিদাবাদ কেন্দ্র ধরলে সে সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ ছাড়াবে। বহরমপুরের পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যাটা অবশ্য কম। তাই বাড়ি বাড়ি গিয়ে দলের স্থানীয় নেতারা খুঁজে দেখছেন, কারা রয়েছেন বাইরে। তাদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে ভোটের আগে এলাকায় আনানোর চেষ্টা হচ্ছে। তবে কতটা কী করা যাবে জানি না।”
জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাসের কথায়, “জেলার এই সব শ্রমিকেরা সাধারণত বাড়ি ফেরেন ইদ ও পুজোর সময়। সে সময় ভোট থাকলে একই খরচে হয়ে যায় বলে দু’চার দিন আগে-পরে জেলায় চলে আসেন। কিন্তু এ বারে তাঁদের কত জন আসবেন তা স্পষ্ট নয়। গত পঞ্চায়েত ভোটের তিক্ত অভিজ্ঞতার পরে অনেকে হয়তো আসতেও চাইবেন না।’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আবুল হাসনাত খান বলছেন, “বাইরে থাকা ভোটারদের লোকসভা ভোটে বাড়ি আসার টান থাকে কম। সাতটি বিধানসভা নিয়ে বিরাট এলাকায় কোনও প্রার্থীর পক্ষেও তাঁদের আর্থিক সাহায্য দিয়ে বাড়ি ফেরানো সম্ভব নয়। প্রশাসন চিঠিই দিক আর এসএমএস-ই পাঠাক, খরচটা তো দেবে না।’’
জঙ্গিপুরের তৃণমূল নেতা শেখ ফুরকানও এক সময় লোকসভায় প্রার্থী হয়েছেন দলের জন্মলগ্নে। তিনি বলছেন, “বাইরে কাজে গিয়ে ভাল আয় করেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা। সে আয় বন্ধ রাখা মানে ইদের আগে বিরাট আর্থিক ক্ষতি। নিজের ক্ষতি করে তাই গণতন্ত্রের অধিকার প্রয়োগে কত জন জেলায় ছুটে আসবেন তাতে সন্দেহ আছে।”
এ বারে ভোটের লড়াই হাড্ডাহাড্ডি। কংগ্রেস, বাম, তৃণমূল সকলেই এই বিপুল সংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিকেরা ভোট দিতে আসবেন কি না তা নিয়ে চিন্তায় আছে।