মাত্র এক বছর আগের পঞ্চায়েত নির্বাচনে অন্য রকম ভোট দেখেছিল শান্তিপুর। ভোট দিতে পারেননি অনেকে। শান্তিপুরের রাজনীতিতে তৈরি হয়েছিল অসহিষ্ণুতা আর সন্ত্রাসের আবহ। নানা প্রকল্পে নেতাদের অহেতুক নাক গলানোও ভাল চোখে দেখেনি মানুষ। লোকসভা ভোট মিটে যাওয়ার পরে তাই প্রশ্ন উঠছে, জমে থাকা ক্ষোভের হিসাব কি এ বার মিটিয়ে নিয়েছে আমজনতা?
শান্তিপুরে শাসক দলের দুই নেতা অজয় দে, অরিন্দম ভট্টাচার্য— দু’জনেই কংগ্রেস থেকে এসেছেন তৃণমূলে। ২০১৫ সালের পুরভোটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছিল শান্তিপুরে। অনেকের মতে ২০১৬ সালে অজয় দে-কে হারিয়ে তার বদলা নেয় মানুষ। ২০১৭ সালে তৃণমূলে যোগ দেন অরিন্দম। শান্তিপুরে দলের রাশ ক্রমশ কেন্দ্রীভূত হতে থাকে বিধায়ক অরিন্দমের মুঠোয়। সেই সঙ্গে শান্তিপুরের রাজনীতিতে স্পষ্ট হতে থাকে অসহিষ্ণুতার বাতাবরণ।
২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে সন্ত্রাসের সঙ্গে নাম জড়ায় শাসক দলের। ভোটের আগে বেলগড়িয়া ২ পঞ্চায়েত এলাকায় এক বিজেপি প্রার্থীর গর্ভবতী আত্মীয়াকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ভোটের দিন গুলি চলে। বাবলা এলাকায় গণপিটুনিতে মৃত্যু হয় এক যুবকের, জখম হন আরও কয়েক জন। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এঁরা বিধায়ক-ঘনিষ্ঠ ও বুথ দখল করতে এসেছিলেন। ভোটের পরে এলাকায় খুন হন বিজেপি কর্মী। সেই ঘটনাতেও অরিন্দম-ঘনিষ্ঠদের দিকে আঙুল ওঠে।
দলের একটি বড় অংশ পঞ্চায়েত ভোটে লড়ার টিকিট পাননি। এঁদের বেশিরভাগই বিধায়কের-বিরোধী শিবিরের বলে অভিযোগ। বোর্ড গঠনের আগেই গয়েশপুর, বেলগড়িয়া ১ পঞ্চায়েতের মতো জায়গায় দলীয় সদস্যদের একটি অংশ দলীয় নেতৃত্বের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন অরিন্দম শিবিরের বিরুদ্ধে। অজয় ও অরিন্দম গোষ্ঠীর গোলমাল তীব্র আকার নেয়।
শান্তিপুর কলেজে ঝামেলা, আবাস প্রকল্পে শাসক দলের নেতাদের দাদাগিরি, দুর্নীতি, স্বজনপোষণ, নির্মাণকাজে সিন্ডিকেটের চাপ, কিছু নেতার দুর্ব্যবহার—এই সব মোটেই ভাল ভাবে নেয়নি জনতা। তাঁদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ কি হয়েছে লোকসভা ভোটে?
শান্তিপুরের বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি। আর পুরপ্রধান অজয় দে বলেন, “পুরভোটে কখনও জোর করে ভোট করিনি আমরা। দুর্নীতির অভিযোগ যা তোলা হচ্ছে তা মনগড়া।”