অনেকেরই দিন কাটল ফুলিয়ায় তাঁত বুনে

ভোট দিয়ে খাব কী, কোচবিহারে ফিরলেন না তাঁতিরা

কার্তিকের এ দিন নদিয়ায় বসে থাকার কথা নয়। কোচবিহারে তাঁর নিজের সাকিনে ভরভরন্ত ভোট। কিন্তু কার্তিক যাননি।

Advertisement

সুদীপ ভট্টাচার্য 

শান্তিপুর শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৩৪
Share:

চলছে হাত। আর মাঝে-মাঝে উঠে গিয়ে টিভিতে খবর দেখা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

ফুলিয়ার চটকাতলায় তাঁতে বসে বসে জামদানিতে বুটি তুলছিলেন বক্সীহাটের কার্তিক সরকার। আর মাঝে-মাঝে উঠে গিয়ে টিভিতে দেখে আসছিলেন ভোটের খবর।

Advertisement

বৃহস্পতিবার দুপুর।

কার্তিকের এ দিন নদিয়ায় বসে থাকার কথা নয়। কোচবিহারে তাঁর নিজের সাকিনে ভরভরন্ত ভোট। কিন্তু কার্তিক যাননি। গত পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু অসুস্থ হয়ে পড়ায় সময়ে বুথে যেতে পারেননি। তাঁর ভোট অন্যে দিয়েছিল। কী হবে আর গিয়ে? দেশে যাওয়া মানেই তো রোজগারপাতি বন্ধ, উল্টে গুচ্ছ টাকা খরচ। ‘‘এই তো ক’দিন আগেই ঘুরে এলাম। এক বার বাড়ি গেলে কম করে সাত দিন কাজে কামাই। দিনে সাতশো টাকা মজুরিতে এখানে তাঁত বুনি। আগে তো পেট, তার পর ভোট।’’

Advertisement

কার্তিকের মতো কোচবিহার থেকে আসা কমবেশি প্রায় সাড়ে তিন হাজার তাঁতি ফুলিয়ার মাঠপাড়া, তালতলা, চটকাতলা, বাহান্ন বিঘার তাঁতঘরে তাঁত বোনেন। চাষের মরসুমে তাঁদের দেশঘরে যা-ও বা মাঠে কাজ থাকে, অন্য সময়ে হাত ফাঁকা। তখন তাঁরা দলে-দলে চলে আসেন তাঁতের কাজে। এঁদের একটা বড় অংশই ভোট দিতে বাড়ি ফেরেননি।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

তাঁত বুনতে-বুনতেই নাটাবাড়ির রাজু মোদক বলেন, ‘‘গত পঞ্চায়েত ভোটে গিয়েছিলাম। তখন ধান কাটার মরসুম, দেশে গিয়ে ধান কাটার কাজ করেছি। কিন্তু এখন তো কোনও কাজই নেই। বাড়ি গেলে খালি বসে থাকা। তাই এ বার আর গেলাম না।’’

ফুলিয়ার মাঠপাড়ার এক তাঁতঘরে তাঁত বুনছিলেন হরির হাটের শ্রীদাম বর্মণ আর জ্যোতিষ বর্মণ। জ্যোতিষ বলেন, ‘‘এতক্ষণ খুব চিন্তায় ছিলাম। একটু আগে বউ ফোন করে জানাল, ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরেছে, এখন শান্তি। এ বার আমাদের ওখানে অশান্তি হচ্ছে না। তবে গত পঞ্চায়েত ভোটে বাড়ি ভীষণ গন্ডগোল হয়েছিল। আমি বাড়ি গিয়েছিলাম, কিন্তু নিজের ভোটটা দিতে পারিনি।’’ শ্রীদাম যোগ করেন, ‘‘এত খরচ করে যাওয়া! আমার তো এই রোজগারই সম্বল। তাই ভাবলাম, ভোট দিয়ে কাজ নেই। পেট চলার কাজটাই করি।’’

সকলেই অবশ্য এই দলে পড়ছেন না। যাঁরা গিয়েছেন, তাঁদের অভাবে আবার সমস্যায় পড়েছেন মহাজনেরা। চটকাতলার মিন্টু বসাকের বাড়িতে কোচবিহারের ছ’জন তাঁত বোনেন। তার মধ্যে চার জন গিয়েছেন ভোট দিতে। মিন্টু বলেন, ‘‘কম করে সাত দিনের আগে তো কেউ ফিরবে না। তাঁত বন্ধ মানেই সপ্তাহে প্রায় আট হাজার টাকার ক্ষতি।’’

হোক ক্ষতি। ভোটটা তো মিটল!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন