শ্রী পঞ্চমীতে পলাশপ্রিয়ার আরাধনা। শাস্ত্রমতে এদিন থেকেই ঋতু বসন্তের সূচনা। সরস্বতী পুজোর উপকরণেই সে ইঙ্গিত স্পষ্ট। বাগ্দেবীর পুষ্পপাত্রে আবির, কুমকুমের পাশাপাশি পলাশ,আমের মুকুল বা যবের শিষের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক।
বাগদেবীর আরাধনায় আবশ্যক যবের শিষ কিংবা আমের মঞ্জরী, পলাশ ফুল। আসলে বৈদিক যুগে সরস্বতীকে শস্যের দেবী হিসাবেই পুজো করা হতো। বিদ্যের দেবী অনেক পরে। তাই তাঁর পুজোয় নির্দিষ্ট কিছু শস্য ও ফুলের ব্যবহারের রীতি সুপ্রাচীন কাল থেকেই চলে আসছে। কিন্তু বিধি বাম। সরকারি নিষেধজ্ঞা এবং প্রকৃতির খামখেয়ালিপনায় এ বার পুজোয় শাস্ত্রসম্মত আয়োজন করতে গিয়ে প্রবল শীতেও ঘাম ছুটেছে।
নিয়ম মেনে মাঘের শুক্লা পঞ্চমীতে বাগদেবীর আরাধনা হচ্ছে। কিন্তু, নদিয়া বা মুর্শিদাবাদের প্রায় সর্বত্র সোমবার সরস্বতী পুজো হয়েছে যবের শিষ বা আমের মঞ্জরী ছাড়াই। পুজোর উপাচারে আসল উপকরন অনুপস্থিত দেখেও পুরোহিত মশাইয়ের কিছু করার করার ছিল না। নদিয়ার রাজ পরিবারের পুরোহিত প্রয়াত অসীম ভট্টাচার্যের পুত্র বিশ্বরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “উপকরণের অনুপস্থিতির অর্থ বিধিবদ্ধ পুজো বিঘ্নিত হল। কিন্তু প্রকৃতির উপর কারওর হাত নেই।’’
বেলডাঙার বেনিয়াপাড়ায় সরস্বতী পুজোর মূল উদ্যোক্তা সরকারী কর্মী হারাধন গনাই নিজে হাতে গত ৩৫ বছর ধরে প্রতিমা তৈরী করা থেকে ফুল-ফল, আমের মুকুল, যবের শিষ যাবতীয় আয়োজন নিজের হাতে করেন। গনাই বাবু হঠাৎ খেয়াল করলেন পুরোহিত প্রীতম বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ডানপাশে বড় কচুপাতায় রাখা বেল কাঠ, ফুল, তুলসিপাতা, মালা, চন্দনের মধ্যে হন্যে হয়ে খুঁজে না পেয়ে পুরোহিতের প্রশ্ন, “আরে যবের শিষ, আমের মুকুল কোথায় গেল? আনেন নি নাকি?” হারাধনবাবুর কাঁচুমাচু জবাব, “অনেক খুঁজেছি। কোথাও পাওয়া যায়নি। প্রতিবার পাড়ায় ছোটরা যবের শিষ বিক্রি করতে আসে। এবার তারাও আসেনি। প্রীতম অবশ্য পরে অনেক অনুরোধে এক জনের থেকে এক টুকরো আমের মুকুল পেয়েছিলেন। তা ছিঁড়ে, ছিঁড়ে বেশ কয়েকটা পুজো সেরে নিয়েছেন। ছবিটা দুই জেলার সর্বত্র কমবেশি প্রায় একই রকম।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন এবারে যব না মেলার কারণ গম চাষে সরকারি নিষেধাজ্ঞা। আসলে গমের জমিতেই ফলে যব। পাশাপাশি প্রবল ঠাণ্ডায় আমের মুকুল এখনও অধরা। অন্যদিকে সরস্বতী পুজোও কিছুটা এগিয়ে এসেছে। সব মিলিয়ে পুজোর থালায় অমিল যব এবং আম্র মঞ্জরী। মুর্শিদাবাদের পরেশনাথপুরের কৃষক সুজয় মণ্ডল বলেন, “হুইটব্লাস্ট রোগের আক্রমণ ঠেকাতে সরকারি ভাবে গমচাষ দু’বছর নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা গমের সঙ্গেই যব চাষ করি। এবার গমচাষ বন্ধ ফলে যবও নেই বাজারে।”
অন্যদিকে কৃষি আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন আমগাছে মুকুল আসতে গেলে তাপমাত্রা ১০ এর নিচে থাকলে চলবে না। এবার লম্বা সময় ধরে প্রবল ঠাণ্ডা থাকায় আম গাছে মুকুল আসতে সমস্যা হয়েছে। সামান্য দু’-একটা গাছে যেটুকু ধরেছিল তা রবিবার রাতেই লুঠ হয়ে গিয়েছে।
তাতেও বাগ্দেবীকে খুশি করা গেল কই?