প্রতিবার কেক, বেলুন সাজিয়ে, বন্ধুদের ডেকে মেয়ের জন্মদিন পালন হয়। কিছুদিন ধরে খান দম্পতির মনে হচ্ছিল,আনন্দের সঙ্গে যদি সামাজিক দায়িত্ব পালনকে মেশানো যায় তা হলে তার তৃপ্তি আলাদা। তাতে আনন্দ ভাগ করে নেওয়া যায় অনেকের সঙ্গে, ভাললাগায় পূর্ণতা আসে।
সেই ভাবনা থেকেই এ বছর একেবারে অন্য ছাঁদে অনুষ্ঠান সাজিয়েছিলেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার মেয়ে মুসকানের পাঁচ বছরের জন্মদিনে স্বেচ্ছা রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছিলেন শান্তিপুর পুরসভার কর্মী তথা শান্তিপুর মুসলিম স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ খান ও তাঁর স্ত্রী সোনেহার বিবি। প্রায় বছরখানেক আগে রানাঘাট ব্লাডব্যাঙ্কে গিয়ে দিনটা ‘বুক’ করে এসেছিলেন। পরিবারের ২০ জন এ দিন রক্ত দিলেন। সেই রক্ত দেওয়া হবে থ্যালাসেমিয়া-আক্রান্ত শিশুদের। ‘‘এই রক্তে মুসকানের বয়সী আরও ছেলেমেয়ের বেঁচে থাকা যদি আরও দীর্ঘায়িত করা যায় তা হলে এর থেকে আনন্দের আর কিছু হতে পারে না’’—উজ্জ্বল মুখে বলছিলেন খান দম্পতি। এলাকার বেশ কিছু দরিদ্র শিশুকে নতুন জামা, খাতা, পেনসিল, রঙপেনসিল-ও উপহার দিয়েছেন তাঁরা। জন্মদিন বা বিবাহবার্ষিকীর মতো দিনগুলি গতানুগতিক উদযাপনের বাইরে গিয়ে অন্য ভাবে পালনের একটা ধারা গত কয়েক বছর ধরে কলকাতায় দেখা যাচ্ছিল। এখন তার ছোঁয়া লেগেছে জেলা শহর এবং শহরতলিতেও। গাদা টাকা খরচ করে আড়ম্বর আর জাঁক দেখানোর পরিবর্তে বরং তাঁরা সেই উৎসবকে অন্য মাত্রা দিতে চাইছেন অর্থবহ কাজের মাধ্যমে। তাতেই অনুষ্ঠান প্রকৃত সার্থক বলে মনে করছেন। কৃষ্ণনগরের শঙ্কর মিশন আশ্রমের এক কর্তা জানাচ্ছিলেন, শহরের অনেকেই এখন আশ্রমে এসে ছেলেমেয়েদের জন্মদিন পালন করছেন। তালিকায় ব্যবসায়ী থেকে ঠিকাদার কিম্বা আয়কর বিভাগের কর্তা—অনেকেই রয়েছেন। কেউ আশ্রমের শিশুদের খাওয়াচ্ছেন, কেউ নতুন পোশাক, খেলনা কিনে দিচ্ছেন। আশ্রমের পরিচালন সমিতির সম্পাদক শঙ্করশুদ্ধ চৈতন্য মহারাজের মতে, ‘‘এর মধ্যে কোথাও পুণ্যার্জনের ভাবনা অনেকের ভিতর কাজ করে।’’
বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় করিমপুরে মাস কয়েক আগে আট বছরের বিরাজ ধরের জন্মদিন পালন করা হয়েছিল করিমপুরের পাটাবুকা এলাকার একটি হোমে ৪০ জন অনাথশিশুর সঙ্গে। ২০১৭ সালের ২ অক্টোবর বহরমপুরের চিরঞ্জীব-প্রিয়াঙ্কা ঘোষ তাঁদের একমাত্র সন্তান ঈশান ঘোষের জন্মদিন পালন করেন বহরমপুর বানজেটিয়া এলাকার ভাগীরথী সেবা সদন নামে এক অনাথ আশ্রমে। ছিল বেলুন, কেক। বহরমপুরের পৌষালী কর্মকার গুপ্ত মেয়ে অভীপ্সা-র জন্মদিন প্রতি বার পালন করেন কাজি নজরুল ইসলাম শিশু আবাসের শিশু-কিশোরদের সঙ্গে। কয়েক বছর আগে শান্তিনিকেতনে বড় হয়ে ওঠা নন্দিনী বণিক তাঁর নিজের জন্মদিন পালন করেন বহরমপুর মানসিক হাসপাতালের আবাসিকদের সঙ্গে। এই ‘ভাগাভাগি’ করা আনন্দ অমূল্য বলে মত দিয়েছেন এঁরা প্রত্যেকেই।
(চলবে)