স্ত্রীর সঙ্গে প্রেমিকের বিয়ে দিলেন স্বামী

গল্প-উপন্যাস, সেলুলয়েডের পর্দাকে হার মানানো এ বৃত্তান্ত। স্ত্রী-কে প্রাণ দিয়ে ভালবেসেছিলেন স্বামী। কিন্তু স্ত্রী ডুবেছিলেন পুরনো প্রেমিকের প্রেমে। বিয়ের চার বছর পরে সেই প্রেমিকের টানে ঘর ছাড়তেই সব কিছু স্পষ্ট হয় স্বামীর কাছে।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৯ ০৫:২৪
Share:

সজল দাস, মিঠু দাস, ননী সরকার (বাঁদিক থেকে)। নবদ্বীপের মাঝদিয়া মাঠপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র

গল্প-উপন্যাস, সেলুলয়েডের পর্দাকে হার মানানো এ বৃত্তান্ত। স্ত্রী-কে প্রাণ দিয়ে ভালবেসেছিলেন স্বামী। কিন্তু স্ত্রী ডুবেছিলেন পুরনো প্রেমিকের প্রেমে। বিয়ের চার বছর পরে সেই প্রেমিকের টানে ঘর ছাড়তেই সব কিছু স্পষ্ট হয় স্বামীর কাছে। তাতে অবশ্য রাগে মারমুখী হয়ে ওঠেননি। বরং মর্যাদা দিতে চেয়েছেন স্ত্রীর ভালবাসাকে। পত্রপাঠ বিবাহবিচ্ছেদের কাগজে সই করে দিয়েছেন বছর আঠাশের সেই যুবক এবং সবাইকে চমকে দিয়ে নিজে উদ্যোগী হয়ে প্রেমিকের সঙ্গে নিজের বিবাহিত স্ত্রীর রেজিস্ট্রি করিয়েছেন। যাবতীয় জোগাড়যন্ত্র করেছেন নিজে। এমনকি রেজিস্ট্রারের টাকাও দিয়েছেন এবং রেজিস্ট্রি শেষ হওয়া পর্যন্ত ঠায় সেখানে উপস্থিত থেকে সবকিছু পরিচালনা করেছেন।

Advertisement

সব সেরে শূন্য ঘরে ফিরে একাকী নাড়াচাড়া করেছেন পুরনো সব ছবি নিয়ে। অনেক স্মৃতি মনে পড়ে যাওয়ায় কেঁদে ফেলেছেন শিশুর মতো। কাঁদতে কাঁদতেই অপরিচিত সাংবাদিককে বলেছেন, ‘‘ভালবাসা মানে তো কাউকে জোর করে ধরে রাখা নয়, বরং সে যাতে ভাল থাকে সেটা করতে দেওয়া। জবরদস্তি ভালবাসা পাওয়া যায় না। তাই ওকে আটকায়নি। ও যাঁকে ভালবেসে তাঁর কাছে ভাল থাকুক।’’

নবদ্বীপের মাজদিয়া মাঠপাড়ার বাসিন্দা সেই স্বামী সজল দাস, তাঁর স্ত্রী মিঠু দাস ও মিঠুর প্রেমিক মণ্ডপকর্মী ননী সরকারের এই কাহিনি শুনে অনেকেরই মনে পড়ে গিয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে মুক্তি পাওয়া হিন্দি ছবি ‘হম দিল দে চুকে সনম’ এর কথা। তবে সেখানে স্বামীর ভালবাসার গভীরতা অনুভব করে শেষ মুহূর্তে প্রেমিকের থেকে মুখ ফিরিয়েছিলেন স্ত্রী। এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। রেজিস্ট্রি বিয়ের পর প্রেমিক ননীর হাত ধরেই মিঠু সংসার করতে গিয়েছেন। সেই দিকে তাকিয়ে স্বামী সজল বলেছেন, ‘‘আমাকে কোনও দিন ভালবাসেনি। চার বছর ধরে শুধু অভিনয় করেছে। এ বার অত্যন্ত সত্যিকারের ভালবেসে সংসার করুক।’’ ডিভোর্সের জন্য তো সদ্য আবেদন দায়ের করা হয়েছে। এই অবস্থায় রেজিস্ট্রি কি গ্রাহ্য হবে? সজলের উত্তর, ‘‘বিয়ে তো মনের ব্যাপার। আমি যখন মিউচুয়াল ডিভোর্স দেবই তখন আর কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। আমার সম্মতি নিয়েই রেজিস্ট্রি হয়েছে।’’

Advertisement

বছর চারেক আগে দেখাশোনা করেই সজলের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল রুইপুকুর পঞ্চায়েতের শ্যামপুকুরের বাসিন্দা মিঠু দাসের। বিয়ের পর স্ত্রী-র আবদারেই মুম্বইয়ের হোটেল ছেড়ে চলে আসেন মায়াপুরের এক হোটেলে কাজ নেন। শাশুড়ি চপলা দাস কাঁদতে-কাঁদতে বলেন “কোনওদিন কোন অশান্তি ছিল না আমাদের। সংসারের সব কিছুই বউমা করত। তবে ফাঁক পেলেই ফোনে কথা বলত। তখন কিছু বুঝতে পারিনি। আমার ছেলেটার মুখের দিকে এখন তাকাতে পারছি না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন