এক টাকা কেজি, তবু খুশি নয় আম-জনতা

কিছুটা নিজের জমি। তার উপরে আবার অন্যের বাগান ইজারা নিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে প্রায় ৪৫ বিঘা। রবিবারের ঝড়ে পড়ে গিয়েছে সিংহভাগ আমই।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৭ ০২:২৮
Share:

বাজারময়: কৃষ্ণনগরের পাত্রবাজারে। নিজস্ব চিত্র

কিছুটা নিজের জমি। তার উপরে আবার অন্যের বাগান ইজারা নিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে প্রায় ৪৫ বিঘা। রবিবারের ঝড়ে পড়ে গিয়েছে সিংহভাগ আমই। প্রায় পথে বসার অবস্থা মাজদিয়া হালদারপাড়ার বাসিন্দা উপেন নাগের। এক টাকা কেজি দরেও কেউ কিনতে চাইছে না সেই আম।

Advertisement

একই অবস্থা আমঘাটার নন্দদুলাল ঘোষের। নিজস্ব ২২ বিঘা জমিতে আম বাগান। ঝড়ে পড়ে গিয়েছে বেশির ভাগ আম। গাছের তলায় পড়ে থাকা আম কেনারই লোক পাচ্ছেন না তিনি।

গত বছর ছিল ‘অফ-সিজন’। তেমন ফলন হয়নি। বাগান লিজ নিয়ে মোটা টাকার ধাক্কা খেয়েছিলেন চাষিরা। এ বার তাই প্রথম থেকেই তাদের আশা ছিল গত বারের ধাক্কা সামলে লাভের মুখ দেখবেন। সেই মতো এ বারও মোটা টাকায় বাগান লিজ নিয়েছিলেন অনেকে। কিন্তু রবিবারের ঝড়ের দাপটে সব এলোমেলো হয়ে গেল।

Advertisement

এমনিতেই এ বছর বৃষ্টি না হওয়ায় আমের বোঁটা নরম হয়েই ছিল। তার উপরে কালবৈশাখীর দাপটে শুধু আম গাছ নয়, বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছেন চাষি থেকে শুরু করে আড়তদাড়রাও। প্রায় ৩৫ বছর ধরে আমের পাইকারি ব্যবসা করে আসছেন মাজদিয়ার অরুণ সিংহ। তাঁর কথায়, “প্রতি বছরই কালবৈশাখীতে আমের ক্ষতি হয়। কিন্তু এমন মারাত্মক ক্ষতি হতে দেখিনি। ভাবতে পারেন, ১৫ দিন পরে যে আম ১২-১৩ টাকা কেজিতে বিক্রি হত, সেই আম এক টাকাতেও কেউ কিনতে চাইছে না।”

জেলার অন্যতম বড় আমের বাজার কৃষ্ণগঞ্জের মাজদিয়া। মরশুমে প্রতি দিন কয়েক টন আম বেচাকেনা হয়। লেনদেন হয় কোটি কোটি টাকা। লরি বোঝাই হয়ে ভিন রাজ্যে পাড়ি দেয় হিমসাগর, ল্যাংরা। সেই বাজারেই সকাল থেকে ঝুরি ঝুরি আম নিয়ে হাজির হচ্ছেন শয়ে শয়ে চাষিরা। হত্যে দিয়ে পড়ে থাকছেন।

আর সেই সুযোগটাকেই কাজে লাগাতে চাইছেন আর এক শ্রেণির ব্যবসায়ী। চাষিদের সর্বনাশ হলেও তাদের চৈত্র মাস। এক টাকা-দেড় টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন আম। তার পর সেই আম চার টুকরো করে কেটে নুন মিশিয়ে চৌবাচ্চার মধ্যে জলে ভিজিয়ে রাখছেন। পৌছে দিচ্ছেন শিয়ালদহ, আগরতলা এলাকার আচার কারখানায়। পাঁচ-সাড়ে পাঁচ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন তারা। এদেরই এক জন আদিত্যপুরের বাসিন্দা গোবিন্দ দাস বলেন, “দশ বছর হয়ে গেল এই ব্যবসা করছি। কিন্তু এমন জলের দরে কোনও দিন আম কিনতে পারিনি। মঙ্গলবারই ৭ টন আম কিনেছি এক টাকা দরে।”

এই অবস্থা শুধু মাজদিয়া এলাকায় নয়, নদিয়া জেলার সর্বত্র। তুলনায় মুর্শিদাবাদের অবস্থা ভাল। পরপর কয়েক দিন শিলাবৃষ্টি হলেও ঝড়ের দাপট কমই ছিল। লালগোলার জাহাঙ্গির মিঞার ৮ বিঘার একটি আমবাগান রয়েছে। জাহাঙ্গির বললেন, ‘‘এ বার ‘অন সিজিন’ হওয়ায় আমের ব্যাপক ফলন হবে ভেবেছিলাম। কিন্তু উপর্যুপরি কয়েক বারের শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে বাগানের আম ঝরে গিয়েছে।’’ সবর্নাশের মাঝেও কিছুটা সুখবর শুনিয়েছেন হায়াতুন নবি। তিনি বলেন, ‘‘এ বছর ঘন ঘন বৃষ্টি হওয়ায় এখনই আমের সাইজ বেশ বড়। মনে হয় স্বাদও বেশ ভাল হবে।’’

কিন্তু ‘আম-জনতা’ কিছুটা চিন্তাতেই। কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা সুব্রত সরকার যেমন বললেন, “গত বার তেমন আম খেতে পারিনি। ভেবেছিলাম এ বার সেটা পুষিয়ে নেব। মনে হচ্ছে তা আর হল না।” নদিয়া জেলার উদ্যানপালন আধিকারিক কৃষ্ণেন্দু ঘড়াই বলেন, “রবিবারের ঝড়ে ৭৮৫ হেক্টর জমির গাছের আম
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানতে পারছি। ক্ষতি হওয়া আমের পরিমান ১২৫০ মেট্রিক টন। যার আর্থিক মূল্য ৬৩ লক্ষ টাকা।” কিন্তু বাস্তবে পরিসংখ্যানটা আরও অনেক বেশি বলে মনে করছেন চাষিরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন