ঝুলি রইল শূন্যই, বিস্ফোরক মান্নান

পুরভোটের ভরা বাজারেও মুর্শিদাবাদে খাতা খুলতে পারল না শাসকদল। কংগ্রেস, সিপিএমের বরাবরের ঘাঁটি মুর্শিদাবাদে বহু চেষ্টার পরেও অধরা রইল কাঙ্খিত ফল। অথচ, চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি তৃণমূল নেতৃত্ব। ঘন ঘন নেতৃত্ব বদলে কখনও দল ভাঙিয়ে মন্ত্রী করা হয়েছে হুমায়ুন কবীরকে। কখনওবা দল ভাঙিয়ে আনা চাঁদ মহম্মদকে দেওয়া হয়েছে সচিব পদ। সাফল্য আসেনি। জেলায় দলের মাথায় মান্নান হোসেনকে বসিয়ে পুর নির্বাচনে ভাল ফলের আশায় ছিল তৃণমূল।

Advertisement

বিমান হাজরা

রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৫৬
Share:

শেষ হাসি হাসল সেই কংগ্রেসই।— নিজস্ব চিত্র।

পুরভোটের ভরা বাজারেও মুর্শিদাবাদে খাতা খুলতে পারল না শাসকদল। কংগ্রেস, সিপিএমের বরাবরের ঘাঁটি মুর্শিদাবাদে বহু চেষ্টার পরেও অধরা রইল কাঙ্খিত ফল।

Advertisement

অথচ, চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি তৃণমূল নেতৃত্ব। ঘন ঘন নেতৃত্ব বদলে কখনও দল ভাঙিয়ে মন্ত্রী করা হয়েছে হুমায়ুন কবীরকে। কখনওবা দল ভাঙিয়ে আনা চাঁদ মহম্মদকে দেওয়া হয়েছে সচিব পদ। সাফল্য আসেনি। জেলায় দলের মাথায় মান্নান হোসেনকে বসিয়ে পুর নির্বাচনে ভাল ফলের আশায় ছিল তৃণমূল। কিছু দিন আগে শিল্পী ইন্দ্রনীল সেনকে পাঠিয়েও ল্যাজে-গোবরে অবস্থা কাটেনি দলের। পর্যবেক্ষক পদে ইন্দ্রনীলের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল শুভেন্দু অধিকারীকেও। তারপরেও জেলার ৬টি পুরসভার কোনওটিই হাতে এল না শাসকদলের!

জঙ্গিপুর, জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ ও বেলডাঙায় খাতাই খুলতে পারেনি শাসকদল। প্রাপ্তি বলতে কান্দিতে ৩টি, মুর্শিদাবাদে একটি এবং ধুলিয়ানে ৬টি—১০৭টি আসনের মধ্যে ১০টি আসন পেয়েছে তৃণমূল। ধুলিয়ানে দল ভাঙিয়ে ১৪ জন কাউন্সিলর নিয়ে বোর্ডের দখল নিয়েছিল তৃণমূল। সেই ধুলিয়ানেও পুরবোর্ড হাতছাড়া হয়েছে তৃণমূলের। শুধু তাই নয়, সংখ্যা ১৪ থেকে নেমে এসেছে ছ’য়ে।

Advertisement

‘অপ্রত্যাশিত’ ফলে মঙ্গলবার রীতিমতো বিস্ফোরক হয়ে উঠেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি মান্নান হোসেন। দলের বিপর্যয়ের জন্য তোপ দেগেছেন দলেরই কিছু নেতার বিরুদ্ধে। সাংগঠনিক দুর্বলতার জন্যই বিপর্যয় হয়েছে, তা মনে করেন না মান্নান। তাঁর অভিযোগ, ‘‘সাংগঠনিক দুর্বলতা আছে। বিপর্যয়ের সেটাই একমাত্র কারণ নয়। সকলকে এক সঙ্গে নিয়ে চলার মানসিকতাই নেই দলের জেলা নেতাদের। দলকে সামনে রেখে জেলার নেতারা ব্যবসায় নেমেছেন। সকলে এক মঞ্চে ভিড় করেন, অথচ কেউ কারও মুখ দেখেন না! দলকে দেখিয়ে লুঠে পুটে খাচ্ছেন তাঁরা।’’ তাঁরা কারা? নাম বলতে চাননি তিনি।

হারের ব্যাখ্যায় মান্নান বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদ পুরসভা-সহ জেলার সর্বত্র বাম, বিজেপি, কংগ্রেস যৌথভাবে তৃণমূলের বিরুদ্ধে জোট বেঁধে ভোট করেছে। কংগ্রেস লালবাগে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেছে। ফলে তৃণমূলের বহু কর্মী, নেতা ভোটের আগে রাতারাতি বসে গিয়েছিলেন। তাই হার হয়েছে।’’ শুধু দলের নেতাদেরই নয়, মুর্শিদাবাদের পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধেও তোপ দেগেছেন তিনি। মান্নানের বক্তব্যে বিষ্মিত বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, ‘‘এটাই তো প্রত্যাশিত ফল! জেলায় কংগ্রেস, বামেরা যথেষ্ট শক্তিশালী। তাদের সঙ্গে যুঝতে গেলে বহু কাঠখড় পোড়াতে হবে তৃণমূলকে।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘মানুষ উজ্জ্বল ভাবমূর্তির নেতা চায়। এ জেলায় মানুষের মনে ভরসা জাগানোর মত নেতা কই তৃণমূলে?’’

দলের বিপর্যয়কে তৃণমূলের নেতারা যে ভাবেই ব্যাখ্যা করুন না কেন, বিরোধী কংগ্রেস ও সিপিএম নেতারা মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের বিপর্যয়কে কাঙ্খিত বলেই মনে করছেন। জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র তথা সাধারণ সম্পাদক অশোক দাস বলেন, ‘‘লোকসভায় গোহারা হেরেও শিক্ষা হয়নি জেলার তৃণমূল নেতাদের। জেলার মানুষ বার বার তৃণমূলকে প্রতাখ্যান করেছেন, আগামী দিনেও করবেন।’’

সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এ বারের পুর নির্বাচনে মুর্শিদাবাদ জেলায় সন্ত্রাস করতে চেয়েও সফল হয়নি। সে জন্যই তাদের ভরাডুবি হয়েছে। এটাই ওদের প্রত্যাশিত ফল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন