শনিবার বহরমপুর। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
তখন ভোরবেলা। চারপাশ ঘন কুয়াশায় মোড়া। ফাঁকা মাঠের মধ্যে কুয়াশা যেন আরও জমাট বেঁধেছে। দু’-তিন ফুট সামনে কী রয়েছে, তা-ও ঠাহর হচ্ছে না। চারটে ইন্ডিকেটর জ্বালিয়ে দিয়েছি। জ্বলছে ফগ লাইটও। গত ২৩ বছর ধরে বাস চালাচ্ছি। কিন্তু কুয়াশাকে সমঝে চলেন না, এমন বাস চালক নেই। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। খুব ধীর গতিতে বাস নিয়ে এগোচ্ছি।
করিমপুর ছাড়িয়ে কিছুটা দূর এগোনোর পরে রাস্তাতে বেশ কিছু গর্ত আছে। বাসের গতি আরও কমিয়ে দিই। গর্ত থেকে সামনের চাকা উঠতেই দেখি, সাকুল্যে ফুট দুয়েক দূরে খড়বোঝাই ঘোড়ার গাড়ি। বুক কেঁপে ওঠে। মুহূর্তে ব্রেকে পা দিই। একেবারে ঘোড়ার গাড়ির কাছে গিয়ে থেমে যায় চাকা। যাত্রীরা জোর ঝাঁকুনি খান। ততক্ষণে বাস দাঁড়ি করিয়ে দিয়েছি রাস্তার পাশে। কিছুটা ধাতস্থ হওয়ার পরে ফের গাড়ি ছাড়ি। দিন তিনেক আগে এ ভাবে অল্পের জন্য বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাই। বাসের গতি যদি সামান্য বেশি থাকত, কী যে হত ভাবলে এখনও শিউরে উঠছি। কুয়াশার সময়ে বিপদ যেন ওত পেতে থাকে। একটু অন্যমনস্ক হলেই মুশকিল। শীতকালে বাস অনেক সময় নির্ধারিত সময়ের থেকে দেরিতে পৌঁছয়। কিছু যাত্রী রাগ করে গতি বাড়ানোর জন্য জোরও করেন। কিন্তু আমি নিজে সে কথায় কান দিই না। অন্য চালকদেরকেও একই অনুরোধ করব। এই কুয়াশার মধ্যে গাড়ি জোরো চালানো আর চোখ বন্ধ করে গাড়ি চালানোর মধ্যে কোনও ফারাক নেই। এটাও সবাইকে বোঝা দরকার। ঘোড়ার গাড়ি, ভ্যানরিকশা, সাইকেল তো বটেই, অন্য বড় গাড়ির পিছনেও আলো জ্বলে না। ফলে সামনে এমন কোনও যান থাকলে তা বোঝারও উপায় থাকে না। পুলিশ-প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, এ ব্যাপারে যদি একটু নজর দেওয়া যায়।
লেখক—দিঘলকান্দি-বহরমপুর রুটের বাস চালক