সাড়ে তিন বছরে অন্তত বারো বার আবেদন করেছিলেন তিনি— ‘প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার বরাদ্দের কিছুটা অন্তত অনুমোদন করুন।’ সাড়া মেলেনি।
দিল্লির প্রকল্প, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা। সে ব্যাপারে আর্তি জানানো হয়েছিল অন্তত বারহ পনেরো। তিনি বলছেন, ‘‘আবেদন, কানেই তোলেনি পঞ্চায়েত দফতর। বুক ঠুকে এক বার মুখ্যমন্ত্রীকেও চিঠি লিখেছিলাম। উত্তর আর আসেনি।’’
মুর্শিদাবাদ জেলার, জলরেখা হিসেবে বছর পনেরো আগেও চিনিয়ে দেওয়া হত যে বিল, সেই বান্ডারদহ মজে যাওয়ায় সংস্কারের জন্য বার পাঁচেক মৎস্যমন্ত্রীর কাছে দরবার করেছিলেন তিনি। মুর্শিদাবাদের সদ্য প্রাক্তন সভাধিপতি কংগ্রেসের শিলাদিত্য হালদার বলছেন, ‘‘উত্তর কি পেয়েছিলাম জানেন, ‘ওই মজা খাল সংস্কার করে কি হবে!’’
রাজ্যে পালাবদলের পরে, কংগ্রেসের আঁতুরঘর মুর্শিদাবাদে অধিকাংশ পঞ্চায়েত এবং পুরসভার সঙ্গে জেলা পরিষদও ধরে রেখেছিল কংগ্রেস। শিলাদিত্য বলছেন, ‘‘এত দিন তারই ‘শাস্তি’ পেতে হল!’’
তবে, সেই ছবিটাই আমূল বদলে গিয়েছে গত সাড়ে তিন মাসে।
কংগ্রেসের দখলদারি ছিনিয়ে নেওয়ার পরে সেই জেলা জুড়ে এখন বরাদ্দের বন্যা!
জেলার, পিএমজিএসওয়াই বা প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় ৬০টি রাস্তা তৈরির জন্য বরাদ্দের সিংহভাগই বরাদ্দ হয়ে গিয়েছে। কাজ শুরু হয়েছে অন্তত পনেরোটি রাস্তার। বরাদ্দের অঙ্ক ৮০ কোটি টাকা।
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর বাঁধাও শুরু হয়েছে বেশ কয়েকটি জায়গায়। পঞ্চায়েত দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলছেন, ‘‘উপরতলার নির্দেশ মেনেই এত দিন বরাদ্দে কিছুটা রাশ টানা হয়েছিল। জেলা পরিষদের হাত বদলের পরে সে বরাদ্দ দিতে এখন বাধা কোথায়!’’
আর ভান্ডারদহ?
জেলাপরিষদ ‘দখলের’ পরে মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ নিজে ভান্ডারদহ গিয়ে জানিয়ে এসেছেন, ‘‘কিচ্ছু বাববেন না। মাস কয়েকের মধ্যেই বিল সংস্কারের কাজ সেষ হবে।’’ তা হলে এত দিন থমকে ছিল? মন্ত্রীর কাছে তেমন কোনও সদুত্তর মেলেনি। বরং আগ বাড়িয়ে জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলছেন, ‘‘বিরোধীদের এ সব অভিযোগের কোনো বাস্তবতা নেই। এটুকুই বলতে পারি, প্রাক্তন সভাধিপতির অভিযোগ নিতান্তই ভিত্তিহীন।’’
বিধানসভা নির্বাচনের মুখে তৃণমূলের মুর্শিদাবাদ জেলা পর্যবেক্ষক শুবেন্দু অধিকারী সোজা সাপ্টা ঘোষমা করে গিয়েছিলেন— ‘‘একে একে পুরসভা পঞ্চায়েত এমনকী জেলা পরিষদও দখল করবে তৃণমূল।’’ কথা রেখেছিলেন তিনি। মাস কানেকের মধ্যেই বিরোধী সদস্যদের শাসক দলে নাম লেখানোর হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। ক্ষমতা বদলের পরেই বদলে যেতে শুরু করেছিল জেলা ‘উন্নয়নের’ ছবিটা।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী যাকে বলছেন, ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি’। আর, জেলা কংগ্রেস সবাপতি আবু তাহেরের ব্যাখ্যা—‘‘নির্বাচিত জেলা পরিষদের উপরে অর্থনৈতিক অবরোধ এনে বিরোধীদের দলবদলে বাধ্য করা এবং তার পরে বরাদ্দের দুয়ার খুলে দেওয়া। এটাই তৃণমূলের রাজনীতি।’’
শিলাদিত্য বলছেন, ‘‘এতটা নির্লজ্জ হতে পারে একটা রাজনৈতিক দল? তৃণমূল করলে সব মিলবে, না হলে কানাকড়ি নয়!’’
সে সব অভিযোগে অবশ্য কানে তুলছেন না তৃণমূলের নব্য সভাধিপতি বৈদ্যনাথ দাস। তাঁর যুক্তি, ‘‘রাজ্য সরকার কোনও বিমাতৃসুলভ আচরণ করেনি। আমাদের উন্নয়ন দেখে বিরোধীদের চোখ টাটাচ্ছে বলে এত কথা!’’
প্রায় একই সুর, সহকারি সভাধিপতি শাহনাজ বেগমের, “ওরা (কংগ্রহেস) ঠিকমত কাজই করতে পারেনি। ক্ষমতায় আসার পর কাজ কাকে বলে তা আমরাই দেখাচ্ছি।’’
দাবি, ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় ১৩৬ কিলোমিটার রাস্তার জন্য ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ। কাজ শুরু হল বলে।