দুয়ারে দোল: খানাপিনা

চাপাটি থেকে চাউমিন, চনমনে দোলের পাত

খিচুড়ির স্বাদ বড্ড অচেনা। নুডলস খাওয়া জিভে কি আর জুত হয়? শেষপাতে ‘ডেজার্ট’ বলতেও পায়েস এক্কেবারে বেমানান। দোলের নবদ্বীপ পরিক্রমায় আসা হাজার হাজার বিদেশি ভক্তের কথা মাথায় রেখে মেনুতে তাই যোগ করা হয়েছে পিৎজা-পাস্তা-স্যালাড।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় শুভাশিস সৈয়দ

নবদ্বীপ ও বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৭ ০১:১১
Share:

হেঁশেল: ভক্তদের পরিবেশনের জন্য তৈরি। নিজস্ব চিত্র

খিচুড়ির স্বাদ বড্ড অচেনা। নুডলস খাওয়া জিভে কি আর জুত হয়? শেষপাতে ‘ডেজার্ট’ বলতেও পায়েস এক্কেবারে বেমানান।

Advertisement

দোলের নবদ্বীপ পরিক্রমায় আসা হাজার হাজার বিদেশি ভক্তের কথা মাথায় রেখে মেনুতে তাই যোগ করা হয়েছে পিৎজা-পাস্তা-স্যালাড।

পরিক্রমা শুরু হয়ে যায় ভোর ছ’টা থেকে। যাত্রাপথ আগে থেকেই ঠিক করা থাকে। সেই মতো পথের কোনও এক জায়গায় সকাল ন’টা-সাড়ে ন’টার মধ্যে হাজির হয়ে যান কর্মীরা। পরিবেশন করেন ‘বাল্যভোগ’ বা সকালের জলখাবার। মধ্যাহ্নভোজের সময় দুপুর দু’টোর আশেপাশে। রাত্রিবাসের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। রাতের খাবার দিয়ে সে দিনের মতো পথচলা শেষ।

Advertisement

মায়াপুরের ইস্কন থেকে নবদ্বীপের কেশবজী গৌড়ীয় মঠ কিংবা দেবানন্দ গৌড়ীয় মঠের প্রধানেরা জানাচ্ছেন, ভক্তদের মধ্যে নানা অঞ্চলের মানুষ রয়েছে। তাঁদের খাদ্যাভ্যাস নানা ধরনের। তাই পাশাপাশি পাতে পড়ছে ভিন্ন পদ। ইস্কনের জন সংযোগ আধিকারিক রমেশ দাসের কথায়, ‘‘ভাষা আর খ্যদ্যাভাস, এই দু’টোই বড় সমস্যা। রাশিয়ান ভক্তরা যেমন অন্য কোনও ভাষা বলেন না, বোঝেনও না। একই সমস্যা তাঁদের খানাপিনাতেও। হিন্দিবলয়ের ভক্তরা চাপাটি-রুটি-সব্জিতে অভ্যস্ত। বাঙালি ভক্তদের পছন্দ অন্ন। আবার বিদেশিরা ফল, স্যালাড, চাউ, পাস্তা-পিৎজা চান।’’

নবদ্বীপের কেশবজী গৌড়ীয় মঠে মেনুটা এই রকম: পরিক্রমার দিনগুলোয় সকালের জলখাবারে সকলের জন্যই খিচুড়ির ব্যবস্থা। মধ্যাহ্নে সাদা ভাত সঙ্গে ডাল, সব্জি, পায়েস। বিদেশি ভক্তদের জন্য ওই সময় কোনও দিন চাউমিন, কোনও দিন পিৎজা বা পাস্তা দেওয়া হয়। সঙ্গে বেকড ব্রেড, ব্রাউন ব্রেড। আবার হিন্দি বলয়ের মানুষের জন্য সব্জির সঙ্গে তন্দুরি রুটি বা চাপাটি। তবে রাতে বিদেশিরা কিছুই খেতে চান না। একটু ফল বা দুধ। তবে দেশীয় ভক্তদের জন্য রাতেও অন্নের ব্যবস্থা থাকে।

রান্নাবান্নার ব্যবস্থাও এলাহি। সব খাবারই তৈরি হচ্ছে মঠে। এ প্রসঙ্গে মায়াপুরে ইস্কন মন্দিরের রমেশ দাস বললেন, “এ সবের নেপথ্যে কাজ করছেন অন্তত দেড় হাজার লোক। আমাদের পাঁচটি দল বের হয়। এতগুলো দলের জলখাবার, দুপুরের খাবার এবং রাত্রির খাবারের যাবতীয় রান্না করা হয় মায়াপুরে। তার পর ট্রাকে করে সেই সব খাবার নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে দেওয়া হয়।”

ইস্কনের সকালের জলখাবারে সাধারণত হাল্কা ফল, খিচুড়ি, চপ, চাউমিন, ফ্রুটজুস, বেলের সরবত থাকছে। সকাল ন’টা থেকে দশটার মধ্যে জলখাবার। দুপুরের খাওয়া দু’টো থেকে তিনটের মধ্যে। তাতে ডাল-ভাত, সবজি, নানা রকম নিরামিষ পদ, পায়েস, মিষ্টির সঙ্গে একটা ফল থাকে। সাড়ে আটটার মধ্যে রাতের খাওয়া। মেনুতে মুড়ি আর দুধ। ‘বেকড ব্রেড’ বা ‘ব্রাউন ব্রেড’ও থাকে।

বহরমপুরে অবশ্য দোলের ছবি একেবারেই আলাদা। শহরের বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে শুরু হয়ে গিয়েছে ব্যস্ততা। বিশেষ করে মালপোয়া তৈরির তোড়জোড়। বহরমপুর কল্পনা মোড়ের এক মিষ্টির দোকান মালিক শৈলেনকুমার ঘোষ বললেন, ‘‘দোল উপলক্ষে মহাপ্রভুর পুজোয় বিভিন্ন স্বাদের সন্দেশ, বিশেষ করে কেশর কালাকাঁদ, ম্যাঙ্গো সন্দেশ, চকোলেট সন্দেশের চাহিদা থাকে।’’ তবে দোলের প্রথম দিন কড়া পাকের মিষ্টি বেশি বিক্রি হয়। এ সব কথা উঠতেই নস্টালজিক হয়ে পড়েন বহরমপুরের প্রবীণ আইনজীবী, অশীতিপর স্বাধীন সান্যাল। জানালেন, তাঁর মামারবাড়ি কাদাই ভট্টাচার্য বাড়িতে রাধা-গোবিন্দের বিগ্রহ রয়েছে। এক সময় সেখানে দোল মানেই ছিল লুচি, পায়েস, মালপোয়া, পান্তুয়া। তালের মরসুম না থাকলেও, প্রতীকী হিসেবে তালের বড়া খাওয়ানো হতো।

এখন অবশ্য পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী মিলে পিকনিকে মেতে ওঠে। খাসির মাংস থেকে ফ্রায়েড রাইস, বাদ যায় না বিরিয়ানিও। মনের কোণে ভেসে ওঠে, সেই সব দিন, মালপোয়া আর তালের বড়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন