শেখ আনসার আহমেদ।
ক্লাসে খিদেতে টলে যেত মাথাটা। অপেক্ষায় থাকতেন মিড ডে মিলের। খাবারের গন্ধটা নাকে আসতেই চনমনিয়ে উঠত মন। কারণ, মিড ডে মিলের খাবারই ছিল তার শৈশবের একমাত্র ভরসা।
পরে কখনও হোটেলে কাজ করেছেন। কখনও কলেজে পড়ার খরচ জোগাতে কাজ নিয়েছেন জেরক্সের দোকানে। কিন্তু এত অভাব তাঁকে দমাতে পারেনি। নিজের লক্ষ্যে থেকেছেন অটল। এত লড়াইয়ের শেষে পূরণ করেছেন নিজের লক্ষ্য। তিনি, শেখ আনসার আহমেদ। দেশের অন্যতম কনিষ্ঠ আইএএস অফিসার। ২০১৫-র ব্যাচের আনসার আপাতত কৃষ্ণনগর ১-এর বিডিও। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই তিনি সাফ জানিয়েছেন, সরকারি প্রকল্প থেকে যেন বঞ্চিত না হন গরিব মানুষ।
সেই মতো খুঁটিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন একশো দিনের প্রকল্প, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, মিড ডে মিলের। মহারাষ্ট্রের খরা কবলিত জালনা জেলার শেরগাও গ্রামের বাসিন্দা অটো-চালক আহমেদ শেখের ছেলে আনসার। সারা দিন শেষ উপার্জিত অর্থে পরিবারের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করতে পারতেন না আহমেদ।
শৈশবে গ্রামের সরকারি স্কুলে ভর্তি হন আনসার। সেখান থেকে দশম শ্রেণির পাশ করে ভর্তি হন জালনা জেলা স্কুলে। কিন্তু পড়ার খরচ চালাবে কে? অর্থাভাবে পড়া ছেড়ে দিয়ে মুদির দোকানে কাজ নিয়েছে ছোট ভাই আনিস। তাহলে কি শেষ পর্যন্ত ভাইয়ের মত পড়াশুনো ছেড়ে দিতে হবে তাঁকেও? না। হার মানার ছেলে যে নন তিনি। কাজ নিলেন হোটেলে। পড়ার খরচ উঠলেও খাবার খরচ ওঠে না যে। দ্বাদশ শ্রেণি পাশ করে তিনি আরও বড় ঝুঁকি নিলেন। পকেটে মাত্র কয়েকটা টাকা নিয়ে হাজির হলেন পুনে শহরে। ভর্তি হলেন ফার্গুসন কলেজে। শুরু হল আরও কঠিন লড়াই। এ বার কাজ নিলেন একটি জেরক্সের দোকানে। সব খরচ সামলে সব দিন খাওয়ার টাকা থাকত না। খিদেতে ঘুম আসত না। সারা দিনের ক্লান্তিতে শরীরটা ভেঙে পড়ত বিছানায়। তবুও চলত লড়াই। কলেজের পড়ার পাশাপাশি শুরু হল আইএএস-এর প্রস্তুতি। ২০১৫ সালে জুন মাসে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ৭৩ শতাংশ নম্বর নিয়ে বিএ পাশ করলেন। ওই বছরই বসলেন আইএএস পরীক্ষায়। পরীক্ষার তিন ধাপেই উত্তীর্ণ হলেন আনসার। অসম লড়াইয়ে জয়ী হয়ে প্রথমেই তিনি আবেদন করলেন বিপিএল তালিকা থেকে নাম কেটে দেওয়ার জন্য। বন্ধ হল বাবার অটো চালানো। কাজ ছাড়িয়ে ভাইকে নিয়ে এলেন বাড়ি।