সেহরির জন্য ফোন যায় নদিয়া থেকে কাশ্মীরেও

রমজানের ভোরে ঘুম ভাঙান মাসুম

একসময় দল বেঁধে ঘণ্টা বাজিয়ে কিংবা চোঙা মুখে রমজানের ভোরে ঘুম ভাঙাতেন এলাকার কিছু যুবক। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে সব হারিয়ে গিয়েছে। কিন্তু নবাবের শহরে সে পুরনো প্রথা আজও বাঁচিয়ে রেখেছেন বছর বাহাত্তরের মাসুম।

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

মুর্শিদাবাদ শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৭ ১৪:১০
Share:

জাগানিয়া: নবাবের শহরে পুরনো প্রথা আজও বাঁচিয়ে রেখেছেন মাসুম। হাতে হাতে এখন মোবাইল, ঘড়ি-সহ নানা প্রযুক্তি। কিন্তু লোকজন অপেক্ষায় থাকেন কখন শোনা যাবে মাসুমের সেই ঢোল আর চোঙা। নিজস্ব চিত্র

টাগডুম টাগডুম করে বেজে উঠল কাঁধের ঢোল।

Advertisement

চোঙায় চেনা গলা—‘সেহরির সময় হয়েছে গো, উঠে পড়ুন।’

সেই আওয়াজে আড়মোড়া ভাঙে নবাবের শহরের চকবখরি গলি, গোয়ালটুলি, রাজাবাজার, পাঁচগোলা, টিকিয়াটুলি, কুতুবপুর-সহ নানা এলাকা। দু’এক বছরের ব্যাপার নয়, আজ প্রায় পঞ্চান্ন বছর ধরে প্রতি রমজানে এ ভাবেই ঘুম ভাঙাচ্ছেন চকবখরির বাসিন্দা আসরাফ হোসেন। তামাম এলাকা যাঁকে মাসুম বলে চেনেন।

Advertisement

একসময় দল বেঁধে ঘণ্টা বাজিয়ে কিংবা চোঙা মুখে রমজানের ভোরে ঘুম ভাঙাতেন এলাকার কিছু যুবক। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে সব হারিয়ে গিয়েছে। কিন্তু নবাবের শহরে সে পুরনো প্রথা আজও বাঁচিয়ে রেখেছেন বছর বাহাত্তরের মাসুম। মানুষের হাতে এখন মোবাইল, ঘড়ি-সহ নানা প্রযুক্তি রয়েছে। কিন্তু মুর্শিদাবাদ অপেক্ষায় থাকে কখন শোনা যাবে মাসুমের সেই ঢোল আর চোঙা।

নদিয়ার দেবগ্রামের বাসিন্দা সাকিনা বিবি ছেলেকে সেহেরির জন্য ঘুম থেকে তোলেন মোবাইলে ফোন করে। সাকিনার ছেলে ইমরান আনসারি কাশ্মীরে সেনাবিভাগে কাজ করেন। তিনি সমস্ত রোজা রাখেন। ইমরান বলছেন, ‘‘মোবাইলে অ্যালার্ম দিয়ে রাখি। কিন্তু অ্যালার্ম বাজার আগেই মা ফোন করে ঘুম থেকে তুলে দেন। ফলে সেটাই অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। আমাদের গ্রামেও একসময় ছেলেপুলেরা পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে সবাইকে ঘুম থেকে ডেকে তুলত। এখন তো সে
সবই অতীত!’’

বেশ কিছু মসজিদ থেকেও মাইকে সেহরির কথা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তেহট্টের বারুইপাড়ার এনামুল হকও ফোন করে তাঁর মামা সারিকুল ইসলামকে সেহরির জন্য ডেকে দেন। সারিকুল কর্মসূত্রে কৃষ্ণনগরের বনশ্রীপাড়ায় থাকেন। সারিকুল বলছেন, ‘‘আমাদের পাড়ায় সেহরির জন্য ডাকা হয় না। অ্যালার্মও অনেক সময় বুঝতে পারি না। ভাগ্যিস, ভাগ্নে ফোন করে!’’

নবাবের শহরে অবশ্য এ সব সমস্যা নেই। কারণ, সেখানে মাসুম আছেন। রাত একটার সময় হাতে চোঙ ও সাইকেলের ক্যারিয়ারে ঢোল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি। মাসুম জানান, তিনি ১৭ বছর বয়স থেকে এই কাজ করছেন। ইদের দিন এলাকার লোকজন তাঁকে কিছু সাহায্য করেন। প্রাপ্তি বলতে ওইটুকুই!

সবাইকে ঘুম থেকে তুলে বাড়ি ফিরে সেহরি খান মাসুম নিজে। মাঝেমধ্যে ছেলেও তাঁর সঙ্গে বেরিয়ে পড়ে। মাসুমের এক ভাই হাসান ইমামও লালবাগের অন্য এলাকায় একই ভাবে ঘুমভাঙানিয়ার কাজ করেন। পেশায় দিনমজুর দুই ভাই বলছেন, ‘‘এই কাজে বড় আনন্দ পাই কর্তা! জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত হাসি মুখে এই কাজটা করে যেতে চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন