প্রতীকী ছবি।
সর্ষের মধ্যেই ভূত! অভিযোগটা উঠেছিল আগেই। খোদ কিসান মান্ডিতে ফড়েদের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে সরব হয়েছিলেন চাষিরা। রবিবার বৈঠকে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্তাদের কথাতেই স্পষ্ট হল চাষিদের অভিযোগ অমূলক নয়।
এ দিন বিকেলে বহরমপুরে রবীন্দ্রসদনে সহায়ক মূল্যে ধান কেনা নিয়ে বৈঠক হয়। সেখানে বিধায়ক, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষেরা ফড়েরাজ ও ভূতুড়ে চাষির প্রসঙ্গ তুলেছেন। এ দিন তাঁরাও জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মানা হচ্ছেনা। রক্ষা হচ্ছে না চাষির স্বার্থও। যা শুনে এ সব বন্ধ করতে জেলাশাসক একাধিক পদক্ষেপের নির্দেশও দিয়েছেন।
এ দিনের বৈঠকে জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোশারফ হোসেন মণ্ডল, জেলাশাসক পি উলাগানাথন, তিন বিধায়ক অপূর্ব সরকার, শাওনি সিংহরায় ও আমিরুল ইসলাম ছাড়াও ব্লক, মহকুমা প্রশাসনের কর্তা, ধান কেনার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংস্থার কর্তারা উপস্থিত ছিলেন। জলঙ্গি ব্লক লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১২ শতাংশ ধান কিনতে পেরেছে। এমন হাল কেন জানতে চাওয়া হলে জলঙ্গি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শুক্লা সরকার বলেন, ‘‘দালালরা কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনে কেন্দ্রীয় ধান ক্রয় কেন্দ্রে বিক্রি করে দিচ্ছে। ফলে কৃষকরা ধান বিক্রি করতে পারছে না। আপনারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিন।’’
ফড়েরাজ সম্পর্কে বলতে গিয়ে জেলা পরিষদের কৃষি দফতরের কর্মাধ্যক্ষ শাহনাজ বেগম বৈঠকে বলেন, ‘‘কয়েক দিন আগে আমি কান্দি কিসান বাজারে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখি একটি পরিবারের ১০টি আধার কার্ড ও জমির কাগজপত্র এনেছে রেজিস্ট্রেশন কার্ডের জন্য। অথচ একটি কৃষক পরিবারের একটি কার্ড করার কথা। ওই কার্ডগুলি পরবর্তী সময়ে ফড়েদের হাতে চলে যাবে।’’ তাঁর পরামর্শ, ‘‘আধিকারিকদের পক্ষে সব জানা সম্ভব নয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা স্থানীয় সরকারি কর্মীরা তাদের চিহ্নিত করতে পারেন।’’
কান্দির বিধায়ক অপূর্ব সরকার আবার ভূতুড়ে চাষির অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘সম্প্রতি কান্দিতে পুর এলাকায় ধান কেনার শিবির হয়েছে। সেই শিবিরে ধান বিক্রি করার জন্য ৪৫০ জনকে কুপন দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা সেখানে ধান বিক্রি করেন। পরে জানতে পারি, ৪৫০ নয়, ৫৬৫ জন ধান দিয়েছেন। সাড়ে চারশো জন ধান দিয়েছেন ৪৫০ মেট্রিক টন। বাকি ১১৫ জন বিক্রি করেছেন ৪৭৬ মেট্রিক টন। ১১৫ জন কারা, তা ব্লক প্রশাসন বা খাদ্যদফতরের লোকজন জানাতে পারেননি।’’ ভরা বৈঠকে জেলাশাসকের উদ্দেশে অপূর্ব বলেন, ‘‘এই ভূতুড়ে চাষিদের বিষয়ে তদন্ত চাই।’’ এ দিন তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার কথা বলেছেন। ঠিক মতো ধান কেনা না হলে ভাল হবে না। মাঠে নেমে কী ভাবে ধান বিক্রি করতে হয় তা আমরা জানি।’’
বৈঠক শেষে মুর্শিদাবাদের বিধায়ক শাওনি সিংহরায় বলেন, ‘‘ধান বিক্রির কুপন দু’হাজার টাকার বিনিময়ে ফড়েদের কাছে চলে যাচ্ছে। সেই কুপন দেখিয়ে ফড়েরা ধান বিক্রি করছে।’’ মুর্শিদাবাদ ডিস্ট্রিক্ট রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দিলীপ সাহা বৈঠকে বলেন, ‘‘কিসান বাজারে দালাল চক্র সক্রিয়। তাদের কাছ থেকে ধান নেব না বললে পেটে বোমা ঢুকিয়ে দেব বলছে।’’
জেলাশাসক বলেন, ‘‘কান্দির বিধায়কের অভিযোগের তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া পুলিশ সুপারকে দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’’ মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, ‘‘কিসান বাজারগুলিতে সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ফড়ে পেলেই গ্রেফতার করা হবে।’’
গত বছর এই সময় ৭১ হাজার মেট্রিক টন ধান কেনা হয়েছিল, এ বছর এখনও পর্যন্ত ৫৭ হাজার ৩৬২ মেট্রিক টন ধান কেনা হয়েছে। প্রশাসন ও ধান কেনার সাথে যুক্ত সংস্থার সমন্বয়ের অভাব হচ্ছে বলেও কবুল করেন জেলাশাসক। তিনি বলছেন, ‘‘ ‘‘মুখ্যমন্ত্রী গরিব মানুষের ধান কিনতে বলছেন। মাঠ থেকে ধান উঠছে। কিন্তু সে ভাবে ধান কেনা হচ্ছে না। প্রয়োজনে শিবির বাড়িয়ে ধান কিনতে হবে। ধান কেনার বিষয়ে এসডিও, বিডিওদের আরও সক্রিয় হতে হবে।’’ এ ছাড়াও এ দিনের বৈঠকে ব্লকে ব্লকে একটি করে কন্ট্রোলরুম খোলার নির্দেশ দেন জেলাশাসক।