আধাঁর রাতে উড়ছে ওষুধ

সীমান্তে চালু নাম, ওষুধ আমদানি। কলকাতা, বেনারস, সালানপুরে তৈরি কাশির চেনা সিরাপ রাতের অন্ধকার ফুঁড়ে উড়ে যাচ্ছে ও পারে। তার পর একটা হাল্কা শিস ‘ওভার’, যথাস্থানে পৌঁছে গিয়েছে ওষুধ।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৬:২১
Share:

নজরদারি। নিজস্ব চিত্র

ফ্লাড লাইট তো নয়ই, বাইশ গজের সঙ্গে কস্মিন কালে তাদের আলাপ ছিল, বলা যাচ্ছে না। তবু আঁধার রাতে ক্যাচ ধরতে তলব হয় তাদের।

Advertisement

কাঁটাতারের বেড়া উজিয়ে উড়ে আসা চারপাঁচশা শিশির এক একটা পলিপ্যাকে মোড়া প্যাকেট শীত রাতের তারার আলোয় ভরসা করে খপ করে লুফে নিয়ে চকিয়ে তুলে দিচ্ছে ভ্যান রিকশায়।

সীমান্তে চালু নাম, ওষুধ আমদানি। কলকাতা, বেনারস, সালানপুরে তৈরি কাশির চেনা সিরাপ রাতের অন্ধকার ফুঁড়ে উড়ে যাচ্ছে ও পারে। তার পর একটা হাল্কা শিস ‘ওভার’, যথাস্থানে পৌঁছে গিয়েছে ওষুধ। এ পারের এজেন্ট কপালের ঘাম মুছে অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে। শীত কুয়াশার আড়ালে ওষুধ পাচারের এটাই চেনা রীতি। নদিয়ার বিস্তীর্ণ সীমান্ত দিয়ে কাশির সিরাপ এ ভাবেই গ্লাস ভরা নেশার উপকরণ হয়ে উড়ে যাচ্ছে ওপারে।

Advertisement

কাচ নয়, পলি ফাইবারের শিশিতে থাকায় কোনও ভাবে ‘ক্যাচ’ ফস্কে গেলেও ভাঙার সম্ভাবনা তেমন নেই। রাতের টহলদারি বিএসএফ জওয়ানেরা একটু এগিয়ে গেলেই তারা খসার মতো শিশি-পতন তাই শুরু হচ্ছে সীমান্তে।

এ যদি হয় নদিয়ার উড়ন্ত তরল নেশার পারাপারের কাহিনি তা হলে আসুন মুখ ফেরানো যাক মুর্শিদাবাদের শুকনো মাদকের পদ্মা পার হওয়ার গল্পের দিকে।

বিএসএফের এক কর্তা বলছেন, ‘‘এখানে আবার, পুরুষের প্রবেশাধিকার নেই! যা করার করছেন মহিলা আর ছোট্ট বাচ্চারা।’’

চরের অনাবিল ঘাস জমিতে দিন ভর ঘাস কাটেন সীমান্তের বহু মহিলা। সে দলে ভিড়ে গিয়েই ঘাসের বস্তার আড়ালে গাঁজা এবং অন্য মাদক প্যাকেট নিশ্চুপে পাচার হয়ে যায় ও পারে। বিএসএফের কর্তা বলছেমন, ‘‘ঘাস-বস্তা আপনি কী করে হাতড়াবেন, ঘন ঘাসের আড়ালে প্যাকেট বোঝাই গাঁজা খোঁজা চাট্টিখানি কথা নয়!’’

মুর্শিদাবাদের লালগোলা সীমান্তে মাদক পাচারের রমরমা। এলাকার এক পুরনো কারবারির কথায়, ‘‘আগে কোক-পেপসি’র (গরু পাচার) কারবারের সঙ্গে ছিলাম, বড্ড ঝুঁকি। এখন ‘মেডিসিন’ নিয়ে কাজ করছি!’’

বছর কয়েক আগে, জঙ্গিপুর ও লালগোলা সড়ক লাগোয়া কয়েকটি গ্রাম মাদক পাচারের মুক্তাঞ্চল হয়ে উঠেছিল। গড়ে উঠেছিল হেরোইন তৈরির কারখানাও। পুলিশ ও বিএসএফের চোখে ধুলো দিতে গ্রামের স্কুল পড়ুয়া কিশোরদেরও পাচারের ক্যারিয়ার হিসেবে কাজ করানো হত। তবে, গত কয়েক মাসে লালগোলায় সেই মাদক পাচারের কারবার অনেকটাই ভেঙে দিয়েছে বিএসএফ। স্থানীয় পুলিশের দাবি, সে কারবার তাই লালগোলা ছেড়ে এখন ‘তাঁবু’ খাটিয়েছে ফরাক্কার ও পারে কালিয়াচকে। মাদক পাচারের কাজে লালবাতির গাড়ির ব্যবহার এখন নতুন উপায়। সে গাম্ভীর্যের সঙ্গে ব্যবহার করা হচ্ছে প্রতিবন্ধীদের ট্রাই সাইকেলও। নিত্য নতুন এই পদ্ধতিতে ঠকে যাচ্ছে বিএসএফ। লালগোলার এক বিএসএফ কর্তার কথায়, ‘‘সবই আসলে কুয়াশা ঢাকা, বুঝলেন না!’’

তথ্যসূত্র: সুস্মিত হালদার, কল্লোল প্রামাণিক, বিমান হাজরা, সুজাউদ্দিন

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন