এ ভাবেই: হরিহরপাড়ার রাস্তা দিয়ে স্কুল থেকে বাড়ির পথে পড়ুয়ারা। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
সাতসকালে বাড়ির সামনে এসে হর্ন বাজাচ্ছে স্কুলের গাড়ি। হন্তদন্ত হয়ে মা ছেলে-মেয়েকে তুলে দিচ্ছেন গাড়িতে। এ ছবি শহরে কিংবা সিনেমায় দেখা গেলেও গাঁ-গঞ্জে পুলকারের ছবিটা কিন্তু অন্য রকম।
এখানেও বাড়ির সামনে এসে স্কুলের গাড়ি হর্ন দেয়। কিন্তু সেটা বাস নয়, লছিমন (যন্ত্রচালিত ভ্যান)। যে লছিমনের ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগেই স্পষ্ট করে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, ওই যানে শুধুমাত্র পণ্য পরিবহণ করা যাবে। কিন্তু কোনও ভাবেই যাত্রী তোলা যাবে না। কিন্তু ওই নির্দেশই সার। বাস্তব বলছে অন্য কথা। ডোমকল থেকে জলঙ্গি, ইসলামপুর থেকে হরিহপাড়া, জঙ্গিপুর থেকে রানিনগর, এমনি জেলা সদর বহরমপুর ও লাগোয়া এলাকাতেও যাত্রী তো তোলা হচ্ছেই, লছিমনকে ব্যবহার করা হচ্ছে পুলকার হিসেবেও!
লছিমনে স্কুল যাতায়াতের পথে একাধিক বার দুর্ঘটনা ঘটেছে। গুরুতর জখম হয়েছে খুদে পড়ুয়ারা। প্রশাসন নড়েচ়ড়ে বসেছে। তার পরে ফের, যে কে সেই। এটা শুধু লছিমন নয়, চার চাকার ভ্যানে যেখানে আসন সংখ্যা ৭, সেখানে দিব্যি ১২ থেকে ১৫ জন করে পড়ুয়া তোলা হচ্ছে। যে কোনও মুহূর্তে বিপদ ঘটতে পারে, ঘটেওছে। তার পরেও হুঁশ ফিরছে না।
ডোমকলের মাঝপাড়ায় স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের একমাত্র ভরসা সেই লছিমন। ডোমকল থেকে মাঝপাড়ার দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। রাস্তা খারাপের জন্য ওই রাস্তায় লছিমন ও কিছু ম্যাজিক গাড়ি ছাড়া অন্য যানবাহন চলে না। ফলে বাধ্য হয়েই যাত্রী ও পড়ুয়াদের লছিমনেই চাপতে হয়।
ডোমকলের এক অভিভাবক বলছেন, ‘‘রাস্তা খারাপের জন্য আমাদের রাস্তায় লছিমন ছাড়া অন্য যানবাহন চলে না বললেই চলে। তাই বাধ্য হয়েই মেয়েকে লছিমনেই স্কুলে পাঠাই। খারাপ রাস্তায় দু’একবার লছিমন উল্টে দুর্ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু কী করব, বলুন তো?’’
বহরমপুরের দিকে ছোট স্কুল বাসের পাশাপাশি ভ্যান, ম্যাজিক গাড়িও পুলকার হিসেবে চলে। গাড়িতে যেখানে চালক-সহ আট জনের বসার নিয়ম, সেখানে দ্বিগুণ পড়ুয়া নিয়ে ছুটছে পুলকার। বহরমপুরের বুল্টি নাগের মেয়ে শহরের কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। ম্যাজিক গাড়িতেই তাঁর মেয়ে যাতয়াত করে। বুল্টি বলছেন, ‘‘ছোট গাড়িতে অতিরিক্ত ছাত্রছাত্রী যায়। গাড়িগুলি কম পড়ুয়া নিয়ে যেতে চায়না। ফলে বাধ্য হয়েই ওই গাড়িতে মেয়েকে পাঠাই।’’