হয়তো জীবন যাবে, বন্ধুদের বলতেন অরূপ

স্কুলে পড়ার সময় থেকেই অরূপের ইচ্ছে ছিল, বড় হয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে। ‘‘ক’দিন আগে ছুটিতে বাড়িতে এসেও বলছিল, ‘খুব খারাপ জায়গায় থাকি।

Advertisement

কল্লোল প্রামাণিক

করিমপুর শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৭ ০২:৩৪
Share:

শোকার্ত: কান্নায় ভেঙে পড়েছে নিহত জওয়ানের মা।

স্কুলে পড়ার সময় থেকেই অরূপের ইচ্ছে ছিল, বড় হয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে।

Advertisement

‘‘ক’দিন আগে ছুটিতে বাড়িতে এসেও বলছিল, ‘খুব খারাপ জায়গায় থাকি। দেশের জন্য নিজের জীবন দিতে হবে হয়তো।’ সেটাই ফলে গেল।’’— বলছিলেন ছোটবেলার বন্ধু সৌমিক সরকার।

ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদীদের গুলিতে নিহত সিআরপি জওয়ান অরূপ কর্মকারের দেহ করিমপুরের বাড়িতে এল, তখন অনেক রাত। কিন্তু সকাল থেকেই আবেগে ভেসেছে করিমপুর, আর সোশ্যাল নেটওয়ার্ক।

Advertisement

সোমবার রাতে মায়ের ফোনে এসেছিল ছেলের মৃত্যুসংবাদ। হিন্দি বুঝতে না পেরে মোবাইলটা তিনি দিয়েছিলেন বড় ছেলে অনিমেষের হাতে। ও পার থেকে অনিমেষের কানে গরম সীসা ঢেলে দিয়েছিল কেউ। কিন্তু সারারাত বৃদ্ধ বাবা-মার কাছে চেপে রাখেন দুঃসংবাদ। ফোনে আত্মীয়-পরিজনদের খবর দেন।

করিমপুর পান্নাদেবী কলেজ থেকে বিএ পাস করে ২০১৪-র অক্টোবরে সিআরপি-তে যোগ দেন অরূপ। প্রায় এক বছর মধ্যপ্রদেশে প্রশিক্ষণের পর প্রথম পোস্টিং ছত্তীসগঢ়ে। ৭৪ নম্বর ব্যাটালিয়নে পোস্টিং পাওয়ার পরে দু’বার বাড়ি এসেছিলেন। ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ বার, নতুন মোটরবাইক কিনেছিলেন। পুজোয় ফের আসার কথা ছিল। তার আগেই সব শেষ।

অরূপ কর্মকার। নিজস্ব চিত্র

অরূপের বাবা আগে ছোট ব্যবসা করে সংসার চালাতেন। সে ভাবেই চার ছেলেমেয়েকে পড়িয়েছেন। দুই মেয়ের বিয়েও দিয়েছেন। কিন্তু অরূপ পাওয়ার পরে তিনি অনেকটাই সহাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। তার মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ায় বছর দুয়েক আগে ব্যবসা বন্ধ করে দেন। অনিমেষ বলেন, ‘‘দুই দিদির বিয়ের পর এই বাড়িতে এখন বাবা-মা আর আমি থাকি। অরূপের রোজগারেই সংসার চলত।”

এ দিন সকাল থেকেই আত্মীয় ও পড়শিদের ভিড় জমতে শুরু করেছিল অভয়পুর পূবর্পাড়ায় অরূপদের বাড়িতে। স্মৃতি কাঁদিয়েছে। অরূপের ছোটবেলার বন্ধু পুষ্পেন্দু বিশ্বাসের কথায়, “ছোট থেকেই এলাকায় খুব জনপ্রিয় ছিল ও। অভাবের সংসারে নিজের খরচ তুলতে টুকটাক কাজ করত। খেলাধুলোর খুব নেশা ছিল।’’

চাকরি পেয়েও অরূপ বদলাননি। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন, পাড়ার সকলের খোঁজখবর নিতেন। তাঁর ছোটবেলার বন্ধু অনুপ সাহা বলেন, ‘‘আমরা দু’জন একসঙ্গে পড়াশোনা করেছি, চাকরি পেয়েছি। দু’জনে মাঠে শরীরচর্চা করতাম। প্রায় আড়াই বছর আগে আমি সেনাবাহিনীতে চাকরি পাই। অরূপ সিআরপি-তে চলে যায়। ও যখন মধ্যপ্রদেশে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল, তখনও ফেসবুকে যোগাযোগ হত। মাঝে-মধ্যে ফোনেও কথা বলতাম। কিন্তুও ছত্তীসগঢ়ে চলে যাওয়ার পরে যোগাযোগ কিছুটা কমে যায়।’’

বস্তারের দুর্গম এলাকায় ফোনের নেটওয়ার্ক না থাকায় অরূপ রোজ বাড়িতেও ফোন করতে পারতেন না। দশ-পনেরো দিনে এক বার করতেন। ফেসবুকও আর করতেন না তেমন। এ দিন সকাল থেকেই ভেসে গিয়েছে সেই ফেসবুক। সৌমিক লিখেছেন— ‘বহু আগে দেওয়া কথা রাখলি তুই।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন