টুকটুক, মোটর বাইকের দাপাদাপি। —নিজস্ব চিত্র।
সরু রাস্তায় যানজট বেলডাঙা পুর-এলাকার রোজনামচা। এ নিয়ে পুরবাসীর ক্ষোভও দীর্ঘ দিনের। পরিস্থিতি দেখে এ বার যান-নিয়ন্ত্রণ শুরু করল পুরসভা। গত ১৫ অগস্ট থেকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ কিছু মোড়ে শুরু হয়েছে সেই যান-নিয়ন্ত্রণ। নতুন নিয়মের কথা জানিয়ে পুরসভার পক্ষ থেকে মাইকিং শুরু হয়েছে। ব্যস্ত রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে খোদ পুরপ্রধানকে যানজট মোকাবিলায় দেখা গিয়েছে।
কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে?
পুরসভার নির্দেশ— মাড্ডা রাস্তার মোড়, হরিমতি স্কুল মোড়, বুড়োশিবতলা মোড়, রেজিস্ট্রি অফিস, জনকল্যাণ সমিতির মোড়, সুমননগর-মাঝপাড়া মোড় ও নতুল হাসপাতাল রোডের গ্যাসের সমবায় সমিতির দোকান অতিক্রম করে শহরের কেন্দ্রে ঢোকা যাবে না। সকাল ন’টা থেকে বেলা সাড়ে এগরোটা এবং বিকেল সাড়ে তিনটে থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ট্রাক্টর, মাঝারি গাড়ি, ভাড়ি গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ। দ্বিতীয়ত: বড়ুয়ায় ১ নম্বর ওয়ার্ডের নাথপাড়া রোড ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কলেজ রোড একমুখী (ওয়ান ওয়ে) করা হয়েছে। তৃতীয়ত: কোনও দোকানের পণ্য রাস্তার উপর রেখে এবং রাস্তা জবরদখল করে জিনিস বিক্রি করা যাবে না। চতুর্থত, রাস্তার উপর বা পাশে উনুন জ্বলিয়ে ব্যবসা করা যাবে না। পঞ্চমত, স্কুল-কলেজ হাসপাতালের সামনে জন সাধারণের ব্যবহারের জায়গা চা বা পান গুমটি রেখে দখল করা যাবে না। ষষ্ঠত, শহরের মূল রাস্তা দিয়ে গরু, মোষ, ছাগলের মতো কোনও গবাদি নিয়ে যাওয়া চলবে না। পুরসভার প্রস্তাব সে ক্ষেত্রে বাইপাস রাস্তা ব্যবহার করা যেতে পারে।
পুর কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলির সঙ্গে বসে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে পুরসভা সূত্রে খবর। কংগ্রেস পরিচালিত পুরসভার পুরপ্রধান বলেন, ‘‘শহরের রাস্তা সংকীর্ণ। সেখানে একটা গাড়ি ঢুকলে আর স্কুলের ছাত্রছাত্রী-সহ সাধারণ মানুষের যাতায়াতের জায়গা থাকে না। নিজের চোখে এ সব জিনিস দেখেছি। শেষমেষ পরিবহণে শৃঙ্খলা ফেরাতে সকলের সঙ্গে বসে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ সিদ্ধান্তগুলির বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে পুরসভা সক্রিয় হয়েছে। কাউন্সিলারদের নিয়ে গত সোম ও বুধবার শহরের কয়েক’টি মোড়ে দাড়িয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করেছেন স্বয়ং পুরপ্রধান। থানার ২০ জন সিভিক ভলেন্টিয়ারকে নানা মোড়ে রেখে পরিস্থিতি সামল দেওয়া হচ্ছে।
পুরসভার এমন সিদ্ধান্তে খুশি পুরবাসী। এক শিক্ষক বলছিলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই কিছু ফল মিলেছে।’’ তবে পুরবাসীর অনেকেই মনে করেন, টোটোকে নিয়ন্ত্রণ করাও জরুরি। বেলডাঙা স্টেশনের কাছে ক্ষুদিরাম মূর্তি সংলগ্ন এলাকায় টোটো ও রিকশার দাপটে নিত্যযাত্রীরা সমস্যায় পড়েন। এক ব্যবসায়ী মনে করিয়ে দিলেন, ‘‘এই পুরসভাই ২০১২ সালে প্লাস্টিক বর্জনে উঠে পড়ে লেগেছিল। এখন পুরসভার অনুষ্ঠানেও সেই প্লাস্টিকের কাপে চা, কফি দেওয়া হয়!’’ পুরবাসীর বড় অংশের মত, যান-নিয়ন্ত্রণ শুরু চালু করলেই হবে না। পুর-কর্তৃপক্ষকে এটা বজায় রাখতে হবে।
পুরপ্রধান ভরত ঝাওর সে ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন। তিনি পুরবাসীর ভূমিকার কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘পুরবাসীকেও নিয়ম নেমে চলতে হবে। তাতে দেরিতে হলেও পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করবে।’’