Love Trap

প্রেমের ফাঁদে নাবালিকারা, উদ্বেগ

সম্প্রতি হরিহরপাড়া থানা এলাকার বছর তেরোর এক নাবালিকা বিয়ের প্রলোভনে পড়ে ঘর ছেড়েছিল। পাঁচ দিন নিখোঁজ থাকার পর ক্ষত বিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার হয়।

Advertisement

মফিদুল ইসলাম

হরিহরপাড়া শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৫:৫১
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

জেলায় নাবালিকার বিয়ের প্রবণতা নতুন কিছু নয়। তার উপর অল্পবয়সী মেয়েরা, বিশেষ করে স্কুল পড়ুয়া মেয়েরাও ভালবাসা বা প্রেমের জালে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের কেউ কেউ পরিবারের লোকেদের অমতে বাড়ি ছাড়ছে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে যখন তাঁরা নিজেদের ভুল বুঝতে পারছে, তখন আর তাদের ফেরার পথ থাকছে না। সম্প্রতি জেলার বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্ত ভাবে এই সমস্ত সমস্যা প্রকাশ্যে আসছে।

Advertisement

সম্প্রতি হরিহরপাড়া থানা এলাকার বছর তেরোর এক নাবালিকা বিয়ের প্রলোভনে পড়ে ঘর ছেড়েছিল। পাঁচ দিন নিখোঁজ থাকার পর ক্ষত বিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার হয়। কিশোরীর পরিবারের লোকেরা নাবালক প্রেমিক ও তাঁর বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে অপহরণ ও খুনের মামলা দায়ের করেছেন। দু’দিন নিখোঁজ থাকার পর সোমবার সকালে হরিহরপাড়া থানা এলাকার এক গ্রামের বাসিন্দা নবম শ্রেণির ছাত্রীকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পাওয়া যায় প্রেমিকের বাড়ির পিছন থেকে। মাস দুয়েক আগে হরিহরপাড়ার চোঁয়া এলাকায় ভালবেসে ঘর ছাড়া নাবালক যুগল। ওই ঘটনায় কিশোরের বাবাকে খুনের অভিযোগ ওঠে নাবালিকার পরিবারের লোকেদের বিরুদ্ধে।

মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “মেয়েরা বেশি আবেগপ্রবণ হয়। কারণ ইস্ট্রোজেন হরমোন ও অ্যামাইগডালা বা ইমোশনাল ফিয়ার সেন্টার অত্যন্ত সক্রিয়। ফলে অল্পবয়সী মেয়েরা সহজেই ভালবাসার টোপে প্রলুব্ধ হয়ে পড়ে। আগে-পরে কী হবে না ভেবেই অনেকে ঘর ছাড়ে। ফলে অভিভাবকদের উচিত বয়ঃসন্ধিকালীন মেয়েদের প্রতি বেশি করে যত্নশীল হওয়া।” তা ছাড়া নাবালক অবস্থায় বিয়ের প্রলোভনে অনেক সময় পাচারের মতো ঘটনাও ঘটে বলে মত তাঁর।

Advertisement

জেলা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “অধিকাংশ থানা এলাকায় অপহরণের মামলা বাড়ছে। তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে ওই সমস্ত মেয়েরা প্রণয় ঘটিত কারণেই ঘর ছাড়ছে। আমাদের তরফে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের সচেতন করা হচ্ছে।” বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে বাল্যবিবাহ, নারী পাচার সহ একাধিক বিষয়েও পড়ুয়াদের সচেতন করা হচ্ছে। তারপরও একের পর এক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে বলে সূত্রের দাবি। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মী জাকিরন বিবি বলেন, “অনেক সময় মেয়েদের ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই অভিভাবকদের একাংশ অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিতে বাধ্য হন। অপহরণের মামলার পর ভিন্ রাজ্য থেকে অনেক মেয়েকে উদ্ধার করা হচ্ছে। তাদের অনেককে উদ্ধারের পর সরকারি হোমেও রাখা হচ্ছে।” গত কয়েক বছরে এই সংখ্যাটা অনেকটাই বেড়েছে বলে দাবি তাঁর।

জেলা শিশু সুরক্ষা কমিটির চেয়ারপার্সন সোমা ভৌমিক বলেন, “অনেক ক্ষেত্রে মেয়েরা পালিয়ে বাঁচতে চাইছে। ফলে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা, লিঙ্গবৈষম্য আগে দূর করতে হবে।পরিবারে তাদের গ্রহণ যোগ্যতা বাড়াতে হবে। অভিভাবক, শিক্ষকদের সক্রিয় সহায়তা দরকার।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন