সাইকেল চালিয়ে বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখছে কোয়েল

তেলের টিন দেওয়া দেওয়াল এবং টালির চাল দেওয়া ঘর। ঘরের সামনে একফালি ফাঁকা জায়গা। সেই ঘর থেকেই বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন দেখে সাইক্লিস্ট কোয়েল হালদার। তবে, সামনে জাতীয় প্রতিযোগিতা। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চাকদহ শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:০২
Share:

বাড়িতে কোয়েল। নিজস্ব চিত্র

তেলের টিন দেওয়া দেওয়াল এবং টালির চাল দেওয়া ঘর। ঘরের সামনে একফালি ফাঁকা জায়গা। সেই ঘর থেকেই বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন দেখে সাইক্লিস্ট কোয়েল হালদার। তবে, সামনে জাতীয় প্রতিযোগিতা।

Advertisement

আগামি রবিবার সে রওনা হবে রাজস্থানের জয়পুরের উদ্দেশে। সেখানে আগামী ৩০ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ৭১তম জাতীয় সাইক্লিং প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতার কয়েক দিন আগে জোর কদমে শুরু হয়ে গিয়েছে অনুশীলন। এখন প্রতি দিন কম-বেশি ৪০ কিলোমিটার সাইকেল চালাচ্ছে কোয়েল। ভোর পাঁচটা থেকে তাকে রাস্তায় সাইকেল চালাতে দেখা যায়। সঙ্গে চলছে শরীরচর্চাও।

কোয়েল জানিয়েছে, “আমাদের যা আর্থিক অবস্থা, তাতে সাইক্লিং প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া সম্ভব নয়। আমার স্যর জীবেশ ঘোষ-সহ অন্যদের চেষ্টায় আমি অনুশীলন করে চলেছি। দেশের সম্মানরক্ষা করতে যাই। সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

Advertisement

চাকদহ থানার মদনপুর ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের কালীগঞ্জ প্রিয়নগর এলাকায় বাড়ি কোয়েলদের। তারা দুই বোন। সে বড়। শিকারপুর বিবেকানন্দ হাইস্কুল ফর গার্লসের নবম

শ্রেণির ছাত্রী।

মেয়েটির বাবা কার্তিক হালদার পেশায় এক জন দিনমজুর। তিনি জানান, ভোর থেকে মাছ ধরতে যান বিভিন্ন পুকুরে। কাজ শেষ করে মজুরি বাবদ পান মাত্র দু’শো টাকা। তা-ও প্রতি দিন কাজ হয় না। অনেক কষ্টে সংসার চলে। কার্তিক বলেন, “আমার পক্ষে একা কোনও ভাবেই সম্ভব ছিল না। সকলে সহযোগিতা করেছে বলেই মেয়েকে পাঠাতে পারছি। সাইকেল আর জুতোর দামই অনেক। ও সব কিনে দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই।”

মদনপুর আলাইপুরের মনোরমা শিক্ষানিকেতনের মাঠে সাইক্লিস্টদের শারীরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। চাকদহ-বনগাঁ রাজ্য সড়কে এবং ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে সাইকেল চালায় সে। জেলা সাইক্লিং অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আয়োজিত এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৩৫ জন প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। বেশ কয়েক বার আন্তর্জাতিক ও জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া কোয়েলের কোচ জীবেশ ঘোষ বলেন, “এই খেলায় অনেক খরচ। যে কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও প্রশিক্ষণ নিতে পারে না অনেকে। সাইকেলের দাম কমপক্ষে ৩৫ হাজার টাকা। জুতোর দাম ৬ হাজার টাকা। হেলমেটের দাম কমপক্ষে এক হাজার টাকা। রাজ্য সাইক্লিং অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে দু’টি সাইকেল দেওয়া হয়েছিল। তার থেকে একটি সাইকেল কোয়েলকে অনুশীলনের জন্য দেওয়া হয়েছে। কোয়েল ছাড়াও আরও তিন জন এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে। আশা করছি, ওরা সকলেই ভাল

ফলাফল করবে।”

কোয়েল ছাড়াও ত্রীয়াসা পাল, প্রণতি রানী দাস এবং অরিত্র পাল জয়পুরের জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে নিতে যাবে। সকলেই শেষলগ্নে পুরোদমে প্রশিক্ষণ চালাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন